বিপুলসংখ্যক মানুষ সাধারণভাবে কাঁধ, নিতম্ব ও হাঁটুর ব্যথায় ভোগে। আক্রান্ত হয় বাতের ব্যথায়ও। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ব্যথা সম্ভবত বিবর্তনের অপ্রীতিকর পরিণামের ফল। অর্থাৎ দুই পা দিয়ে হাঁটতে শুরু করার পর হাড়ের গঠনের পরিবর্তনের ফলেই এ ব্যথা। আজ মঙ্গলবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এসব কথা।
বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, এই পরিবর্তন যদি অব্যাহত থাকে, তবে ভবিষ্যতে মানবজাতির জন্য বড় ঝুঁকি অপেক্ষা করছে।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কীভাবে হাড়ের গঠন পরিবর্তন হয়েছে, তা জানতে ওই বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রজাতির হাড়ের ৩০০ নমুনা নিয়ে গবেষণা করেছেন। মানুষের ক্ষেত্রে তাঁরা দেখেছেন, মানুষ যখন দুই পা দিয়ে হাঁটা শুরু করেছে, তখন থেকে হাড়ের গঠনের পরিবর্তন শুরু হয়েছে। অন্য গবেষকেরাও মানুষের হাড়ের একই ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করেছেন।
তেমনই একটি গবেষণায় নেতৃত্ব দেন যুক্তরাজ্যের নাফিল্ডের অর্থোপেডিকস, রিউম্যাটোলজি ও মাসকুলোস্কেলিটাল বিভাগের গবেষক পল মঙ্ক। রোগীরা কেন তাঁর ক্লিনিকে একই ধরনের হাড়ের সমস্যা নিয়ে আসেন—এ বিষয়টি তাঁকে ভাবিয়ে তোলে।
পল মঙ্ক বলেন, ‘আমরা দেখেছি, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে একই ধরনের কিছু সমস্যা নিয়ে সচরাচরই রোগীরা এসে থাকেন। সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে কাঁধে ব্যথা, হাঁটুর সামনের অংশে ব্যথা, নিতম্বে বাতের ব্যথা এবং অল্প বয়সীদের ক্ষেত্রে কিছু অস্থিসন্ধিতে ব্যথা। এসব সমস্যার কারণ কী, তা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি। হাড় ও অস্থিসন্ধির বিশৃঙ্খল সমন্বয়ের পরিণতিতে কীভাবে মানুষের শরীরে এসব সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা দেখে আমরা বিস্মিত। এটি আমাদের ভাবিয়েছে এবং এর উত্তর খুঁজতে আমরা অতীতের বিবর্তন-প্রক্রিয়ার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছি।’
মঙ্কের নেতৃত্বাধীন বিজ্ঞানীদের ওই দলটি লন্ডনে অক্সফোর্ডের ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়াম ও যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউটে থাকা প্রাচীনকালের ৩০০ নমুনার সিটিস্ক্যান সংগ্রহ করেন। তাঁরা সব তথ্য সংগ্রহ করে কম্পিউটারে থ্রিডি মডেল তৈরি করতে সক্ষম হন।
ঊরুর হাড় সময়ের ব্যবধানে কীভাবে পরিবর্তন হয়েছে, একটি মডেলে তা দেখা গেছে। গবেষকেরা দেখেছেন, চার পা দিয়ে হাঁটা প্রাণীরা যখন দুই পা দিয়ে হাঁটা শুরু করেছে, তখন থেকে বাড়তি ওজন বহন করার জন্য ঊরুসন্ধির হাড় বড় হতে শুরু করেছে এবং গবেষণায় দেখা গেছে, ঊরুসন্ধির হাড় যত মোটা হয়, বাতের ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তত বাড়ে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিবর্তনের এই ফলে ঊরুতে ব্যাপক ব্যথার সম্ভাব্য কারণ। গবেষক দলটি পরবর্তী সময়ে তাঁদের ওই তথ্য ব্যবহার করে আগামী চার হাজার বছর পরে হাড়ের গঠন কী হবে সেটি অনুমান করেন। যদিও দলটি স্বীকার করেছে যে ভবিষ্যতে কী ঘটবে, সে ব্যাপারে আরও অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে।
মঙ্ক বলেন, বিবর্তনের ফলে হাড়ের গঠনের যে পরিবর্তন ঘটেছে এবং এটা যদি অব্যাহত থাকে, তবে ক্রমবর্ধমান হারে বাতের ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়বে।
গবেষকেরা দেখেছেন, কাঁধের হাড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকা মোটা তন্তু থেকে রক্তনালির ফাঁক রয়েছে। সময়ের সঙ্গে ওই ব্যবধান সংকুচিত হয়ে আসছে। এ বিষয়টি কাঁধের ব্যথার সম্ভাব্য কারণ।