আমরা প্রতিদিনই ব্যবহার করছি বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী। উদ্দেশ্য একটাই—নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা। কিন্তু সৌন্দর্যের এই যাত্রায় ত্বকের যে ক্ষতি করে ফেলছেন অনেকাংশে, সেটা কি বুঝতে পারছেন? আমরা মাঝেমধ্যেই অভিযোগ করি যে ত্বক লালচে হয়ে যাচ্ছে, র্যাশ উঠছে। এর অন্যতম একটি কারণ বিভিন্ন প্রসাধনপণ্যে ব্যবহৃত ক্ষতিকারক উপাদান। প্রতিদিন ব্যবহার করা হয়, এমন কিছু প্রসাধনীর ক্ষতিকারক দিকগুলো দেখে নিই একঝলকে।
লিপস্টিক
লিপস্টিক ঠোঁটের ময়েশ্চারাইজার টেনে নেয়। প্রতিদিন অনেকক্ষণ ধরে ব্যবহারে ঠোঁটের লাবণ্য হারায়। লিপ বাম এ ক্ষেত্রে কিছুটা ভালো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা পরামর্শ দিচ্ছেন, লিপস্টিক ব্যবহার করতে চাইলে প্রথমে লিপ বাম ব্যবহারে করতে। কিছু কিছু লিপস্টিক ও লিপ বামে ক্ষতিকারক তেল ও রাসায়নিক পদার্থ থাকার কারণে ঠোঁটের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিও হয়ে যেতে পারে! লাল রঙের লিপস্টিকে মাঝেমধ্যেই সিসা পাওয়া যায় খুব বেশি পরিমাণে। এতে মস্তিষ্ক কর্মক্ষমহীন পর্যন্ত হতে পারে! এ ছাড়া অসংগতিপূর্ণ আচরণের পেছনেও এর ভূমিকা থাকে। লিপস্টিকে ব্যবহৃত মিনারেল অয়েল ত্বকের ছিদ্র বা পোরস বন্ধ করে দেয়। ত্বকের কোষ উন্নয়ন ও সঠিক কার্যকারিতাও ব্যাহত করে।
ময়েশ্চারাইজার
সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি ও দূষণ থেকে ত্বকের ক্ষতি হয় বেশ। এ কারণে সবাই কমবেশি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন। তবে যেসব ক্রিমে মিনারেল অয়েল ও প্যারাফিন থাকে, ত্বকের জন্য কিছুটা ক্ষতি বয়ে আনে সেগুলো। ত্বকের ওপর যে প্রতিরোধমূলক বাধার স্তর থাকে, সেটা ভেঙে দেয়। ত্বক থেকে ময়েশ্চারও চলে যায়। কম দামি পণ্য ছাড়াও দামি পণ্যতেও এ ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয়। সমাধান হলো যেসব ক্রিমে ভেজিটেবল অয়েল থাকে, সেগুলো ব্যবহার করা। যেসব তেলে গামা লাইনোলেনিক অ্যাসিড থাকে, সেগুলো ত্বকের প্রদাহজনিত সমস্যাকে চাপা দিয়ে রাখে। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি পণ্যের মাধ্যমে অনেক দিন পর্যন্ত সৌন্দর্য রক্ষা করা যায়।
কাজল
চোখের সৌন্দর্যবর্ধনে কাজলের ব্যবহার যুগ যুগ ধরে। কাজল ব্যবহারের সময় অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করুন। কাজল চোখের ভেতরে চলে গেলে সমস্যা হতে পারে। চোখের ইনফেকশন থাকলে বা ব্যথা পেলে কাজল ব্যবহার না করাই ভালো। সব সময় ভালো ব্র্যান্ডের ও মানের কাজল ব্যবহার করুন।
নেইলপলিশ
আজকে লাল রং, কালকে নীল রং—সপ্তাহে কমপক্ষে দুই থেকে তিনবার কি নেইলপলিশ বদলে লাগানো হয়? গাঢ় রঙের নেইলপলিশ নিয়মিত ব্যবহারে নখে হলদেটে ভাব দেখা যায়। নেইলপলিশে অ্যাসিটোন-জাতীয় উপাদান থাকলে নখ দুর্বল ও নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে।
ডিওডোরেন্ট ও অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট
শরীরের দুর্গন্ধ রোধ করার জন্যই এ দুটি পণ্য অনেকেই ব্যবহার করেন। তবে দুটিরই কিছু ক্ষতিকারক দিক আছে। ডিওডোরেন্ট ব্যবহারে অনেকের ত্বকে জ্বালাপোড়া হয়, লালচে ভাব দেখা যায়। এর জন্য ডিওডোরেন্টে ব্যবহৃত অ্যালকোহল-জাতীয় উপকরণকেই দোষারোপ করা হয়। অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ব্যবহারে ক্ষতি বেশি হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, এটি ঘর্মগ্রন্থিগুলোর মুখ বন্ধ করে দেয়। ফলাফল চর্মরোগ অথবা অ্যালার্জি হতে পারে। ঘামের মধ্য দিয়ে শরীরের বর্জ্য বের হয়ে যায়। ঘর্মগ্রন্থিগুলো আটকে যাওয়ার কারণে শরীর থেকে ঘাম ঠিকমতো বের হতে পারে না। এ কারণেই মূলত সমস্যাগুলো হয়।চুলের রং
চুল রং করা অথবা ডাই করা থেকে চুল পড়ে যাওয়া, ত্বকে জ্বালাপোড়া, লালচে ভাব, চুলকানো, মুখ ফোলা ভাব ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। হেয়ার ডাইয়ে ব্যবহৃত পি-ফেনিলিনডায়ামিন উপকরণটি অন্যতম ক্ষতিকারক উপাদানের মধ্যে একটি। এটি থেকে ক্যানসারও হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
শেষের আগে
আপনি কি আরেকজনের টুথব্রাশ ব্যবহার করেন? ভুল করেও এ কাজ কেউ করতে চাইবে না। মেকআপ ব্রাশ ব্যবহার ও কসমেটিকস ব্যবহারেও একই নিয়ম অনুসরণ করুন। না হলে একজনের ত্বকের ব্যাকটেরিয়া আপনার ত্বকেও বাসা বাঁধতে পারে! আরেকজনের কাজল বা মাসকারা ব্রাশ ব্যবহারেও কিন্তু ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
সূত্র: ইনডিপেনডেন্ট ডটইউকে ও টাইমস অব ইন্ডিয়া