বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে সতর্কতা

এসি, বৈদ্যুতিক সংযোগ ও গ্যাসের চুলা ঠিকঠাক আছে কি না, তা নিয়ম মেনে সনদপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ানকে দিয়ে দেখিয়ে নিতে হবে। ছবি: অধুনা
এসি, বৈদ্যুতিক সংযোগ ও গ্যাসের চুলা ঠিকঠাক আছে কি না, তা নিয়ম মেনে সনদপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ানকে দিয়ে দেখিয়ে নিতে হবে। ছবি: অধুনা

আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া আধুনিক জীবনযাপন কল্পনাও করা যায় না। তবে এসব আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে যথাযথ সতর্কতার অভাব বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অর্থমূল্যের বিচারে অনেক টাকার সম্পত্তি যেমন নষ্ট হয়, তেমনি হারাতে হয় অমূল্য জীবনও। বাসাবাড়িতে সাধারণত বিদ্যুৎ, এসি (শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র) ও গ্যাসের চুলা থেকেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা ঘটে। অথচ কিছুটা সচেতনতা, নিয়মমাফিক রক্ষণাবেক্ষণ ও সহজ কিছু নির্দেশনা মেনে চললে এসব যন্ত্রের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। ফলে এ রকম দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।

বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা

বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় নানাবিধ সমস্যার কারণে বিদ্যুৎসৃষ্ট অগ্নিকাণ্ড ঘটে থাকে। কিন্তু কারণগুলো কী? প্রথমেই বলা যেতে পারে, ভবনের নকশার সঙ্গে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার সমন্বয়হীনতা। সাধারণত অনুমোদনহীন ভবনগুলোতে এ ঝুঁকি বেশি থাকে। এরপরই আসে ওভারলোডিং, শটসার্কিটের মতো বিষয়গুলো; যেসবের সঙ্গে ব্যবহারকারীদের অসতর্কতার বিষয়টি সরাসরি জড়িত।

দেখা যায়, অনেক সময় আমরা টেলিভিশন চালানোর প্লাগ পয়েন্ট দিয়ে ইস্ত্রি চালিয়ে থাকি। সে ক্ষেত্রে লোডের কমবেশি সমন্বয়হীনতার জন্য দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা বেড়ে যায়। আবার অনেকেই টাকা বাঁচানোর ভাবনা থেকে তার, সকেট, সার্কিট ব্রেকার প্রভৃতি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কম দামে কিনে থাকেন। অথচ বিদ্যুৎ–ব্যবস্থায় ব্যবহৃত সরঞ্জামের ক্ষেত্রে সস্তা ব্যাপারটিই রীতিমতো ঝুঁকিপূর্ণ।

বৈদ্যুতিক তার দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে কিংবা দীর্ঘদিন রোদ-বৃষ্টিতে থাকার ফলে অনেক সময় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। আর্দ্র কিংবা স্যাঁতসেঁতে অবস্থার সঙ্গে এগুলোর সংযোগ ঘটলে বিস্ফোরিত হয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপন কিংবা মেরামতের ক্ষেত্রে সনদবিহীন মিস্ত্রিকে দিয়ে কাজ করানো। এ ধরনের মিস্ত্রিদের আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকায় অনেক সময় কাজের মান ভালো হয় না কিংবা ত্রুটিপূর্ণ থেকে যায়।

প্রতিরোধে করণীয়

* প্রতি পাঁচ বছরে অন্তত একবার বাড়ির সামগ্রিক বিদ্যুৎ-সংযোগ এবং নিয়মিত বিরতিতে অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পরীক্ষা করা।

* ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করা।

* স্থায়ীভাবে মাল্টিপ্লাগ ব্যবহার না করা এবং একই মাল্টিপ্লাগ দিয়ে অনেক যন্ত্র না চালানো।

* সংযোগ স্থাপন ও মেরামতে প্রশিক্ষিত বিদ্যুৎবিষয়ক প্রকৌশলীর সহায়তা গ্রহণ।

এসি থেকে অগ্নিকাণ্ড

বাংলাদেশে এসির ব্যব্যহার যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে এসি বিস্ফোরণের হারও। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকটি এসি বিস্ফোরণের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি আমরা। দুর্বল মানের এসি, সংযোগের ক্ষেত্রে দুর্বল তার ব্যবহার, এসি ব্যবহারে প্লাগ পয়েন্ট সব সময় অন রাখা, নিয়মিত পরিষ্কার না করার ফলে ধুলা জমে যাওয়া এবং এসি ব্যবহারে তাপমাত্রায় হেরফের—এসবই মূলত এসি বিস্ফোরণের প্রধান কারণ।

এসি নিরাপত্তায় করণীয়

* এসির সংযোগে সঠিক গুণমানের তারের ব্যবহার।

* তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রির উপরে রাখা।

* যখন এসি বন্ধ থাকবে, তখন প্লাগ পয়েন্ট বন্ধ রাখা।

* একটানা দীর্ঘক্ষণ এসি না চালানো।

* নিয়মিত বিরতিতে (সম্ভব হলে সপ্তাহে একবার) পানিতে ডিটারজেন্ট মিশিয়ে ব্রাশ দিয়ে এসি পরিষ্কার করা, যাতে ধুলা জমতে না পারে।

* দিনের যেকোনো একটা সময় দীর্ঘক্ষণ ঘরের দরজা-জানালা খোলা রেখে পর্যাপ্ত অক্সিজেন চলাচল নিশ্চিত করা।

ছবি: অধুনা

রান্নার গ্যাস থেকে অগ্নিকাণ্ড

নাগরিক জীবনে রান্নাবান্নার কাজে গ্যাসই প্রধানতম অবলম্বন। আবার এ গ্যাসের লাইন বা গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ড মুহূর্তেই ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ ক্ষতি। গ্যাস–সংযোগ স্থাপনে ব্যবহারকারীদের দায়সারা ভাব এবং রক্ষণাবেক্ষণে উদাসীনতা এ ক্ষেত্রে দায়ী।

নিরাপত্তায় করণীয়

* আমরা সাধারণত অর্থ বাঁচাতে সংযোগ স্থাপন কিংবা মেরামতের ক্ষেত্রে আনাড়ি মিস্ত্রিদের (প্লাম্বার) দিয়ে কাজ করিয়ে থাকি। যা একসময় ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ ক্ষেত্রে সনদপ্রাপ্ত গ্যাস লাইন কনট্রাক্টরদের দিয়ে সংযোগ স্থাপন ও মেরামত করানো উচিত।

* রান্নাঘরে এগজস্ট (বায়ু নির্গমন) ফ্যানের ব্যবস্থা রাখা জরুরি। গ্যাসের চুলা চালানোর অন্তত পাঁচ মিনিট আগে এটি চালু করে দিলে ঝুঁকির মাত্রা কমে যায়।

* গ্যাসের চুলা জ্বালানোর আগে দরজা-জানালা খুলে দিয়ে বাতাস চলাচল ঠিক রাখা।

* গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিবার ব্যবহার শেষে সিলিন্ডারের চাবি বন্ধ করা।

অনুলিখন: কবীর হোসাইন