প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যানসার নির্ণয়ের উপায়

প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় হলে রোগ নিরাময় হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্তন দেখে সফল চিকিৎসা করা যায়।

লক্ষ করার বিষয়

* স্তনের আকার, আকৃতি ও রঙের কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না।  

* দুই স্তনের কোনো তারতম্য।

* স্তনের ত্বকের কোনো পরিবর্তন (পুরু পাকা কমলার খোসার মতো)।

* স্তনবৃন্ত ভেতরে দেবে গেছে কি না।

* বৃন্তসংলগ্ন এলাকার ত্বকে অস্বাভাবিকতা আছে কি না। 

* বৃন্ত হতে নির্গত তরলের রং।

স্তন ক্যানসার পরীক্ষার তিনটি বিষয়:

১. নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করা 

২০ বছর বয়স হতে প্রতি মাসে একবার নিজেকে নিজে পরীক্ষা করা। সারা জীবন তা চালিয়ে যাওয়া। নিজের স্তনের স্বাভাবিকতা বুঝতে পারা, যাতে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে  দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যায়।

২. ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট এক্সামিনেশন (চিকিৎসক দ্বারা পরীক্ষা করানো)

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক দ্বারা শারীরিক পরীক্ষা করানো। ২০ থেকে ৩৯ বছর বয়স পর্যন্ত তিন বছরে একবার ও ৪০ বছর পার হলে প্রতিবছর একবার।

৩. ম্যামোগ্রাফি, অন্যান্য রেডিওলজি ও ইমেজিং পরীক্ষা যেমন আলট্রাসনোগ্রাফি, এমআরআই।

এসব পরীক্ষায় কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে এফএনএসি (সরু সুই ফুটিয়ে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা) করে রোগ শনাক্ত হয়।

স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের জন্য তিনটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ।

নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করার পদ্ধতি

নিজেকে নিজে পরীক্ষা করা একটি কারগরি বিষয়। প্রতি মাসে একবার। একটি নির্দিষ্ট দিন ঠিক করে নারী ঋতুচক্র শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা করলে ভালো হয়। কারণ, সে সময় স্তন কিছুটা হালকা থাকে এবং ব্যথা কম হয়। মেনোপজ হয়ে যাওয়া নারীরা যেকোনো দিন পরীক্ষা করতে পারেন।

প্রথমত

পরিষ্কার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পর্যাপ্ত আলোয় নিম্নের প্রতিটি অবস্থায় নিজেকে লক্ষ করুন।

১. দুই বাহু শরীরের দুই পাশে ঝুলিয়ে রাখুন

২. বাহুদ্বয় মাথার ওপরে বা পেছনে উঁচিয়ে ধরুন।

৩. দুই হাত কোমরে চাপ দিয়ে দাঁড়াতে হবে, যাতে বুকের মাংসপেশি টান টান হতে পারে। 

৪. স্তনবৃন্তে হালকা করে একটু চাপ দিয়ে দেখতে হবে, কোনো রস বের হয় কি না। 

দ্বিতীয়ত

হাত দিয়ে পরীক্ষা করে অনুভব করুন। দুই অবস্থানে থেকে দুইবারে এটি করতে হবে। 

১. বিছানায় শুয়ে। ডান হাত দিয়ে বাঁ স্তন এবং বাঁহাত দিয়ে ডান স্তন। যে পাশের পরীক্ষা করতে হবে, সে পাশের হাত মাথার ওপর রাখতে হবে, কাঁধের নিচে ছোট বালিশ বা তোয়ালে ভাঁজ করে দিতে হবে, যাতে বুক ও স্তন একই সমান্তরালে থাকে। অন্য পাশে অল্প কাত হয়ে শুতে হবে। এবার হাতে মাঝের তিন আঙুলের প্যাড দিয়ে প্রথমে একটু হালকা চাপ, পরে আরও ভারী চাপ, এরপর আরও চাপ দিয়ে স্তন সীমানার পুরো এলাকা অনুভব করতে হবে। যেন কোনো অংশ বাদ না যায়। স্তন টিস্যুতে চাপ রাখা আঙুলের প্যাড (ঘুরন্ত লাটিমের মতো) একটি অক্ষের ওপর কয়েকবার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পরীক্ষা করুন।

২. গোসলের সময় দাঁড়িয়ে। শরীরে সাবান মেখে একইভাবে পরীক্ষা করতে হবে। 

কোনো অসংগতি থাকলে তা আঙুলের পরীক্ষায় অনুভূত হয়। আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সবার অনুভব করার ক্ষমতা সমান নয়। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে যেমন ঋতুবতী, গর্ভবতী, শিশুকে দুধদানকারী এবং মেনোপজ নারীর স্তন ও স্তনগ্রন্থি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কখনো কখনো স্তনে স্বাভাবিকভাবে চাকা চাকা অনুভব হতে পারে। জানা না থাকলে অকারণ ভীতির সৃষ্টি হয়। ঠিকভাবে সব স্থান পরীক্ষা না করা হলে রোগ এড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বা দক্ষ চিকিৎসক দ্বারা দুই–তিন বছরে একবার পরীক্ষা করানো স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনুভব করার মতো চাকা থাকলে চিকিৎসকের পরীক্ষায় ভুল হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।

চিকিৎসক ঝুঁকিপূর্ণ মনে করলে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যেমন ম্যামোগ্রাফি, আলট্রাসনোগ্রাফি, এমআর ম্যামোগ্রাফি। 

ঠিক কত বছর বয়স থেকে স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং ম্যামোগ্রাফি শুরু করতে হবে, তা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংগঠন বয়স নির্ধারণ করতে না পারলেও সাধারণভাবে ৪০ বছর পার হলেই স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং করা যৌক্তিক বলা যেতে পারে।

অধ্যাপক পারভীন শাহিদা আখতার
মেডিকেল অনকোলোজিস্ট, শান্তি ক্যানসার ফাউন্ডেশন