বাংলাভাষী ভিনদেশি

তাঁরা ভিনদেশি। কেউ বাংলাদেশে এসেছেন কাজের সূত্রে, কেউবা পড়াশোনার খাতিরে। ভালোবেসে ফেলেছেন এ দেশের মাটি–মানুষ আর মুখের ভাষা। কথাও বলেন বাংলায়। তাঁদেরই কেউ প্রমিত বাংলা বলা নিয়ে সোচ্চার, কারও কাজটা ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলালিপি নিয়ে। প্রচ্ছদ আয়োজনে রইল এমন চার বিদেশির বাংলা শেখার কথা।

বাংলা ফন্টের কারিগর জ্যাকব থমাস
এখন যে লেখাটি পড়ছেন, তা ‘সূর্য’ নামের এক ফন্টে ছাপা হয়েছে। এই ফন্টের কারিগর কে জানেন? জ্যাকব থমাস, নাম দিয়ে যায় চেনা, ভিনদেশের মানুষ। আরও নির্দিষ্ট করে বললে সুইডিশ ও মার্কিন বংশোদ্ভূত। থাকেন অবশ্য বাংলাদেশেই। তবে আপনি যদি জ্যাকবের কাছে জানতে চান, ‘বাংলাদেশ তোমার কেমন লাগে? এখানকার গরমে কষ্ট হয় না?’ তাহলে কিন্তু জ্যাকবের মাথাটাই গরম হয়ে যাবে! ১৯৮৩ সালে দুই বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছিলেন জ্যাকব। বেড়ে উঠেছেন পাবনার ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়ার কালীশংকরপুর ও ঢাকায়। তাই জন্মসূত্রে সুইডিশ-মার্কিন হলেও জ্যাকবের ভাষায়, ‘এটাই আমার দেশ। বাংলা ভাষা আমার ভালোবাসা।’

বাংলাদেশে এসে অনেক ভিনদেশি আপন করে নেন বাংলা ভাষাও। ছবি: কবির হোসেন
বাংলাদেশে এসে অনেক ভিনদেশি আপন করে নেন বাংলা ভাষাও। ছবি: কবির হোসেন

জ্যাকবের মা সুইডিশ, বাবা আমেরিকান। তাঁরা দুজনই বাংলাদেশে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করতেন। চাকরিসূত্রে প্রথমে এসে বসত গাড়েন পাবনায়। সেখানেই একদম ছেলেবেলায় সঙ্গী–সাথিদের সঙ্গে খেলতে খেলতেই বাংলা ভাষা শিখতে শুরু করেন জ্যাকব। আলাদা করে বইপত্র পড়ে এই ভাষা তাঁর শিখতে হয়নি।

জ্যাকব ২০০১ সালে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রের বেমিডজি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে গ্রাফিক ডিজাইন পড়তে। সেখানে গিয়ে উপলব্ধি করেন, তিনি আসলে ঠিক মার্কিনও নন! কারণ কী? জ্যাকবের ব্যাখ্যা, ‘আমার ইংরেজি উচ্চারণ শুনেই বন্ধুরা বুঝে ফেলত আমি মার্কিন নই। তখন আমি বলতাম, বাংলাদেশ থেকে এসেছি। তখনই ঠিক করলাম, বাংলা ভাষা আরও ভালো করে শিখতে হবে। তাই নিজে নিজেই বাংলা বর্ণমালায় হাতেখড়ি নিলাম। গ্রাফিক ডিজাইন, ক্যালিগ্রাফিতে আমার খুব আগ্রহ ছিল অনেক আগে থেকেই। তাই একসময় বাংলা ফন্ট নিয়ে কাজ করার আগ্রহ তৈরি হলো।’

এ পর্যন্ত ৮টি বাংলা ফন্ট তৈরি করেছেন জ্যাকব। তার মধ্যে একটির কথা তো জেনেছেনই। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য আরেকটি হলো কাইয়ুম ফন্ট। প্রয়াত চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর হাতের লেখা দিয়ে এই ফন্ট তৈরি করেছেন জ্যাকব। সেই সূত্রে প্রথম আলোর সঙ্গে যুক্ততা। প্রথম আলোর পৃষ্ঠাসজ্জার পুনর্নকশা করেছেন জ্যাকব। এখন কাজ করছেন বেঙ্গল ক্রিয়েটিভ মিডিয়া নামের এক প্রতিষ্ঠানে। বিয়ে করেছেন স্কুলের বন্ধু হোসানা থমাসকে। তাঁদের বড় ছেলে ইলিয়াসের বয়স ১১, মেয়ে মায়ার বয়স ৯ আর ছোট ছেলে ওবেদের বয়স সাড়ে ৩। প্রত্যেকেই বাংলা বলতে জানে। ইলিয়াস লিখতেও জানে। সব মিলিয়ে এই বাংলায় খুব আনন্দ নিয়েই বাস করছেন জ্যাকব। বাংলা কবিতা, গান আর লিপিতে তাঁর দিনযাপন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি থেকে ঝরঝর করে কবিতা আবৃত্তি করেন। চমৎকার সুর তোলেন দোতারায়। আত্মার টান খুঁজে পান লালন, হাসন, জারি, সারির সুরে। খুব শিগগির আরও কিছু বাংলা ফন্ট তৈরি করবেন। তারপর সেসব ফন্টের অনলাইন বাজারও তৈরি করতে চান ইয়াকুব। হ্যাঁ, নাম জিজ্ঞেস করলে জ্যাকব নিজেকে ইয়াকুব হিসেবেই পরিচয় দেন! সইটাও করেন ইয়াকুব লিখে।

বন্ধুদের সঙ্গে চলে বাংলায় আড্ডা, এমনই এক আড্ডায় (বাঁ থেকে) জ্যাকব থমাস ও নাতসুমি হারাদা। ছবি: ছুটির দিনে

বাংলাদেশেই থেকে যেতে চান জাপানের নাতসুমি
স্কুলে তিনটি বিষয়ের মধ্যে একটি বেছে নিতে হতো: ১. বিশ্ব ইতিহাস, ২. জাপানের ইতিহাস ও ৩. ভূগোল। নাতসুমি চোখ বন্ধ করে ভূগোল বেছে নিয়েছিলেন। এ কারণে এখন নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন। কারণ, ভূগোল বইয়ে প্রথম বাংলাদেশ নামের দেশটির কথা জেনেছিলেন, যে বাংলাদেশে নাতসুমি থেকে যেতে চান আজীবন!

জাপানের টোকিওতে তাঁর মা-বাবা আছেন। সে দেশের তহুকুতে আছেন তাঁর প্রিয় নানা-নানি। চার ঋতুর তহুকুর সেই জীবনের চেয়ে ষড়ঋতুর বাংলাদেশেই শান্তি খুঁজে পেয়েছেন এই তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা। রিকশাওয়ালাকে ‘যাবেন?’ প্রশ্ন করার মধ্য দিয়ে বাংলা বলা শুরু; নাতসুমিকে এখন প্রায় প্রতিদিনই ‘যাবেন?’ উচ্চারণ করতে হচ্ছে। নাতসুমি যতই বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জ ঘুরছেন, ততই মুগ্ধ হচ্ছেন। বাংলাদেশের বৃষ্টি, পাহাড়, মানুষ, ফুচকা আর বাংলা ভাষা তাঁকে মায়ায় বেঁধে ফেলেছে।

২০১০ সালে এক বন্ধুর সঙ্গে নাতসুমি বাংলাদেশে এসেছিলেন ঘুরতে। সে যাত্রায় ঢাকা ও ময়মনসিংহে ছিলেন এক সপ্তাহ। তখন জাপানের নিহন ইউনিভার্সিটিতে সিনেমাটোগ্রাফি বিষয়ে পড়ছেন। বাংলাদেশে এসে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই আ ম্যান নামের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রের ভিডিও তুলে ফেললেন ক্যামেরায়। একদম ছোটবেলা থেকেই নাতসুমি ক্যামেরাপ্রেমী।

আ ম্যান বানানোর পর ২০১৩ সালে আবার বাংলাদেশে এলেন নাতসুমি। বানালেন আরেকটি চলচ্চিত্র অপু নামের আলো।আর এটি বানাতেই গিয়েই আবিষ্কার করলেন বাংলাদেশের আসল সৌন্দর্য। মানুষে মানুষে বন্ধন, সংস্কৃতি আর ভাষা। নাতসুমি বলছিলেন, ‘বাংলা আমি শিখেছি মানুষের সঙ্গে কথা বলতে বলতে। শুরুতে রিকশাওয়ালা এবং রাস্তার পাশের চায়ের দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলতাম। পরে কিছু বন্ধু পেলাম। আর সবচেয়ে ভালো শিখিয়েছে এ দেশের শিশুরা।’

 ২০১৪ সালে একেবারে তল্পিতল্পাসহ বাংলাদেশে এসে পড়লেন নাতসুমি। মা-বাবাকে জানিয়ে দিলেন, এই দেশেই তিনি থাকতে চান। শুরু হলো বাংলা শেখার আসল পরীক্ষা। নাতসুমির ভাষায়, ‘বাংলাদেশে মানুষ আমাকে দেখলেই বলত, “চায়না”, “চ্যাং চাং চুং”, “চাকমা”। প্রথম দুটি বুঝলেও তৃতীয়টি বুঝতে পারলাম না। গুগল করে চাকমাদের সম্পর্কে জানলাম। চলে গেলাম রাঙামাটি, বান্দরবান। পাহাড় আর সেখানকার মানুষদের ভালোবেসে ফেললাম। ওরাও আমাকে আপন করে নিল। এখন আমি ওয়ার্ল্ড থিয়েটার প্রজেক্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি। এই প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ শাখার ব্যবস্থাপক আমি। আমার কাজ হলো জাপানি কার্টুন বাংলা ও চাকমা ভাষায় অনুবাদ ও ডাবিং করে গ্রামগঞ্জের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের দেখানো। এর ফলে শিশুদের সঙ্গে যোগাযোগ বেড়ে গেল। আর ওরাই আমাকে বাংলা ও চাকমা ভাষা শেখাল আরও ভালোভাবে।’

আর দশটা বাংলাদেশি মেয়ের মতোই জীবনযাপন করছেন নাতসুমি। ঢাকার গাউছিয়ায় পোশাক কিনতে যান, ফার্মগেটে যান ফুচকা খেতে, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে যান মাছ ধরা দেখতে, পার্বত্য অঞ্চলে যান মন ভালো করতে। গাউছিয়ায় যখন যান, তখন শুরুতেই দোকানিরা ভাবে, এ তো বিদেশি। নাতসুমি বলছিলেন, ‘যে-ই না সবাই বুঝতে পারে আমি বাংলা বলতে পারি, তখন বলে, “আপা, আপনি দেখি বাংলা বলতে পারেন! আপনার কাছে দাম বেশি রাখুম না, আপা।” এটা আমার খুব ভালো লাগে!’

আবার চাপা একটা কষ্টও আছে। খুব কাছের বন্ধুদের সঙ্গে যখন মন–কষাকষি হয়, তখন মনের গহিনের কথাগুলো ঠিক গুছিয়ে বলতে পারেন না নাতসুমি। এ কারণেই আরও ভালোভাবে বাংলা রপ্ত করতে তাঁর চেষ্টার অন্ত নেই। নাতসুমির কথা শুনে বোঝা গেল, তিনি সেই দিনেরই অপেক্ষায় আছেন, যেদিন বাংলায় হাসতে পারবেন, আবার বাংলায় কাঁদতেও পারবেন।

নিখুঁত বাংলা বলেন দেবরা ইফরমসন। ছবি: খালেদ সরকার

আনিমা ভাবির বাংলা প্রীতি
‘কেমন আছেন?’ মুখজুড়ে লেগে থাকা তাঁর স্মিত হাসিটা বিস্তৃত হয়। সবুজ শাড়ির আঁচল গুছিয়ে চেয়ারে বসতে বসতে জবাব দেন, ‘খুব ভালো আছি।’ দেবরা ইফরমসন নামের মার্কিন এই নারী এখন অনেক বাংলাদেশির কাছে পরিচিত ‘আনিমা ভাবি’ নামে।

এমন পরিচয়ের কারণটা একটা ভাইরাল ভিডিও। ২০১৪ সালে বাংলাভাষাপ্রীতি নিয়ে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। সে ভিডিওতেই দেখা যায়—মিশ্রণমুক্ত, নিখুঁত এবং ঝরঝরে বাংলায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন বাঙালির বাংলা ভাষার প্রতি দায়িত্বহীনতা নিয়ে। ইন্টারনেটের কল্যাণে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা বাংলাভাষী মানুষের কাছে পৌঁছে যায় সেই দুঃখবোধ। রাতারাতি দেবরা ইফরমসনও প্রিয় হয়ে ওঠেন বাংলাভাষীদের কাছে।

সে প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি বলতে থাকেন, ‘এখন বিশ্বের যেখানেই যাই, অনেক বাঙালি আমাকে দেখামাত্রই ছুটে আসেন। অনেকে বলেন, তাঁরা আগে বাংলা ভাষা নিয়ে সচেতন ছিলেন না, এখন চেষ্টা করছেন শুদ্ধ বাংলা বলার। আমার ভালো লাগে এই ভেবে যে আমি কিছু বাঙালির ভেতর বাংলা ভাষা নিয়ে ভাবনা তৈরি করতে পেরেছি।’

আমরাও জানতে চাই, বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর এই অনুরাগের পেছনের গল্প। যে গল্পের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে দেবরা ইফরমসন থেকে ‘আনিমা ভাবি’ হয়ে ওঠা কিংবা বাংলাদেশ নামের এই ছোট্ট সবুজ ভূখণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ার বিবরণ।

১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসেন। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতকোত্তর চটপটে দেবরা ফিরেও গিয়েছিলেন কিছুদিন পরে। ফিরে গিয়েছিলেন বটে, কিন্তু হৃদয়টা যেন জমা রেখে গিয়েছিলেন এ দেশেরই এক তরুণের কাছে। ফলে ১৯৯৭ সালে আবারও আসেন। ১৯৯৯ সালে সেই তরুণ সাইফুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে স্থায়ীভাবে থেকে যান এ দেশেই।

একজন বাঙালি তরুণের থেকে ধীরে ধীরে সেই প্রেম বিস্তৃত হয়েছে বাংলা ভাষা এবং বাংলাদেশের প্রতি। জানালেন, বাংলা ভাষা শেখার শুরুর দিকে বছরখানেক বেশ কষ্ট হয়েছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কোনো ইংরেজিভাষী কিংবা ইংরেজি বলতে চায়, এমন বাঙালির সঙ্গে মিশবেন না। ভাষা শেখার ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহায়তা পেয়েছেন স্বামী সাইফুদ্দিন আহমেদের কাছ থেকে। তাঁর স্বামী প্রথম যে বাক্যটি শিখিয়েছিলেন, আজও তিনি মনে করতে পারেন সেটি। বাক্যটি ছিল, ‘এক কাপ চা দেন।’

প্রিয়জনের শেখানো প্রিয় বাক্য নিয়ে কথা উঠতেই জানতে চাই, বাংলা ভাষার সবচেয়ে প্রিয় শব্দ কোনটি? ‘প্রকৃতি’ এবং ‘পৃথিবী’—জবাব দিতে মুহূর্তমাত্র দেরি হয় না। অল্প হলুদ দিয়ে স্বল্প সেদ্ধ শাকসবজি খেতে ভালো লাগে। বিভিন্ন ভর্তা এবং খিচুড়ি ভীষণ প্রিয়। জানালেন, বাংলা বইও পড়েন মোটামুটি। কবিগুরুর শেষের কবিতা পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি পড়েছেন সমরেশ মজুমদারের লেখা।

দুই দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে আছেন। ১৯৯৮ সালে স্বামীর সঙ্গে শুরু করেছিলেন ‘ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে ‘ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিয়িং’ নামে একটি সংস্থার দায়িত্ব পালন করছেন।

শুদ্ধ বাংলা বলতে না পারার জন্য অনেক বাঙালির ভেতরই বিব্রতবোধ নেই, যা তাকে ব্যথিত করে। অথচ একজন ভিনদেশি হয়ে বাঙালির এই অবহেলায় লজ্জিত হন তিনি। ইংরেজি, ফরাসি, ভিয়েতনামিসহ ছয়টি ভাষা জানেন। ‘বাংলা সবচেয়ে ছন্দময় ভাষা’—নিঃসংকোচে রায় দিলেন। মিশ্রণমুক্ত নিখুঁত বাংলা বলবে প্রতিটি বাঙালি, তবেই শোধ হবে ভাষাশহীদদের রক্তের ঋণ, এমন মনে করেন বাংলা অন্তঃপ্রাণ এই ভিনদেশি নারী

সোমালিয়ার সামাদ
সোমালিয়ার সামাদ
‘বাংলাদেশ আমার দ্বিতীয় মাতৃভূমি, বাংলা ভাষা আমার হৃদয়ের ভাষা’—আলোচনার শুরুতেই মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি সত্তার মীমাংসা করে দেন আবদুস সামাদ। পুরো নাম মো. আবদুস সামাদ ইয়ারো শেখ। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তথ্য ও যোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণির এই ছাত্রের দেশ সুদূর সোমালিয়া। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে আফ্রিকার দেশটি থেকে এসেছিলেন পড়াশোনার উদ্দেশ্যে। সচেতন প্রচেষ্টা নয়, অবচেতনেই শেখা হয়ে গেছে বাংলা ভাষা। বাংলা শেখার কোনো কর্মশালা কিংবা কোনো বই নয়, বাংলাভাষী বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে মিশতে নিজেও কখন বাংলাভাষী হয়ে উঠেছেন, টের পাননি। তবে শুরুর দিকে সমস্যা হয়েছে বাংলা ভাষার সম্বোধন পদ এবং ক্রিয়াপদের ব্যবহার নিয়ে। একবার নারায়ণগঞ্জে গিয়েছিলেন এক বন্ধুর সঙ্গে। সেখানে এক বৃদ্ধকে ‘বুঝছস মামা’ বলে সম্বোধন করে বেশ বিপাকে পড়েছিলেন। বাংলা শেখার ক্ষেত্রে বন্ধু সালাহ উদ্দীনের অবদানের কথা বললেন আবদুস সামাদ। বাংলা গাণিতিক সংখ্যা ছাড়া পড়তে কিংবা লিখতে জানেন না। কিন্তু বুঝতে কিংবা বলতে পারেন দারুণভাবেই। খাঁটি বাঙালির মতোই মাছ-ভাতপ্রিয় আবদুস সামাদের। সকালের নাশতা হিসেবে পরোটা–ডিম ভাজি ভীষণ পছন্দ। বাংলাদেশের রাজশাহী, সিলেট, কক্সবাজার, কুষ্টিয়া—এমন অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। তবে সেন্ট মার্টিনের প্রতি মুগ্ধতা অন্য রকম। সময়–সুযোগ পেলে বারবার যেতে চান সেন্ট মার্টিন ।