জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগীত পরিচালক ও চিরকুট ব্যান্ডদলের গিটারিস্ট ইমন চৌধুরী বাবা দিবস উপলক্ষে নিজ হাতে রান্না করলেন বাবার পছন্দের খাবার।
‘বাবাই আমার সব কাজের গুরু, বাবাই উৎসাহ আর ভরসার জায়গা।’ বাবাকে নিয়ে এভাবেই কথা শুরু করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগীত পরিচালক ও চিরকুট ব্যান্ডদলের গিটারিস্ট ইমন চৌধুরী। বাবা নজরুল একাডেমির অধ্যক্ষ মতিউর রহমান চৌধুরী। একজন স্বনামধন্য শিল্পী হলেও বাবা–ছেলের সম্পর্কের মধ্যে দেখা গেল শুধুই মায়া ও সরলতা। খাবার টেবিলে এখনো বাবা নিজ হাতে খাইয়ে দেন ছেলে ইমন চৌধুরীকে। এক সময়ে রান্নাও করেছেন ছেলে ও পরিবারের সবার জন্য। কিন্তু সময়ের বদলে এখন বাবার জন্য রান্না করছেন ছেলে নিজে।
পুরোনো স্মৃতি মনে করে ইমন চৌধুরী বলেন, ছেলেবেলা থেকেই দেখেছি যেকোনো উৎসবে বাবা নিজ হাতে রান্না করেন, বিশেষ গরুর মাংস। বাবাকে দেখেই রান্নার আগ্রহ তৈরি হয়, আর দীর্ঘ আট বছরে অনেকবার বাবার জন্য রান্না করার সৌভাগ্য হয়েছে। কিন্তু বাবা দিবস উপলক্ষে এই প্রথমবার নিজ হাতে বাবার পছন্দের খাবার রান্না করলাম। মাছের কোপ্তা আর ভুনা গরুর মাংস—এ দুটি খাবারই পছন্দ বাবার।
১২ জুন ছিল ইমন চৌধুরীর জন্মদিন। তাই ১৩ জুন একটু দেরি করেই ঢাকার নিকেতনে ইমনের বাসায় শুরু হয় রান্নার প্রস্তুতি। ঘড়িতে দুপুর ১২টার কিছু বেশি। রান্না হতে হতে আরও কয়েক ঘণ্টা। নিজের জন্মদিন আর বাবা দিবস—দুটি খুব কাছাকাছি সময়ে, কোন দিনটি বেশি বিশেষ? উত্তর দিতে বেশ চিন্তা করলেন ইমন চৌধুরী। কারণ, একটা দিন বাবার জন্য আর আরেকটা দিনে ছেলেকে পেয়েছিলেন বাবা। ইমন বললেন, ‘বাবা দিবস বিশ্বের সব বাবার জন্য, আর আমার জন্মদিন আমার বাবার জন্য বিশেষ। তাই বাবা দিবসকেই আমি এগিয়ে রাখব।’ এবার বাবা দিবস উপলক্ষে বাবার জন্য রান্না করছেন, এটাকে বড় করেই দেখছেন ইমন চৌধুরী।
২০ জুন বাবা দিবস। নকশার অনুরোধে বাবার জন্য চারটি পদ রান্না করলেন ইমন চৌধুরী। সব পদই পছন্দ মতিউর রহমান চৌধুরীর।
উপকরণ
কোপ্তা তৈরির জন্য: কাতলা মাছ ৮ টুকরা, হলুদ আধা চা–চামচ, লবণ আধা চা–চামচ, কাঁচা মরিচ ২টি, আদাবাটা আধা চা–চামচ, রসুনবাটা ২ চা–চামচ, কর্নফ্লাওয়ার ২ চা–চামচ, আলু সেদ্ধ ১টি ও ধনেপাতার কুচি সামান্য।
কোপ্তার ঝোল তৈরি জন্য: পেঁয়াজবাটা ১ কাপ, রসুনবাটা ২ টেবিল চামচ,আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ ফালি ৫–৬টি, জিরাগুঁড়া ১ চা–চামচ, হলুদ, লাল মরিচ ও ধনিয়াগুঁড়া আধা চা–চামচ, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ এবং শর্ষের তেল, ধনেপাতা ও লবণ পরিমাণমতো।
প্রণালি
প্রথমে মাছ হলুদ ও লবণে সেদ্ধ করে নিতে হবে। এবার কাঁটা ছাড়িয়ে ঝুরা করে এতে কোপ্তা তৈরির সব উপাদান মিশিয়ে বলের মতো গোল আকৃতি দিন। এরপর ডুবো তেলে ভাজতে হবে। ভাজা কোপ্তা তুলে নিয়ে সেই তেলে পেঁয়াজ, আদা ও রসুন দিয়ে হালকা ভেজে অন্য সব উপাদান দিয়ে কষিয়ে নিন। শেষে ভাজা কোপ্তা ও একটু পানি ৫–১০ মিনিট রান্না করে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে।
উপকরণ
চিনা বাদাম ২৫০ গ্রাম, চিংড়ি ১০টি, পেঁয়াজকুচি দেড় কাপ, শর্ষের তেল ১ কাপ, রসুনবাটা আধা টেবিল চামচ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, জিরাগুঁড়া ১ চা–চামচ, লবণ পরিমাণমতো, কাঁচা মরিচ ৮–১০টি এবং লাল মরিচ, হলুদ ও ধনিয়াগুঁড়া ২ চা–চামচ।
প্রণালি
প্রথমে বাদাম ভেজে ৩০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এবার দানাদানা করে বেটে ব্লেন্ড করে রেখে দিন। অন্য একটি পাত্রে চিংড়ি তেল ও লবণ মেখে হালকা ভেজে তুলে নিন। পাত্রে আরেকটু তেল দিয়ে পেঁয়াজ, রসুন ও আদা কষিয়ে নিতে হবে। এতে কাঁচা মরিচ, লাল মরিচ, হলুদ, ধনেগুঁড়া, জিরাগুঁড়া পানি দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে ভাজা চিংড়ি ঢেলে দিন। এবার খুব কম আঁচে অল্প পানি দিয়ে সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে ফেলুন।
উপকরণ
গরুর মাংস ১ কেজি, শর্ষের তেল দেড় কাপ, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, আদাবাটা দেড় টেবিল চামচ, রসুনবাটা দেড় টেবিল চামচ, জিরাগুঁড়া ২ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ পরিমাণমতো, এলাচি ৫টি, দারুচিনি ৫টি, তেজপাতা ৩টি এবং হলুদ, লাল মরিচ ও ধনেগুঁড়া ১ চা–চামচ।
প্রণালি
পাত্রে তেল গরম করে পেঁয়াজ, আদা ও রসুন কষিয়ে এর মধ্যে বাকি সব উপাদান ও পানি দিয়ে তেল ছাড়া পর্যন্ত ভুনতে হবে। মসলার ওপর তেল ভেসে এলে এতে গরুর মাংস যোগ করুন। তবে মাংসে বেশি পানি দেওয়া যাবে না। এখন অল্প পানি দিয়ে কম আঁচে সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।
উপকরণ
মুগডাল ২ কাপ, মুরগির মাংস ৮ টুকরা, পেঁয়াজকুচি ২ কাপ, রসুনবাটা ৩ চা–চামচ, আদাবাটা ৩ চা–চামচ, জিরাগুঁড়া ৩ চা–চামচ, কাঁচা মরিচ ৮–১০টি, লাল মরিচের গুঁড়া ২ চা–চামচ, হলুদগুঁড়া ২ চা–চামচ, ধনেগুঁড়া ২ চা–চামচ, শর্ষের তেল আধা কাপ, তেজপাতা ২টি, এলাচি ৪টি ও দারুচিনি ৪টি।
প্রণালি
প্রথমে ডাল ভেজে নিতে হবে সুঘ্রাণ বের হওয়া পর্যন্ত। এবার পানিতে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে পাত্রে তেল নিয়ে পেঁয়াজ, আদা, রসুন কষিয়ে নিতে হবে। এখন বাকি সব উপাদান ও অল্প পানি দিয়ে কষিয়ে নিন। মসলায় তেল ছাড়লে মুরগির মাংস দিয়ে আরএ কিছু সময় কষিয়ে নিন, যেন ময়লা ভেতরে যায়। এবার ভিজিয়ে রাখা মুগডাল মাংসের মধ্যে দিয়ে আরও পানি যোগ করতে হবে। এখন কিছু সময় ঢেকে রান্না করে নামিয়ে নিতে হবে।