ফল দেখে জিবে জল আসে, এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। আম, কাঁঠাল, বরই, আমলকী ইত্যাদি মৌসুমি ফলে রয়েছে আঁশ, ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। এসব উপাদান যেমন রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়, তেমনি ত্বক ভালো রেখে তারুণ্য ধরে রাখতে কাজ করে।
তবে সব ফল সব সময় খাওয়া ঠিক নয়। এতে বাড়তে পারে অ্যাসিডিটি, হতে পারে হজমে সমস্যা। আবার সব রোগীর বেলায় সব ফল খাওয়া উপকারী না–ও হতে পারে। শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি দিনের যেকোনো সময় ফল খেতে পারেন। ফল খাওয়ার সময় নিয়ে তার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, জানালেন বারডেমের পুষ্টি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শামসুন নাহার নাহিদ।
ফল খাওয়ার বিষয়টি আসলে নির্ভর করে ব্যক্তির শরীরের অবস্থার ওপর জানিয়ে পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান নিশাত শারমিন বললেন, ‘অনেকের সন্ধ্যা বা রাতে খেলে হজম হয় না। আবার কেউ যেকোনো সময়ই ফল খেতে পারে শারীরিক কোনো অসুবিধা ছাড়াই। তবে ফল খাওয়ার একটি ভালো সময় হলো সকাল ও দুপুরের মাঝামাঝি অর্থাৎ মধ্যদুপুর বা মিড মর্নিং।’
তবে রাতে ফল না খাওয়ার ক্ষেত্রে মত দেন পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন। আঁশজাতীয় খাবার রাতে খেলে হজমে সমস্যা হওয়ার শঙ্কা থাকে। তাই যাঁদের অ্যাসিডিটির প্রবণতা বেশি, তাঁদের রাতের দিকে ফল না খাওয়াই ভালো। ফল খেলে অ্যাসিডিটির পরিমাণ বাড়বে, বুকব্যথা হতে পারে। রাতে বিপাকক্ষমতা যেহেতু কমে যায়, হজমশক্তি কমে, সে কারণে রাতে উচ্চ আঁশযুক্ত ফল কম খাওয়া ভালো। তাঁর কথার সঙ্গে একমত প্রকাশ করে বারডেমের পুষ্টি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শামসুন নাহার নাহিদ বলেন, যাঁদের পেটফাঁপা, অ্যাসিডিটি, আলসার, গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদি সমস্যা রয়েছে, তাঁদের রাতের খাবারের পর ফল না খাওয়াই ভালো।
এ ছাড়া খালি পেটে অ্যাসিড তৈরি করে, এমন ফল না খেয়ে মিষ্টি ফল খেতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছোট কলা, পেঁপে, আনার জুস, পেয়ারা, আম ইত্যাদি খেতে পারেন। সকালের খাবারের পর মাল্টা জুস বা কমলার জুস খাওয়া যেতে পারে বলে জানালেন পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন।
কোন ফল কখন খাওয়া যেতে পারে দেখে নিন তার তালিকা—
আম: আম গভীর ঘুমে সাহায্য করে। তাই অ্যাসিডিটির সমস্যা না থাকলে দিনে বা রাতে যে কোনো সময়ই আম খাওয়া যেতে পারে।
লিচু: লিচু খালি পেটে খাওয়া যাবে না। রাতেও লিচু না খাওয়াই ভালো। তবে দিনের যে কোনো সময়ই লিচু খেতে পারেন।
কলা: কলায় রয়েছে অদ্রবণীয় আঁশ। একজন সুস্থ ব্যক্তি দিনের যেকোনো সময় কলা খেতে পারে। তবে যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা রয়েছে এবং দেহে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি, তারা সতর্ক হয়ে খাবেন। কলা দেহে শক্তি জোগাতে উপকারি।
কমলা, মাল্টা: ভিটামিন সি জাতীয় ফল খাবারের সঙ্গে খেতে পারলে ভালো। খালি পেটে ভিটামিন সি খেলে অ্যাসিড বাড়িয়ে দেবে।
তরমুজ: মৌসুম অনুযায়ী প্রত্যেকটা আবহাওয়ার সঙ্গে ফল উৎপাদন হয়। গরমে বেশি রসালো ফল পাওয়া যায়। তাই শরীরে পানিশূন্যতা রোধে যেকোনো সময় তরমুজ খাওয়া যেতে পারে।
আমলকী: প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। খাবারের পর আমলকীর রস খাওয়া যেতে পারে। এটি খাবারের আয়রন শোষণ করতে সাহায্য করে।
বড়ই: ভিটামিন সি, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, আঁশ রয়েছে। মধ্য দুপুরের স্ন্যাক্স হিসেবে বড়ই খাওয়া যেতে পারে। তবে যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা রয়েছে, তাদের বড়ই এড়াতে হবে। কস আছে, এমন বড়ই না খাওয়াই ভালো। এতে পেটে ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। প্রচুর বড়ই খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, পাতলা পায়খানা হয়।