বনসাইয়ের জন্য...

কৃতজ্ঞতা: রাজশাহী বনসাই সোসাইটি
কৃতজ্ঞতা: রাজশাহী বনসাই সোসাইটি

সঠিক স্থান, নিয়ম মেনে পানি, সার দেওয়া, প্রয়োজনে প্রতিষেধক দেওয়া—বনসাইয়ের যত্নে করতে হবে এই চারটি কাজ। বনসাই অনেকের কাছেই একটি শিল্পকর্ম। একজন শিল্পী বহু বছর ও চিন্তাচেতনা ব্যবহারের মাধ্যমে বনসাইকে পরিপূর্ণ রূপ দেন। অনেকেই ঘর সাজাতে বা প্রিয়জনকে উপহার দিতে সংগ্রহ করেন বনসাই। কিন্তু সঠিক পরিচর্যা সম্পর্কে ধারণা না থাকায় শখের বনসাইটিকে বাঁচাতে পারেন না।

বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটির প্রশিক্ষণ পরিচালক রোবহান হোসেন কাকুল জানালেন, পানিনিষ্কাশন ও গাছের বৃদ্ধি রোধে বিশেষভাবে তৈরি টবেই বনসাই করতে হবে। এই টবের নিচের দিকে পানিনিষ্কাশনের জন্য দুটি ছিদ্র থাকে, যা গাছের বৃদ্ধি কমিয়ে রাখে।

স্থান নির্বাচন

বনসাইয়ের জীবনকাল বাড়াতে চাইলে প্রথমেই এমন একটি স্থান বেছে নিতে হবে, যেখানে কমপক্ষে চার ঘণ্টা সূর্যের আলো আসে। সারা দিন রোদ আসা বনসাইয়ের জন্য আরও ভালো।

পানি দেওয়া

বনসাই গাছ অন্য যেকোনো গাছের তুলনায় ভিন্ন হয়, তাই কোনোভাবেই বেশি বেশি পানি দেওয়া যাবে না। বনসাই গাছের মাটি কিছুটা শুকিয়ে গেলেই তবে পানি দিতে হবে। সকালে বা সন্ধ্যায় পানি দেওয়া সব থেকে ভালো। কড়া রোদে পানি দেওয়া যাবে না। খুব বেশি তাড়াহুড়ো করে বনসাই গাছে পানি দেওয়া ঠিক নয়। প্রয়োজনে ঝাঁজরি দিয়ে পানি দিতে হবে। এতে মাটি ধুয়ে যাবে না। সপ্তাহে এক দিন গাছ ধুয়ে পরিষ্কার করুন।

সার দেওয়া

বনসাইয়ের মাটি বদলানোর পর ৬–৮ সপ্তাহ সার না দেওয়াই ভালো। সার দেওয়ার আগে গাছের গোড়া পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে। সার প্রয়োগ করতে হবে সন্ধ্যার সময়। এতে করে সার শোষণে সময় পাবে গাছটি। রাসায়নিক সার ও জৈব সার ব্যবহারের রয়েছে সঠিক পরিমাণও। সেটা জেনে নিতে হবে। বনসাইয়ের জন্য জৈব সারই বেশি উপকারী। এই সার তৈরির জন্য ৩ ভাগ সরিষা বা তিলের খইল ও ১ ভাগ হাড়ের মিহি গুঁড়া পরিমাণমতো পানি দিয়ে ১৫ দিন পচাতে হবে। এরপর ১ কাপ ঘন সার ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দিন। বড় গাছে ২ কাপ ছোট গাছে ১ কাপই যথেষ্ট।

সার দেওয়ার সময়

বসন্ত থেকে শরতের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সার দেওয়া যাবে। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি এই সময়টিতে বনসাইয়ে একেবারেই সার প্রয়োগ করা যাবে না। তবে শীতকালে যদি কোনো বনসাইয়ের বৃদ্ধি হয়, সে গাছে সার দেওয়া যাবে।

রোগ প্রতিরোধ

বনসাইয়ের মোটা ডাল বা কাণ্ড দাঁতের মাজনি দিয়ে মাঝেমধ্যে পরিষ্কার করুন। এতে পোকা জন্মাতে পারবে না। তবে ওষুধ ব্যবহারের সাত দিনে গাছের গায়ে পানি ব্যবহার করা যাবে না, কিন্তু মাটিতে যাবে। এ ছাড়া ছয় মাস পরপর টবের মাটি পরিবর্তন করতে হবে।

যত্ন, ভালোবাসার পাশাপাশি সঠিক নিয়ম প্রয়োজন বনসাই তৈরিতে। কৃতজ্ঞতা: সৈয়দা আমেনা হক, ছবি: নকশা

আরও যা জানতে হবে

l বনসাই চাষের জন্য দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী

l সাধারণত বর্ষাকালে বনসাই রোপণ করতে হয়। তবে বছরের অন্যান্য ঋতুতেও চারা রোপণ করা যায়।

l বনসাই ২ থেকে ৩ দিনের বেশি ঘরে রাখা যাবে না

l শীতকালে মাটি শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত পানি দেওয়া যাবে না।

l বনসাই ২ মাসের মধ্যেই ছাঁটাই হবে এবং একেকবারে ২ ইঞ্চির বেশি ছাঁটা ঠিক নয়।