ফ্রিজ আবিষ্কার হলো যেভাবে

আদিম যুগে মানুষের প্রধান কাজ ছিল খাদ্যের খোঁজে বের হওয়া। খাবার সংগ্রহ আর তা সংরক্ষণ নিয়ে চিন্তার শেষ ছিল না। খাদ্য সংরক্ষণের বিষয়টি মানবজীবনে সব সময় ভাবনার বিষয় ছিল। কালের বিবর্তনে ও প্রযুক্তির উন্নয়নে খুব সহজেই এখন খাদ্য সংরক্ষণ করা যায়। রেফ্রিজারেটর আবিষ্কার এবং আধুনিক রেফ্রিজারেটর ব্যবহারের কারণে জীবনযাপন এখন অনেকটাই সহজ হয়ে উঠেছে। রেফ্রিজারেটরের আবিষ্কারের আগে মানুষ খাদ্য সংরক্ষণ কিংবা ভালো রাখার চেষ্টা করত বরফ, তুষার বা ভূগর্ভস্থ স্টোরেজের মাধ্যমে। প্রাচীনকালে রোমান আর গ্রিকরা একটি ‘আইস হাউস’ বা ‘বরফঘর’ তৈরি করে সেখানে সারা বছর বরফ জমিয়ে রাখত।

আগে মানুষ খাবার সংরক্ষণ করত বরফ, তুষার বা ভূগর্ভস্থ স্টোরেজের মাধ্যমে
ছবি: প্রথম আলো

কৃত্রিমভাবে খাবার ও পানি ঠান্ডা রাখা এবং সংরক্ষণ করার একটি জনপ্রিয় যন্ত্র রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ। এতে থাকে তাপ নিরোধক কম্পার্টমেন্ট এবং হিটপাম্প, যা ফ্রিজের ভেতর থেকে তাপ বাইরে বের করে দেয়। ফলে চারপাশের পরিবেশের তাপমাত্রার চেয়ে ফ্রিজের ভেতরের তাপমাত্রা অনেক কম থাকে। উন্নত বিশ্বে খাদ্য সংরক্ষণে অপরিহার্যভাবে রেফ্রিজারেশন করা হয়। কোনো আবদ্ধ স্থানের তাপমাত্রা যখন আশপাশের তাপমাত্রা থেকে কমিয়ে শীতল করা হয়, সেই পদ্ধতিকে বলে রেফ্রিজারেশন। রেফ্রিজারেটরের কম তাপমাত্রার মধ্যে থাকা খাবারের অণুজীবের বৃদ্ধি রোধ করে দেয়। ব্যাকটেরিয়াও কম প্রজনন করে, কম ছড়ায়। ফলে খাদ্য সহজে পচে না। যে খাবারগুলো স্বাভাবিক তাপমাত্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেগুলো নিম্ন তাপমাত্রায় ভালো রাখে রেফ্রিজারেটর।

খাবার ভালো রাখা বা মন চাইলে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খেতে পারার সময় অজান্তেই এর আবিষ্কারকের ওপর কৃতজ্ঞতা জন্মায়। সেই সঙ্গে ভাবনা উঁকি দেয়, কে এই রেফ্রিজারেটরের আবিষ্কর্তা? কীভাবেই–বা এটা আবিষ্কার করলেন তিনি? বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেঁটে জানা যায়, রেফ্রিজারেটর কোনো একজনের আবিষ্কার নয়। তাই একটি নাম বলা সহজ নয়। ১৭৪০ সাল নাগাদ স্কটিশ বিজ্ঞানী উইলিয়াম কুলিন প্রথম কৃত্রিম রেফ্রিজারেশনের ধারণা সবার সামনে নিয়ে আসেন। তিনি তাঁর তত্ত্বে বলেন, দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যাবে, এমন একধরনের গ্যাস ব্যবহার করেই খাদ্যবস্তু ও পানীয় ঠান্ডা রাখা সম্ভব। তবে তিনি এই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে কোনো ধরনের কাজ এগোতে পারেননি।

কে এই রেফ্রিজারেটরের আবিষ্কর্তা?

পরবর্তী সময়ে টমাস মুর ১৮০২ সাল নাগাদ একধরনের আইসবক্স তৈরি করেন তাঁর ডেইরি পণ্য ঠান্ডা রাখার জন্য। তিনি এই কুলিং সিস্টেমের নাম রাখেন ‘রেফ্রিজারেশন’। এরপর ১৮০৩ সালে মুর প্রথম ‘রেফ্রিজারেটর’ নামের পেটেন্ট নেন। মার্কিন সিভিল যুদ্ধের পর ১৮৩০ সাল থেকে এই রেফ্রিজারেটরের চাহিদা বাড়ে এবং সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য এ ধরনের যন্ত্রপাতির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ১৯১৩ সাল নাগাদ ফ্রেড ডব্লিউ উলফ সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য প্রথম বৈদ্যুতিক রেফ্রিজারেটর আবিষ্কার করেন, যার বিবর্তন শেষে বর্তমানে আমরা আধুনিক রেফ্রিজারেটরের সুবিধা ভোগ করতে পারছি।

ফ্রেড ডব্লিউ উলফের আবিষ্কারের পরবর্তী সময়ে নানাভাবে বিবর্তন হয়েছে গৃহস্থালি রেফ্রিজারেটরের, তা মানুষের জন্য আরও বেশি ব্যবহারের উপযোগী হয়েছে। বাসাবাড়িতে খাদ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজারগুলো বিভিন্ন আকারের হয়ে থাকে। সবচেয়ে ছোট মডেলের মধ্যে আছে চার লিটার পেলটিয়ার রেফ্রিজারেটর। আর বড় আকারের রেফ্রিজারেটরগুলো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মাথাসমান উঁচু হতে পারে, প্রস্থে হতে পারে এক মিটার এবং ধারণক্ষমতা ৬০০ লিটার। রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার রান্নাঘরে স্থায়ীভাবে বসানো থাকতে পারে, আবার চলনশীলও হতে পারে। প্রযুক্তির উন্নয়নে দিন দিন গৃহস্থালি পণ্যটি আরও আধুনিক হচ্ছে। ফলে মানুষের জীবন হচ্ছে সহজ ও স্বস্তির।