টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামে বিতিকিচ্ছি অবস্থা। কোথাও হাঁটুপানি তো, কোথাও কোমরপানি। রিকশা ছাড়া অন্য সব বাহন অচল। শরীফের হঠাৎ মনে হলো বয়স্ক রিকশাচালকদের কয়েকজনকে বর্ষাতি (রেইনকোট) কিনে দিলে কেমন হয়! শরীফের সঙ্গে জুটে গেলাম আমরা কয়েকজন। স্রেফ নিজেরাই বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের কাছে ঘুরে ঘুরে জোগাড় করলাম রেইনকোটের টাকা। রেয়াজউদ্দিন বাজার থেকে কেনা হলো ৬৫টি রেইনকোট।
পরিকল্পনা ছিল চট্টগ্রামে যেদিন ঝুম বৃষ্টি হবে, সেদিন বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আমরা রেইনকোট বিতরণ করব। ২০ জুলাই বিকেলে রেইনকোটের বস্তা নিয়ে আমরা হাজির হলাম সিআরবি সাতরাস্তার মাথায়।
সেখানে দেখা দিল আরেক বিপত্তি। একজন বয়স্ক রিকশাচালকও চোখে পড়ছে না। আমরা হাঁটতে থাকলাম স্টেডিয়ামের দিকে। রাস্তায় কোনো বয়স্ক রিকশাচালক দেখলে তাঁকে থামিয়ে রেইনকোট দিয়ে দ্রুত হেঁটে চলে যাই। এক জায়গায় বেশ কয়েকজনকে বিশ্রামরত অবস্থায় পেয়ে গেলাম। তাঁদের দেওয়ার পর আমরা হাঁটতে থাকি কাজীর দেউড়ির দিকে। ছুটির দিনে ফুটপাত-রাস্তায় অসংখ্য মানুষের ভিড়। এর মধ্যে কোনো বয়স্ক রিকশাচালক চোখে পড়লে সবাই ফুটপাত থেকে রাস্তায় নেমে আসি।
মাঝরাস্তায় রিকশা থামালে রিকশাচালকেরা প্রথমে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যান। কিন্তু রেইনকোট পাওয়ার পর তাঁদের চেহারাটা হয় দেখার মতো। হঠাৎ সন্ধ্যা নেমে আসে। আমরা হাঁটতে থাকি মেহেদীবাগ হয়ে শিল্পকলা একাডেমির দিকে। ল্যাম্পপোস্টের উজ্জ্বল আলোয় হাঁটতে হাঁটতে আমরা চোখ রাখি রাস্তায়। কোনো বয়স্ক রিকশাচালক হাঁপাতে হাঁপাতে রিকশা চালিয়ে চলে যাচ্ছেন না তো!