দীর্ঘ ৩৫ বছর চাকরি করেছেন আশরাফুন নাহার। সপ্তগ্রাম, মহিলা পরিষদ ও ব্র্যাকের মতো প্রতিষ্ঠানে কেটেছে তাঁর ব্যস্ত কর্মজীবন। চাকরিজীবন শেষ করে ঘরে বসতে না বসতেই দেশে হানা দিল করোনা। একপর্যায়ে আশরাফুন নাহারের কর্মহীন অলস বসে থাকতে আর ভালো লাগছিল না। মাকে উৎসাহ দিতে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে তাই ফেসবুকে একটি খাবারের পেজ খুলে দিলেন মেয়ে সেঁজুতি শোণিমা। নাম আশালতা। মায়ের রান্না নিয়ে বরাবরই আত্মবিশ্বাসী মেয়ে। কারণ, পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের যেকোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে সব মানুষের রান্নার আয়োজন তো মা-ই করেন।
পেজ খোলার কয়েক মাস পর সাহস করে একদিন নিজের কয়েকটি রান্নার ছবি পোস্ট করলেন নাহার। এক দিনের মাথাতেই অর্ডার এল। পিঠার অর্ডার। শুধু তা-ই না, অগ্রিমও পেলেন ১ হাজার ৫০০ টাকা, তার সঙ্গে নিজের পকেটের ৫০০ টাকা যোগ করে বাজার করলেন। আরাফুন নাহার বলেন, ‘ছোটবেলায় গ্রামে মা-চাচিরা মিলে রাতভর পিঠা বানাতেন। তাঁদের কাছে বসে ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে আমিও চেষ্টা করতাম। অর্ডার পাওয়ার পর সেই সব দিনের কথাই মনে পড়ছিল।’ পিঠা খেয়ে প্রশংসা করলেন গ্রাহক। সেই শুরু।
সাংবাদিক স্বামীর মৃত্যুর পর একমাত্র মেয়েকে বড় করেছেন কঠোর পরিশ্রম করে। ঢাকার শাহজাদপুরে মেয়ে ও নাতিকে নিয়ে থাকেন আশরাফুন। নিজের বাসাতেই এখন রান্না নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটে। সকাল-বিকেল পেজে ও ফোনে অর্ডার আসে। রান্নার কাজে সাহায্য করার জন্য একজন লোক আছেন, বড় কোনো অর্ডার পেলে আরও দুজনকে দিন হিসেবে নিয়ে নেন। খাবার পৌঁছানোর জন্য দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি আছে, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দুজন লোক দিয়ে খাবার সরবরাহ করেন। গত ফেব্রুয়ারিতে ১ লাখ টাকার ওপরে খাবার বিক্রি করেছেন আশরাফুন। জানালেন, সামনে আলাদা একটি কিচেন করার ইচ্ছা আছে।