শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার গায়ে একরঙা টি-শার্ট। এক দিকে কেউ হয়তো ব্যস্ত অনুষ্ঠানের শেষ সময়ের সাজসজ্জা নিয়ে, আরেক দিকে নিজেদের তৈরি সফটওয়্যারের ত্রুটিগুলো শুধরে নিচ্ছিলেন কেউ কেউ। ২৩ মে থেকে তিন দিনব্যাপী উৎসবমুখর একটা সময় কেটেছে বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (বিএইউএসটি) শিক্ষার্থীদের। সৈয়দপুর সেনানিবাসে অবস্থিত এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সিএসই ফেস্টিভ্যাল’-এর একটি পর্বে আমন্ত্রণ পেয়েছিল আশপাশের কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও। বিশাল আয়োজন দেখে চমকে গেছেন ঢাকা থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম কায়কোবাদ। তিনি বলেন, ‘রাজধানী থেকে এত দূরে এত সুন্দর আয়োজন সত্যিই অসাধারণ! এখানকার ছেলেমেয়েরা খুবই সুশৃঙ্খল, ওদের আবিষ্কারের আগ্রহ আছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে যা বোঝায়, আশা করি এই অঞ্চলে বিএইউএসটিই তার নেতৃত্ব দেবে।’
হ্যাঁ, নেতৃত্বের দায়িত্ব এরই মধ্যে কাঁধে নিতে শুরু করেছেন বাউস্টিয়ানরা। প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, নতুন সফটওয়্যার উপস্থাপন, ইনফোগ্রাফিক প্রেজেন্টেশন, গেইমিং কনটেস্ট, গণিত অলিম্পিয়াড, কর্মশালা, রোবোটিকস কনটেস্ট, কুইজ প্রতিযোগিতা—সবকিছুর আয়োজন হয়েছে শিক্ষার্থীদের হাত ধরে। উৎসবে সভাপতিত্ব করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. ইমামুল হুদা।
সফটওয়্যার এক্সপোজিশন ও ইনফোগ্রাফিক প্রেজেন্টেশনে মোট ২৭টি দল অংশ নেয়। তরুণ বাউস্টিয়ানদের তৈরি ১০টি নতুন সফটওয়্যার অনুষ্ঠানের অতিথিদের অভিভূত করেছে। এহতেশাম অমি, লিটন ও তাসনিম রশীদ যেমন তৈরি করেছেন ‘বিএইউএসটি ডট গুরু’ নামে একটি ওয়েবসাইট। বিশ্ববিদ্যালয়টির অভ্যন্তরীণ যোগাযোগমাধ্যমকে আরও কার্যকর করতে এই ওয়েবসাইটটি ভূমিকা রাখতে পারে। এদিকে ইনফোগ্রাফিক প্রেজেন্টেশনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইফতেখার আহমেদ ও তাঁর দল। সফটওয়্যার এক্সপোজিশন বিভাগে চ্যাম্পিয়ন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তন্ময় আহমেদ।
তবে পুরো আয়োজনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ ছিল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, যেখানে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নাহিদ সিদ্দীকি, শহীদুল ইসলাম ও নাফি শাহরিয়ারের দল। মেয়েদের মধ্যে প্রোগ্রামিংয়ের আগ্রহ ছড়িয়ে দিতে মেয়েদের মধ্যে সেরা দলটিকে আলাদা করে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এ ছাড়া ছিল ডিজিটাল র্যাফেল ড্র।
উৎসবের আনন্দ ক্যাম্পাসের বাইরে ছড়িয়ে দিতে বিএইউএসটি প্রথম আলো বন্ধুসভার সহযোগিতায় প্রায় ৫০০ কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আয়োজন করা হয়েছিল আইসিটি অলিম্পিয়াড। আইসিটি কুইজ চ্যাম্পিয়ন রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রাওজা হোসেন বলছিলেন, ‘বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ক্যাম্পাসে এসে খুব ভালো লাগছে। নিজের মেধা যাচাইয়ের একটা সুযোগ পেলাম। বিএইউএসটিকে ধন্যবাদ।’
দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন। তিনি ‘সিএসই ক্যারিয়ার ইন ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যোগ্যতা অর্জন ও প্রয়োজনীয়তার ওপর দুটি সেমিনারে বক্তব্য দেন। কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষকেরা ছাড়াও উৎসবের সার্বিক আয়োজনে ছিল বিএইউএসটি সিএসই সোসাইটি। কম্পিউটার ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘প্রথমবারের মতো এ ধরনের আয়োজন শিক্ষার্থীদের ভীষণ উজ্জীবিত করেছে। ভবিষ্যতেও এমন আরও কর্মসূচি নেওয়া হবে।’