বিএসআরএম নিবেদিত মিট দ্য এক্সপার্ট: সফলতার সংজ্ঞা সময়ে সময়ে বদলায়

‘কে আমাকে কী বলল, তা নিয়ে যদি বেশি ভাবি, তাহলে অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আমাদের কাজে। আমার কাজ হলো, কোম্পানিকে সফলভাবে পরিচালনা করা। যদি আমার লক্ষ্য সরে যায়, তাহলে কিন্তু দুই কূলই হারাব। অতএব এত কিছু না ভেবে তুমি তোমার কাজটাই ঠিকমতো করো। কেউ এসে তোমার মুখের ওপর বলতে পারবে না, তুমি ভালো পারফর্ম করছ না।’

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের শিক্ষার্থী নাজিয়া ইউসুফের প্রশ্নে বড় স্বপ্ন দেখা এবং তা বাস্তবায়নের পথ এভাবেই বাতলে দিলেন রবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহতাব উদ্দিন আহমেদ। তাঁর উপস্থিতিতে বিএসআরএম নিবেদিত ‘মিট দ্য এক্সপার্ট’–এর পঞ্চম পর্বে অংশ নেন সারা দেশের ১২ তরুণ। যাঁরা নাশতার টেবিলে প্রশ্নের ঝাঁপি খুলে বসেন। সফলতার সংজ্ঞা কিংবা করপোরেট পর্যায়ের রাজনীতি—আলোচনা হয়েছে নানা বিষয় নিয়ে। প্রথম আলো আয়োজিত এই অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ‘টেন মিনিটস স্কুল’-এর প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক।

সফলতার সংজ্ঞা জানতে চেয়েছিলেন তরুণ পেশাজীবী রামিসা নাওয়ার। রবির প্রথম বাংলাদেশি সিইও মাহতাব বলেন, ‘সফলতার সংজ্ঞা সময়ে সময়ে পরিবর্তন হয়। যখন আমি স্টুডেন্ট ছিলাম, তখন ভালো রেজাল্ট করাই ছিল সফলতা। পরে মনে হলো, সফল ব্যবসায়ী হতে পারলে সেটি আমার সফলতা। চাকরিতে ঢুকে মনে হলো সিএফও হতে পারলে সফলতা। সিএফওর পরে মনে হলো, সিইও সফলতা। কিন্তু তোমাকে কী খুশি করছে, সেটিই আসলে সফলতা।’

মাহতাব উদ্দিনকে থামিয়ে সঞ্চালক জানতে চান, সিইও হওয়ার পরে আপনার কাছে এখন সফলতা কী? ‘আমি প্রচুর পেয়েছি এই সমাজ থেকে, এই দেশ থেকে। আমার এখন লক্ষ্য হচ্ছে, সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়া, বাংলাদেশকে কিছু দিতে চাই।’

নাশতার টেবিলে তরুণদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছেন মাহতাব উদ্দিন আহমেদ

আলোচনার একপর্যায়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে কর্মক্ষেত্র কমে যাওয়ার আশঙ্কার কথা বলেন গ্রিন ইউনিভার্সিটির হাসিব আহমেদ। তাঁর প্রশ্নটা ছিল, ‘তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে আমাদের দেশে চাকরির পরিমাণ কম। তারপরও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে অনেক বেশি মানুষ চাকরি হারাবে। এ সমস্যার সমাধান কী হতে পারে?’ রবির প্রধান নির্বাহী অবশ্য তাঁর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলেন। বললেন, ‘প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শিল্পবিপ্লবেও এই ভয়টা ছিল। কিন্তু এটা কখনো প্রমাণিত হয়নি।’ জুতসই একটি উদাহরণও যোগ করলেন তিনি, ‘আমরা একসময় যানবাহন হিসেবে গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করতাম। এরপর এল গাড়ি। হ্যাঁ, তখন এগুলো হারিয়ে কিছু মানুষ চাকরি হারিয়েছে। কিন্তু নতুন চাহিদা তৈরি হয়েছে। রোবট কিন্তু চাকরি কেড়ে নিচ্ছে না। রোবট আমাদের সাহায্য করবে আরও বেশি উৎপাদন করতে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লিমন মোল্লার প্রশ্নটিও মজার। তাঁর মনের কথা হয়তো অনেকের মনের কথার সঙ্গেই মিলে যাবে। তিনি বলছিলেন, ‘বিভিন্ন মোটিভেশনাল স্পিচে আমরা শুনি—সিজিপিএতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু আপনারা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরি দিতে গেলে ভালো সিজিপিএ যাঁদের, তাঁদেরই গুরুত্ব দেন। তাহলে ব্যাক বেঞ্চাররা নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ পাবে কী করে?’

কারণটা খুলেই বললেন মাহতাব। অনেক বেশি চাকরির আবেদন জমা পড়ে বলে প্রাথমিক বাছাইয়ের জন্যই ভালো সিজিপিএ চাওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘রবির যেকোনো পদের জন্য আমরা ন্যূনতম সিজিপিএ ৩ চাই। এটা শুধু শর্টলিস্ট করার জন্য। এরপর নানা পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়।’ মিলন মোল্লার প্রশ্ন শুনে বোঝা যায়, গুরুগম্ভীর আলোচনা সভা এটি নয়। তাঁর কথায় হেসে ফেলেছিলেন সবাই।

প্রশ্ন আসে করপোরেট জগতের রাজনীতি নিয়েও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম জানতে চান, চাকরিজীবনে সহকর্মীদের কারও কাছ থেকে প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন কি না। এর উত্তরে মাহতাব উদ্দিন অকপটে বলেন, ‘শিকার হয়েছি। এবং কারও জীবনে এমন হবে না, এটা চিন্তা করাটাও ভুল।’ তবে সব প্রতিহিংসা মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার পন্থাও দিলেন তিনি। ‘সব সময় ইতিবাচক থাকতে হবে। একজন ভালো নেতা হতে গেলে ইতিবাচকতার কোনো বিকল্প নেই।’