পাহাড়িদের জীবন-জীবিকা ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ বন। খাদ্য, পানীয় জলসহ বেঁচে থাকার প্রায় সব রসদই বন থেকে সংগ্রহ করেন পার্বত্য চট্টগ্রামের বনজীবীরা। তাই অব্যাহতভাবে বন ধ্বংসের কারণে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছেন তাঁরা। বন রক্ষায় তাই সব শ্রেণির মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। ১৬ মে পার্বত্য চট্টগ্রাম গ্রামীণ বন (ভিসিএফ) সম্মেলনের সমাপনী সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
‘বন বাঁচলে থাকবে পানি’ স্লোগান সামনে রেখে উন্নয়ন সংস্থা জাবারং কল্যাণ সমিতি, টংগ্যা ও হিউমেনিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন এই সম্মেলনের আয়োজন করে। রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিকেল তিনটায় এই সম্মেলনের সমাপনী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ভিসিএফ নেটওয়ার্কের সভাপতি থোয়া অং মারমা। প্রধান অতিথি ছিলেন চাকমা সার্কেল প্রধান রাজা দেবাশীষ রায়। এতে বক্তব্য দেন পার্বত্য নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বন ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ কমিটির মহাসচিব সুদত্ত বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) প্রতিনিধি বিপ্লব চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বন ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ কমিটির বান্দরবান জেলা কমিটির সভাপতি জুমলিয়ান বম, আইনজীবী সুস্মিতা চাকমা ও হিউমেনিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মং মং সিং মারমা।
সভায় বক্তারা বলেন, বন না থাকায় পাহাড়ে পানির উৎস ঝিরি-ঝরনা শুকিয়ে যাচ্ছে। অথচ পার্বত্য এলাকার মানুষজন এই ঝিরি-ঝরনার ওপর নির্ভরশীল।
চাকমা সার্কেল প্রধান রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, বন প্রকৃতির সৃষ্টি, অন্যদিকে বাগান তৈরি করে মানুষ। এখানকার গ্রামীণ বনও প্রকৃতির সৃষ্টি। প্রাকৃতিক বনে লতাগুল্ম, বন্য প্রাণীসহ নানা জীববৈচিত্র্য থাকে। কিন্তু মানুষের সৃষ্টি করা বনে সেগুলো থাকে না। প্রাকৃতিক বনের সঙ্গে বনবাসীদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বন না থাকলে পাহাড়ের জুমিয়া ও বনবাসীরা টিকতে পারবে না। পার্বত্য নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, পাহাড়ে বন ধ্বংস হতে চলেছে। বন ধ্বংস হওয়ায় ছড়া ও ঝিরি-ঝরনাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এতে ক্রমেই পাহাড়ে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। দিনব্যাপী এই সম্মেলন শুরু হয় সকাল সাড়ে নয়টায়। প্রথম পর্বের আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন সাবেক মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরুপা দেওয়ান, জেলা পরিষদের সদস্য রেমলিয়ানা পাংখোয়া, উন্নয়ন সংস্থা টংগ্যার নির্বাহী পরিচালক বিপ্লব চাকমা প্রমুখ। সম্মেলন উদ্বোধন করেন রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা।
সম্মেলনে থোয়া অং মারমাকে সভাপতি ও স্বদেশ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক করে ভিসিএফের ১৫ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যদের চাকমা সার্কেল প্রধান দেবাশীষ রায় শপথ পাঠ করান।