প্রিন্সেস ডায়ানার ফ্যাশন

.
রাজকন্যার চলনে-বলনে রাজসিক ছাপ থাকবেই। ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রয়াত পুত্রবধূ প্রিন্সেস ডায়ানা সে ধারাতেও শুরু করেছিলেন নতুন চল। পোশাকের কেতা থেকে আদবকেতা পর্যন্ত সবকিছুতেই নিজের রুচির ছাপ রেখেছিলেন ‘প্রিন্সেস ডি’ অথবা ‘শাই ডি’। সাধারণ মানুষ যেমন তাঁকে গ্রহণ করেছিল দ্রুত, তেমনই স্টাইল আইকনে পরিণত হতেও তাঁর সময় লাগেনি। ছোট ছাঁটের কিছুটা পেজবয়, কিছুটা বব ধাঁচের চুলের জন্য ডায়ানার স্টাইল বিখ্যাত। গত ৫০ বছরের ‘মোস্ট আইকনিক হেয়ারস্টাইল’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন তাঁর চুলের সাজ। ‘ডায়ানা কাট’ বলে তাঁর চুলের ধরন নারী, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাঁর নামে গোলাপ ফুলের লাল সাদা শেডের একটি বিশেষ জাতের নামকরণও করা হয়েছে।

১৯৬১ সালের ১ জুলাই জন্ম, মা-বাবার দেওয়া নাম লেডি ডায়ানা স্পেনসার। ১৯৮১ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রথম সন্তান প্রিন্স চার্লসকে বিয়ে করার পর তিনি প্রিন্সেস অব ওয়েলস হিসেবে পরিচিত হন। ১৯৯৬ সালে বিবাহবিচ্ছেদের আগে প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারি নামে তাঁদের দুই সন্তানের জন্ম হয়। পরের বছর ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট সড়ক দুর্ঘটনায় প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু হয়।

প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন মেকআপ আর্টিস্ট ম্যারি গ্রিনওয়েল। ডায়ানার বেশ কিছু আইকনিক লুকের কাজ তাঁর হাত দিয়ে হয়েছে। বছর দুয়েক আগে সংবাদমাধ্যম এবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের সময় ডায়ানাকে নিয়ে কথা বলেন। তাঁর সে সাক্ষাৎকারে ডায়ানার স্টাইল অনেকটাই ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, প্রিন্সেস ডায়ানা ছিলেন অসম্ভব রূপবতী। মেকআপ তাঁর খুব একটা প্রয়োজন হতো না। তবে পাদপ্রদীপের আলোটা সব সময় তাঁর ওপরে থাকত বলে কিছু ফাউন্ডেশন আর হালকা বাদামি শেড ব্যবহার করতেন। তিনি জানতেন কীভাবে তাঁকে সবচেয়ে সুন্দর দেখায়।
ভোগ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ ছবির ফটোশুটে ১৯৯১ সালে প্রথম ডায়ানার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান গ্রিনওয়েল। বলেন, তিনি যেখানেই যান তাঁকে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতেই হয়। আর তাই পুরোটা সময় চেহারার চাকচিক্য ধরে রাখতে কনসিলার, আই শ্যাডো, মাসকারা এবং অন্যান্য সব ধরনের মেকআপও অনেক সময় ব্যবহার করেছেন। গ্রিনওয়েলের মতে, প্রিন্সেস ডায়ানার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক ছিল তাঁর দুই চোখ। এর সঙ্গে তাঁর ত্বক খুব সতেজ ও উজ্জ্বল ছিল।

কেট মিডলটন ফ্যাশনে অনুসরণ করেন তাঁর শাশুড়ি ডায়ানাকে

তাঁর সুগন্ধি
ডায়ানার সৌন্দর্যের আরেক রহস্য ছিল তাঁর বাহারি সুগন্ধি। সব সময় তিনি সুগন্ধি মেখে থাকতেন। কোনো নারীর সম্পর্কে জানতে হলে নাকি তিনি কোন সুগন্ধি ব্যবহার করেন, তা জানাই যথেষ্ট। ডায়ানার ক্ষেত্রেও কথাটা সত্যি। তবে তিনি কোনো একক সুগন্ধিতে সীমাবদ্ধ ছিলেন না। সব ধরনের সুগন্ধির মধ্যে তাঁর পছন্দের একটি হলো কুয়েলকো ফ্লর এল অরিজিনাল। বিয়ের সময় ব্যবহার করেছিলেন এটি। প্রায় ৯০ বছর ধরে তৈরি হচ্ছে হালকা ফুলের ঘ্রাণের এই সুগন্ধি। তৈরিতে প্রায় ২৫০ ধরনের কাঁচামালের প্রয়োজন হয় আর এক আউন্স সুগন্ধির জন্য দরকার প্রায় ১৫ হাজার ফুল।
বিয়ের পর বিভিন্ন সুগন্ধি পরীক্ষা করে দেখেছেন। এর মধ্যে হার্মিস ২৪ ফোবর্গ, এল এয়ার ডু টেম্পস ও ডিওরিসিমো অন্যতম। যে সুগন্ধিই হোক, সেটা যেন সাদা ফুলের হালকা ঘ্রাণের হয়, সেদিকে লক্ষ থাকত সব সময়।

মেকআপ
মেকআপ নেওয়ার আগে ডায়ানা সব সময় মুখ পরিষ্কার করে নিতেন। ত্বক ঠিক রাখার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম ও খাদ্যাভ্যাসে ছিল তাঁর কড়া নজর। মদ্যপান বন্ধ করেছেন। আমার সঙ্গে কাজ শুরু করার পর ডায়ানা বিভিন্ন ধরনের মেকআপ পরীক্ষা করে দেখেছেন। নতুন কিছুতে তাঁর আগ্রহ ছিল। তবে চেহারার সঙ্গে যাচ্ছে কি না সেটাই ছিল তাঁর বড় প্রশ্ন।

পোশাক
ডায়ানার বিয়ের পোশাকের নকশা করেছিলেন ডেভিড ও এলিজাবেথ এমানুয়েল। সে সময় নয় হাজার পাউন্ড খরচ করে তৈরি সে পোশাক ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত পোশাকগুলোর একটি হিসেবে ঠাঁই করে নিয়েছে। ডায়ানাকে অনেক পোশাক ডিজাইনার সাহসী বলেছেন, কারণ তিনি সব সময় ভিন্ন কিছু ধরনের পরীক্ষা করে দেখতেন। কেরি টেইলর নামের এক মহিলা ডায়ানার ১০টি পোশাক নিলামে তুলেছিলেন। ৮ লাখ পাউন্ডে বিক্রি হওয়া সে পোশাকগুলো সেরা বলা হয়। ডায়ানার পোশাক সবচেয়ে বেশি নকশা করেছেন ফরাসি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ডিজাইনার ক্যাথেরিন ওয়াকার। এ ছাড়া ক্রিস্টিনা স্ট্যাম্বোলিয়ান ও ভিক্টর এডেলস্টেইন তাঁর কিছু পোশাক নকশা করেন।
ফ্যাশন সাময়িকী হারপার’স বাজার–এর মতে ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রয়াত পুত্রবধূ প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে বর্তমান পুত্রবধূ কেট মিডলটনের রুচির খুব মিল। অন্তত ৩৩ বার তাঁকে ডায়ানার মতো পোশাকে দেখা গেছে।
গ্রন্থনা: মেহেদী হাসান
তথ্যসূত্র: স্টাইল ম্যাগাজিন, পিপল ম্যাগাজিন