বউয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করতে শাশুড়ি ও ননদের কী করা উচিত

পাঠকের কাছ থেকে মনোজগৎ, পরিবার, ব্যক্তিজীবন ও সন্তান পালনের মতো সমস্যা নিয়ে ‘পাঠকের প্রশ্ন’ বিভাগে নানা রকমের প্রশ্ন এসেছে। এবার তেমনই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন নাট্যজন সারা যাকের

নাট্যজন সারা যাকের
নাট্যজন সারা যাকের

প্রশ্ন: আমি আর আমার মা ভাইয়ের পরিবারে থাকি। আমার ভাই একটি বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেন। ভাবি একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। তাঁদের চার ও সাত বছরের দুটি সন্তান আছে। ভাবি যেহেতু চাকরি করেন, তাই তাঁদের সন্তানদের আমি ও মা–ই দেখাশোনা করি। ভালোবাসা থেকেই করি। তবে অনেক সময় ভাবির কথায় মন খারাপ হয়। তাঁর ছেলেমেয়েরা কোনো খারাপ কথা বললেই আমরা শিখিয়েছি বলে দোষারোপ করেন।

অনেক আচরণে মা-ও কষ্ট পান। আমরা তাঁদের দাম্পত্যে কোনো ধরনের নাক না গলানোর চেষ্টা করি। তারপরও যেহেতু একই সংসারে থাকি, মা হয়তো কখনো কিছু একটা মতামত দিল, ভাবি রিঅ্যাক্ট করলেন। ভাবি যে সব সময় ঝগড়া করেন বা আমাদের খেয়াল রাখেন না, সেটাও বলতে পারছি না। তবে মাঝেমধ্যেই তিনি খুব খারাপ আচরণ করে ফেলেন। একবার ভাবি, মাকে নিয়ে আলাদা থাকি। যেহেতু চাকরি করি না, কলেজে পড়ি, তাই সেটাও পারছি না। আমি একজন নারী। ভাবির সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করতে মা ও আমার কী কী করার আছে, একটু পরামর্শ চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, রংপুর

উত্তর: তুমি যে সমস্যার কথা লিখলে, প্রায় ঘরেই সে সমস্যা। ভাই বিয়ে করেছে, ছেলে–মেয়ে হয়েছে, তখন কোনো কোনো ভাবির মনে হয়, ননদ–শাশুড়ি বোঝা হয়ে উঠেছে। আমাদের অনেক সময় সে রকম আর্থিক সামর্থ্যও থাকে না যে নিজে নিজেই চলব। অথচ ছেলে বড় হলে বৃদ্ধ বাবা–মাকে দেখবে, অবিবাহিত বোনকে দেখবে—এটাই সাধারণত ধরে নেওয়া হয়।

এই বোঝা হয়ে থাকার যে কষ্ট, তা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? আমি বলব, নিজের মতো করে নিজের পৃথিবী গড়ে তোলা। তোমার পড়ালেখা আছে, বন্ধুবান্ধব আছে। মায়েরও হয়তো ভাইবোন আছে, পাড়া–প্রতিবেশী আছে। তাদের সঙ্গে কথাবার্তা, গল্পগুজব করলে মনটা হালকা থাকে। আবার শিশু দুটির দায়িত্বও আছে, ভাবি চাকরি করে, সেটা তো ফেলে দেওয়ার মতো না। এখন দুই পক্ষকেই সচেতন থাকতে হবে, যাতে কথায় কথায় মনোমালিন্য না হয়। আবার ছোটখাটো বিষয়কে কারোরই বড় না করে দেখা ভালো।

ভাবির মাথায় রাখতে হবে, শাশুড়ি–ননদ যদি দেখভাল না করত, তার দুই সন্তানের কী হতো। আবার তোমাদেরও বুঝতে হবে, ভাবি চাকরি না করলে সংসারে টানাপোড়েন চলত, তাতে হয়তো অশান্তি বাড়ত। আমাদের মতো দেশে, পারিবারিক সম্পর্ক এ রকমই। অর্থনৈতিকভাবে উন্নত সমাজে কোনো দিনই একজনের ওপর আরেকজন নির্ভর করে চলে না। নিজের সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা সে দেশে আছে। আমাদের দেশেও অর্থনৈতিকভাবে যারা স্বাবলম্বী, তারাও দেখা যায় ছেলেমেয়েদের ওপর বোঝা হয়ে থাকে না।

একান্নবর্তী হয়ে থাকার যেমন অনেক সুবিধা, তেমনি আবার দুই পরিবার বা দুজন মানুষের মধ্যে বিরোধ হওয়া স্বাভাবিক। একসঙ্গে চলতে হলে সমঝোতা ছাড়া বিকল্প নেই।

প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা

পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)

ডাক ঠিকানা : প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA