বিয়ের আয়োজনে স্থানীয় উপকরণ

বিয়ের আয়োজনে সাজসজ্জা হতে পারে দেশি উপকরণে
কৃতজ্ঞতা: ত্রয়ী’স সিগনেচার

করোনা মহামারির প্রভাবে বিশাল বাজেটের বিয়েও সারতে হয়েছে বাড়ির ছাদে। ড্রয়িংরুম, বাড়ির লন, ছাদ বা বাগানে ছোট্ট পরিসরের সেসব বিয়েতে অবশ্য কাছের মানুষদের মধ্যে হৃদ্যতা বেড়েছে। তবে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বিয়েবাড়ির সাজসজ্জা ও বিয়ের উপকরণ বিক্রেতারা। এখনো যে খুব একটা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, তেমনটা বলা যাচ্ছে না। তবে যাঁরা বিয়ের আয়োজন করতে চান কিছুটা ভিন্নভাবে, তাঁরা চাইলে এখনো ভরসা রাখতে পারেন স্থানীয় সামগ্রীর ওপর।

কেন স্থানীয় উপকরণ

যাঁরা বছরের পর বছর নানা রকম শোলার উপকরণ তৈরি করছেন, টিকিয়ে রাখছেন কারুপণ্যের ঐতিহ্য, তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর এটাই তো সুযোগ। নানা রকম হস্তশিল্প, বিয়ের ডালা–কুলা, ডেকোরেশন, ফুলবিক্রেতা ও কারুশিল্পীদের একত্র করতে পারেন আপনার বিয়ের আয়োজনে। বর-কনে ছাড়াও অতিথিদের জন্য এক দারুণ অভিজ্ঞতা হবে স্থানীয় ঐতিহ্যতে বিয়েবাড়িকে সাজিয়ে তোলার কারণে।

সাধারণত হাজার হাজার অতিথি দাওয়াত দিলে অনেক খুঁটিনাটি বিষয় ঠিকমতো করা যায় না। মহামারির কারণে অতিথির তালিকা ছোট হওয়ায় বিয়েতে সবকিছু পরিকল্পনা করে গুছিয়ে করা যেতে পারে। আর সে ক্ষেত্রে শিল্পমনা পরিবার হলে স্থানীয় শিল্পীদের কাজ উপস্থাপনের দারুণ সুযোগ বিয়েবাড়ি।

যেভাবে কারুপণ্যের সমাগম ঘটাতে পারেন

বিয়ের লেহেঙ্গায় ঐহিত্যবাহী পালকির নকশা। মডেল: তানজিন তিশা, পোশাক: সাফিয়া সাথি

বিয়ের কার্ড, মানে দাওয়াতপত্র দিয়েই শুরু করি। অনেক টাকা দিয়ে দামি কাগজে দাওয়াতপত্র প্রিন্ট না করে, বিকল্প ভাবতে পারেন। এই যেমন হ্যান্ড মেড কাগজ কিনে এনে নিজেরাই বসে বানিয়ে নিতে পারেন দাওয়াতপত্র। সাহায্য নিতে পারেন চারুকলার কোনো বন্ধু বা পরিচিতজনের। পাটের সুতা, লেইস আর শুকনা ফুল-পাতার ব্যবহারে দাওয়াতপত্র হয়ে উঠবে সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিয়ের পোশাকেও থাকতে পারে দেশি ঐতিহ্যের ছোঁয়া। অনেক তরুণ ডিজাইনার ভিন্নধর্মী নকশার পোশাক তৈরি করেন। নিজের ভাবনা তাঁদের সঙ্গে বিনিময় করে বানিয়ে নিতে পারেন বিয়ের শাড়ি, পাঞ্জাবি বা লেহেঙ্গার ডিজাইন। হয়তো কারও লেহেঙ্গা পরার শখ, সেখানে নকশা হিসেবে যদি চার বেহারার পালকি বা দোয়েল পাখির কারুকাজ থাকে, সেটার আবেদন হবে আলাদা।

ছোট পরিসরের বিয়ে হলে অতিথিদের জন্য ছোট্ট শুভেচ্ছা উপহার রাখতে পারেন। সেখানে থাকতে পারে হাতে তৈরি সাবান, শ্যাম্পুর বক্স, সুগন্ধি, মোম, ফুল, বিশেষভাবে তৈরি চাবির রিং, কাঠের ফ্রেমের রোদচশমা, বিস্কুট, বাদামের কৌটা ইত্যাদি দিয়ে সাজানো বাক্স বা ব্যাগ। যে ব্যাগ বা বাক্সে উপহার দেওয়া হবে, সেটাও হতে পারে নান্দনিক।

যেখানে বিয়ের আয়োজন হবে, সেই জায়গাটুকু করে তুলতে পারেন দেশি কারুপণ্যের মিলনমেলা। নকশিকাঁথা, প্যাচওয়ার্কের কাপড়, রঙিন শিফন, কুশন, ডিভান, তাজা ফুল, চৌকি, বেঞ্চ, শীতলপাটি ইত্যাদির ব্যবহার হতে পারে মঞ্চে।

সব মিলিয়ে বিয়ের আয়োজন হোক পরিপূর্ণ এক দেশি আবহে। প্রাণ ফিরে আসুক কারুপণ্যের শিল্পে।