যে কেউ ইচ্ছা করলেই একটি ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট বা পেজ তৈরি করে ফেলতে পারে। কিছুদিন আগে পর্যন্তও অদ্ভুত নাম বা শব্দ দিয়ে প্রোফাইল তৈরি করা যেত, কেউ কেউ আবার কিছুদিন পরপরই নিজেই নিজের নাম পরিবর্তন করতেন। আবার একই ব্যক্তি একাধিক নামে একাধিক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আলাদা আলাদা বন্ধুতালিকা তৈরি করেন। ফেসবুকে ব্যক্তির সঙ্গে সামনাসামনি দেখা হচ্ছে না, তাই নিজের একটি কাল্পনিক চরিত্র তৈরি করে সেই কল্পনার জগতে থাকার চেষ্টা করছেন অনেকে। কখনো আবার অপরের নামে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে বিশেষ সুবিধা নেওয়া বা ক্ষতির চেষ্টাও হচ্ছে না, এমন না।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট ভ্যারিফিকেশনের ব্যবস্থা চালু আছে। যেখানে অ্যাকাউন্টের নামের পাশে নীল বা হালকা কালো রঙের একটি টিক চিহ্ন থাকে। ফেসবুক নিয়মিতভাবে বিভিন্ন পেজ ভ্যারিফিকেশন করে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অর্থের বিনিময়ে এই ধরনের কোনো ভ্যারিফিকেশন পাওয়া সম্ভব নয় এবং এটি ছাড়া আর কোনো ফেসবুক ভ্যারিফিকেশন পদ্ধতি নেই।
মাঝেমধ্যে দেখা যায় ‘ফেসবুক আইডি’ শিরোনামের একটা সাদা–নীল পরিচয়পত্রের ছবি দিয়ে অনেকে লেখেন যে ফেসবুক এই আইডি কার্ড দিয়েছে। এটা আসলে মজা করার কিছু প্রোগ্রাম বানিয়ে দেয়। অনেক ব্যবহারকারী এগুলোকে সত্য মনে করেন। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কোনো ধরনের পরিচয়পত্র বা আইডি কার্ড দেয় না।
শুধু ভ্যারিফিকেশনের মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা যায় যে প্রোফাইল বা পেজের, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানটির এটি অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে পরিচালনা করা হচ্ছে। যেমন ফেসবুকে ‘প্রথম আলো’ লিখে অনুসন্ধান করা হলে দেখা যাবে একটি পাতার নামের পাশে নীল টিক চিহ্ন রয়েছে এবং একই নামের আরও অনেকগুলো পেজ ও প্রোফাইল রয়েছে। আর সেগুলোর কোনো কোনোটির লাইক বা ফলোয়ারের সংখ্যাও প্রচুর। এখানে নীল টিক চিহ্নসহ পাতাটি কেবল প্রথম আলো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং অন্য কোনোটি থেকে প্রকাশিত কোনো ছবি বা লেখা প্রথম আলোর নয়। তাই প্রথম আলো নামের কোনো পাতার ভুল বা মিথ্যা সংবাদ বিশ্বাস করার আগে দেখে নিতে হবে এটিই মূল পাতা কি না।
প্রোফাইল বা পেজের জন্য আইডি কার্ড, সার্টিফিকেট তৈরির জন্য বেশ কিছু অ্যাপ পাওয়া যায়। যেগুলোর মাধ্যমে নিজের ছবি ও অন্যান্য তথ্য লেখা একটা ডিজাইন পাওয়া যায়। এই অ্যাপ থেকে তৈরি কোনো কিছুই ফেসবুক ভ্যারিফিকেশনের নিশ্চয়তা দেয় না। বরং এসব অ্যাপ ব্যবহার করে নিজের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। কারণ, অ্যাপগুলো এমন সার্টিফিকেট তৈরির সময় প্রোফাইলের অনেক তথ্য কপি করে রাখে এবং সেগুলো পরে ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করে থাকে। এমনকি এই ধরনের অ্যাপ ব্যবহারের ফলে অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়াও অবাস্তব নয়।
ফেসবুকের সব প্রোফাইল ও পেজে ভ্যারিফাই আইকন থাকবে এমন নয়। তবে এটি ছাড়াও অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার বেশ কিছু উপায় রয়েছে। যেমন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে টুইটার, ইনস্টাগ্রাম বা ওয়েবসাইট সংযুক্ত করা। আবার একইভাবে অন্য প্রোফাইলগুলো থেকেও ফেসবুকের লিংক যুক্ত করে রাখা যেতে পারে।
ভ্যারিফিকেশনের জন্য বিস্তারিত নিয়মকানুন রয়েছে ফেসবুকের এই সাহায্য পাতায় (www.facebook.com/help/1288173394636262) । প্রোফাইল বা পেজ ভ্যারিফাই করার জন্য সরাসরি ফেসবুকে আবেদন করার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে আবেদন করা যাবে কেবল নিজের প্রোফাইলের জন্য অথবা নিজে যে কয়েকটি পেজের অ্যাডমিন, সেগুলোর জন্য। অন্য কারও হয়ে আবেদনের কোনো সুযোগ নেই। সরাসরি আবেদন করতে হবে (www.facebook.com/help/contact/342509036134712) এই পাতা থেকে। আবারও মনে রাখতে হবে যে অন্য কেউ অ্যাকাউন্ট ভ্যারিফাই করে দিতে পারবে বলে তাকে পেজের অ্যাডমিন হিসেবে যুক্ত করে নিজেই নিজের ক্ষতি করে ফেলতে পারেন।