বিয়েতে পাঁচটি রাইস কুকার আর তিনটি প্রেশার কুকার পেয়েছেন সাদিয়া। দুই মাস হলো সংসার শুরু করেছেন তিনি। জীবনের এই নতুন ইনিংসে র্যাপিং পেপার দিয়ে মোড়ানো রাইস কুকার আর প্রেশার কুকারগুলো সেভাবেই তুলে রেখেছেন দুই চাচা মিলে দেওয়া বিয়ের আরেক উপহার আলমারির ওপর। কেন? ‘কেন আবার, আগামী দুই বছরে যত বিয়ের দাওয়াত পাব, এইগুলাই উপহার দেব। এভাবেই উপহার ছড়িয়ে পড়বে এক বিয়ে থেকে আরেক বিয়েতে,’ মুচকি হেসে উত্তর দিলেন তিনি।
শীতে শুরু হয়ে গেছে বিয়ের ধুম। বিয়ের পোশাক, সাজ, খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে বিয়েতে কী উপহার দেবেন; সেটিও ভাবনা আর আলোচনার জায়গা করে নিচ্ছে। বিয়েতে কী উপহার দেবেন, এটা নির্ভর করে কার বিয়ে, তার কী লাগবে আর আপনার বাজেট কত—এই তিন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তরের ওপর। নতুন সংসারে তো কমবেশি সবকিছুই দরকারি। ব্লেন্ডার থেকে শোপিস, গাছ, টেলিভিশন, হানিমুনের টিকিট—সবই হতে পারে বিয়ের উপহার।
জুসার, গ্রাইন্ডার, টোস্টার, রাইস কুকার, ননস্টিক হাঁড়িপাতিলের সেট, হটপট, ওয়াটার ফিল্টার, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, ইস্তিরি, বিছানার চাদর, কুশন কভার, কম্বল, নকশিকাঁথা, পেইন্টিং, হাতের তৈরি ঘরে সাজিয়ে রাখার নানা শৌখিন জিনিস, কফি সেট, ডিনার সেট, চায়ের কাপের সেট, ছুরি-কাঁটাচামচের সেট দিতে পারেন। সিরামিকের মগে বর বা কনের সঙ্গে আপনার ছবি বা বর–কনের ছবি প্রিন্ট করে দিতে পারেন। ছবিটি ফ্রেমে করেও বাঁধিয়ে দিতে পারেন। মুঠোফোন, ট্যাব, আইপ্যাডসহ অন্যান্য গ্যাজেটও আধুনিক উপহার হিসেবে মানানসই। আয়না, ল্যাম্পশেড, মোমদানি, নানা রকম মোম আর শোপিসও মন্দ নয়। আবার বিয়েতে হাজির হয়ে যেতে পারেন একটি ফুলের তোড়া হাতে।
কয়েকজন মিলে সংসারের একটা বড় জিনিসও দিতে পারেন। এই যেমন এলইডি টেলিভিশন, ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ওয়াশিং মেশিন, আলমারি, শোকেস, বুকশেলফ, গয়না; এমনকি গাড়িও দিতে পারেন। সাধ আর সাধ্যের সমন্বয় করে কনেকে দিতে পারেন গয়নার বাক্স, শাড়ি, জুয়েলারি, পার্স ইত্যাদি। উপহারে দেওয়ার জন্য শাড়ি কিনতে হলে বাজেট চার অঙ্কের হলে ভালো। কনের পছন্দ ও রুচির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নানা নকশা ও মোটিফ ডিজাইন করেও আজকাল শাড়ি উপহার দেন অনেকেই। যেমন শাড়ির আঁচলেই এঁকে দিলেন বর–কনের মুখ বা প্রিয় ফুলের সঙ্গে প্রিয় কবিতা অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস (যদি ওই ক্যাম্পাসেই হয় বর–কনের প্রথম দেখা, প্রেম; তাহলে সেটা খুব স্মৃতিময় একটা উপহার হয়ে থাকবে)। এ রকম কাস্টমাইজড শাড়িও মিলবে সহজে।
বরকেও শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে দিতে পারেন পাঞ্জাবি। দিতে পারেন ঘড়ি, শার্ট, স্যুটের কাপড়। এ ছাড়া দিতে পারেন পারফিউম, ফটোফ্রেম, ঝাড়বাতি, কার্পেট, সংসারের জিনিস ইত্যাদি। দুজনকে একই থিমের বা একই রকম নকশা করা ঘড়ি, চাদর বা ব্যাগও কিনে দিতে পারেন। বন্ধুরা মিলে একটু বড়সড় উপহারও দিতে পারেন। হয়তো বর বা কনে বা দুজনেরই ছবি তোলার শখ। বিয়েতে তাঁকে ডিএসএলআর ক্যামেরা উপহার দিতে পারেন।
নবদম্পতির উপহার যদি হয় মধুচন্দ্রিমার দুখানি টিকিট, তবে উপহারদাতাকে নিশ্চিতভাবেই আলাদা করে মনে রাখবেন সেই জুটি। মধুচন্দ্রিমার হোটেলভাড়াটাও দিতে পারেন। বর-কনের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সুবিধামতো সময়ে হানিমুনের যাবতীয় ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। বাজারে নানান দোকান ঘুরেও যদি পছন্দসই জিনিসটি বাছাইয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন, তাহলে গিফট কার্ড বা ভাউচার দিতে পারেন। গিফট কার্ডের মাধ্যমে বর-কনে নিজেদের পছন্দমতো জিনিসটি কিনে নিতে পারবেন। অনেক বিয়েতে আবার উপহারের চেয়ে নগদ অর্থ দিলেই নবদম্পতির বেশি সুবিধা হয়। সেদিকটিও বিবেচনায় রাখতে পারেন। বিয়েতে যে উপহারই দেন না কেন, সঙ্গে যদি একটা ছোট চিরকুটে কোনো সুন্দর স্মৃতির সঙ্গে শুভাচ্ছাবাণী কিছু লিখে দেন, সেটা উপহারটাকে দেবে ভিন্নমাত্রা। হয়তো উপহারটা আর থাকল না, কিন্তু যে কথা দুটো লিখেছিলেন, সেটা চিরকাল সেই দম্পতির মনের কোণে ঠাঁই পেল!