কফি বলতেই কেমন যেন ক্লান্তি কাটিয়ে দেওয়া সতেজতায় ভরা ঘ্রাণ নাকে এসে ঠেকে। কফির কথা বললেই ক্লান্তি উবে যায় অনেকটা। এটাই বোধহয় পানীয় হিসেবে কফির সার্থকতা। কফি খান না এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। প্রায় সবাই ক্লান্তি, ঘুম কিংবা কাজের একঘেয়েমি কাটাতে কফি খেতে ভীষণ ভালোবাসেন। আর ভালো না বেসে উপায় কী বলুন?
নানা রকমের, নানা রেসিপিতে, নানা ফ্লেভারে পাওয়া যায় হাজারো রকমের কফি। লাতে, ক্যাপাচিনো, আমেরিকানো, এসপ্রেসো, মোকা আরো কত কি! আর শুধু স্বাদ আর ক্লান্তি দূর করাই নয়, কফি কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্যও বেশ উপকারী। লিভার ক্যানসার, টাইপ–২ ডায়াবেটিস কিংবা হার্ট ফেইলিওরের মতো কঠিন অসুখ দূরে রাখতেও কফি বেশ কার্যকর। আর তাই তো আফ্রিকায় প্রথম উৎপাদিত হওয়া এই পানীয় আজ ছড়িয়ে গেছে সারা বিশ্বে, অঞ্চলভেদে তৈরি হয়েছে ভিন্ন জাত আর তার ভিন্ন রেসিপিও। এর মধ্যে কিছু কফির কদর ও তৈরি প্রণালি যেমন কঠিন, তেমনি চক্ষু চড়কগাছ করে দেওয়ার মতোই সেগুলোর দাম।
দামি কফির কথা উঠলেই প্রথমে আসে ‘কপি লুয়াক’–এর কথা। মূলত ইন্দোনেশিয়া, সুমাত্রা, বালি, তিমুরে তৈরি হওয়া এই কফিকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে দামি কফি। এর প্রধান কারণ মূলত এই কফি উৎপাদনের দীর্ঘ ও সময়সাধ্য প্রক্রিয়া। এ ছাড়া স্বাদের বিচারে কফিপ্রেমীদের কাছে এই কফির আছে আলাদা কদর। তবে খেতে ভালোবাসলেও ‘কপি লুয়াক’ তৈরির প্রক্রিয়া শুনলে আঁতকে উঠবেন অনেকে। অনেকে হয়তো ‘আর কোনোদিন এই জিনিস খাচ্ছি না’ ধরনের পণ করেও বসতে পারেন!
অবাক হচ্ছেন? এত দামি কফি নিয়েও এই দোটানা কেন?
এর কারণ হলো ‘কপি লুয়াক’ উৎপাদনের রীতিমতো এক অবিশ্বাস্য প্রক্রিয়া। এটি মূলত একটি ‘অর্ধশোষিত’ বা ইংরেজিতে যাকে বলে ‘পার্শিয়ালি ডাইজেস্টেড’ কফি। কফির যে দানা তা খাওয়ানো হয় সাইভেট বিড়ালকে। বিড়াল এই কফির দানা খাওয়ার পরে দানাগুলো বিড়ালের অন্ত্রে প্রক্রিয়াজাত হয়ে গাজন হয়ে যায়। ফলে এর মধ্যের তেতো ভাব অনেকটা কমে যায় ও তৈরি হয় একটা ভিন্ন ধরনের ঘ্রাণ ও ফ্লেভার। পরে বিড়ালের মল থেকে অর্ধশোষিত এই দানা আবার সংগ্রহ করে তা আরও কিছু প্রক্রিয়ার পরে প্যাকেট করা হয়। এই পুরো প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ও প্রয়োজন প্রচুর যত্ন ও ধৈর্যের। আর তাই এর দামও তেমন আকাশছোঁয়া।
‘কপি লুয়াক’ই একমাত্র দামি কফি নয়, এ কথা ভাবলে আপনি ভুল করছেন। দামি কফির তালিকা শুরু করলে তা হয়ে যাবে বেশ লম্বা। বিশ্বের নানা প্রান্তে প্রতিনিয়ত হচ্ছে কফি নিয়ে নিত্যনতুন গবেষণা। আর তাই বৈচিত্র্য কিংবা স্বাদে কফির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার মতো পানীয় কমই আছে। থাইল্যান্ডের ‘ব্ল্যাক আইভরি’ কফিকে বলা হয় বিশ্বের দ্বিতীয় দামি কফি। এটির উৎপাদন প্রক্রিয়াও অনেকটা ‘কপি লুয়াক’-এর মতোই। তবে এতে সাইভেট বিড়ালের বদলে কফি বিন খাওয়ানো হয় হাতিকে। এটিকে মূলত হাতির দেশ হিসেবে খ্যাত থাইল্যান্ডের বিশেষ কফির প্রকরণ বলা চলে।
গুয়াতেমালার ‘এল ইনজের্তো’ও বিশ্বের দামি কফির একটি। এটিতে মূলত হাল্কা মিষ্টি ও ফলের স্বাদের মিশ্রণ থাকে; যা একে প্রচুর জনপ্রিয়তা দিয়েছে মিষ্টি ভালোবাসেন এমন কফিপ্রেমীর মধ্যে। এ ছাড়া দক্ষিণ পানামায় তৈরি ফুলের নির্যাসযুক্ত ‘এসমেরাল্ডা’ কফি কিংবা নেপোলিয়নের সেই ‘সেন্ট হেলেনা’ দ্বীপে তৈরি কফিও বিশ্বের দামি কফিগুলোর মধ্যে অন্যতম।
আপনি যদি হয়ে থাকেন একজন কফিপ্রেমী, তাহলে এসব দামি কফি একবার করে অন্তুত চেখে দেখার বিষয়টি আপনার ইচ্ছার তালিকায় থাকতেই পারে। এসব কফি সবাইকে আনন্দ দিয়ে যাক আগামী দিনেও—বিশ্ব কফি দিবসে এই আমাদের চাওয়া।
লেখক: শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: উইকিপিডিয়া, ইনস্টাগ্রাম ও আনস্পল্যাশডটকম