দিনভর আয়োজিত ১১টি আলোচনা সভা ও ৫টি কর্মশালায় উপস্থিত বিশেষজ্ঞ, সফল মানুষ ও অতিথিদের কাছে প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়েছিলেন অংশগ্রহণকারীরা। কয়েকটি প্রশ্নোত্তরের কথা শোনা যাক।
সিভি কি আগেই বাদ পড়ে যাবে?
রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আল আমিনের প্রশ্নে এত জোরে হাততালি পড়ল, বোঝা গেল প্রশ্নটা অনেকেরই। ‘উপস্থাপন করো নিজেকে’ শীর্ষক আলোচনায় তখন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন গ্রো এন এক্সেলের প্রধান নির্বাহী এম জুলফিকার হোসেন, বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী এ কে এম ফাহিম মাশরুর এবং ক্রাউন সিমেন্টের মানব সম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এ বি এম ইউসুফ আলী খান। আল আমিনের জিজ্ঞাসা ছিল, ‘আপনারা বলছিলেন, আমরা যখন সিভি জমা দিই, তখন প্রথমেই এক দফা যাচাই–বাছাই হয়। ভালো সিভিগুলো আপনাদের হাতে পৌঁছায়। এখন আমি যদি সে রকম ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়ি, আমার সিভি তো চাকরিদাতার হাত পর্যন্ত পৌঁছাবেই না। তাহলে আমি কী করব?’ উত্তর দিলেন ফাহিম মাশরুর। তিনি বলেন, ‘৫-৭ বছর আগে আমাদের বিডি জবসের ওয়েবসাইটে একেকটি চাকরির জন্য ২৫০-৩০০টি সিভি জমা পড়ত। এখন সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০০-৭০০। কারণ, কয়েক বছর আগেও বছরে দেড় লাখ স্নাতক বের হতো। এখন প্রতিবছর স্নাতক শেষ করে চাকরির খোঁজে নামে ৫-৭ লাখ তরুণ।’ এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে ফাহিম মাশরুর পরামর্শ দেন, ‘শুরুতে বেতনের দিকে তাকালে হবে না। যেই কাজই পাও না কেন, প্রয়োজনে বিনা বেতনেই কাজ করো। কয়েক মাস কাজ করে যেই অভিজ্ঞতা পাবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ বছর পড়েও সেই অভিজ্ঞতা হয় না। কাজের অভিজ্ঞতাই তোমার সিভির গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করবে।’
ব্যবসা করতে কী গুণ থাকা জরুির?
এই প্রশ্ন করেছিলেন আল মামুন নামের একজন অংশগ্রহণকারী। উত্তর দেন বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘প্রথম যে গুণটি থাকা দরকার তা হলো সততা।’ চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন মোস্তাফিজ উদ্দিন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি ব্যাখ্যা করেন, কেন সততা থাকাটা জরুরি, ‘আমি যখন চাকরি ছেড়ে দিলাম, তখন পরিবারে ছোট ২ ভাই ছিল। মা বলল যে “তুমি এই অবস্থায় চাকরিটা ছেড়ে দিলে, সেটা কি ঠিক হলো? ছোট দুই ভাইয়ের কথা ভাবতে পারতে।” আমি বললাম, মা, যেখানে কাজ করছিলাম, সেখানে আমি সততার সঙ্গে চাকরি করতে পারছিলাম না।’ এরপর বিভিন্ন জায়গায় চাকরির চেষ্টা করেছেন মোস্তাফিজ উদ্দিন। এক জায়গায় চাকরি হলো। বেতন ধার্য করা হলো ৯৮ হাজার টাকা। মোস্তাফিজ চাকরিদাতাকে বলেন, ‘১ লাখ টাকা না হলে আমি চাকরি করব না।’ চাকরিদাতা রাজি হন। পরদিন নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার পর তিনি দেখেন, বেতনের অঙ্কের জায়গায় লেখা আছে ৯৯ হাজার ৯৯৭ টাকা। সেই চাকরি তিনি করেননি। কারণ তাঁর কাছে মনে হয়েছে, যেই প্রতিষ্ঠান প্রতিশ্রুতি রাখে না, সেখানে কাজ করা নিরাপদ নয়।
অংশগ্রহণকারীরা যেসব সুযোগ পাবেন
ক্রাউন সিমেন্ট ও প্রথম আলো ছাড়াও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নানা রকম সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে অংশগ্রহণকারীদের জন্য। সেগুলো হলো
* ইয়ুথ অপরচুনিটিজের সহায়তায় দুজন তরুণ নেপাল ও মালয়েশিয়ায় দুটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
* ২৮ জন পাবেন ইউরো–এশিয়া ইন্টেরিয়র অ্যান্ড ফার্নিশার্স লিমিটেড, কম্পিউটার সার্ভিসেস লিমিটেড, স্কিল জব ও এ আর কমে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজের সুযোগ।
* উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী ৫০ জন পাবেন ড্যাফোডিল গ্রুপের চেয়ারম্যান সবুর খানের সঙ্গে বিজনেস সেশনে যোগদানের সুযোগ।
* ৫০ জন বিনা খরচে ইংরেজি ভাষা দক্ষতার পরীক্ষা টোয়েইকে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
* ১০০ থেকে ২০০ জনকে বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শনের সুযোগ দেওয়া হবে।
জয়োৎসবে অংশগ্রহণকারীদের পূরণকৃত ফরমে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক মনোনয়নের পর চূড়ান্তভাবে তাঁদের নির্বাচিত করবেন আয়োজকেরা।