জীবনে বৈচিত্র্য থাকা চাই। না হলে জীবনটা বেশ পানসে লাগে, চলে আসে একঘেয়েমি। এমনটাই বিশ্বাস করেন যারিন রওনক সচি। আর এই বৈচিত্র্যের টানেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই ব্যবসা শুরু করেন তিনি। জন্ম নিল ‘কুমুদিনীর বসন’। তাঁর কাছে এটি শুধু একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম নয়, একটুকরো ভালোবাসার নাম, যে ভালোবাসার সঙ্গে মিশে আছে বাঙালি নারীর শাড়ির বুনন। শুরুর সেসব দিনের কথা বলতে গিয়ে খানিকটা স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়লেন সচি, ‘ভাবতাম, এমন কিছু করব যেটায় আমার ভালো লাগা, ভালোবাসা আছে। আর যাতে সহজে, সব বয়সীদের কাছে পৌঁছানো যায়। সে জন্যই শাড়ির ব্যবসায় নেমেছি।’
তাহলে ইঞ্জিনিয়ারিং? এমন প্রশ্নে হেসে উঠলেন সচি। আবারও মনে করিয়ে দিলেন, জীবনে বৈচিত্র্য থাকতে হবে। সচি বলেন, ‘পড়াশোনা করেছি। অনেক কিছু শেখা হলো। আমার পড়াশোনাটাও কিন্তু খানিকটা ব্যবসাকেন্দ্রিক।’
বাবার চাকরির সুবাদে বুয়েট কলোনিতে বেড়ে ওঠা, ফলে শুরু থেকেই প্রকৌশল বিদ্যায় আগ্রহ। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গিয়েই শিখেছেন জীবনে ঝুঁকি নেওয়ার কৌশল। হাতে–কলমে শিখেছেন কীভাবে আপন জায়গা থেকেই সবার কাছে পৌঁছানো যায়। সচি বলেন, ‘শাড়ি এমন একটি পণ্য যা সব বয়সী নারীই পছন্দ করেন। সে জন্যই শাড়ির ব্যবসা শুরু করেছি। সাধ্যের মধ্যে সাধ মেটানোর লক্ষ্য নিয়েই ‘কুমুদিনীর বসন’-এর জন্ম। সব সময় চাইতাম যেন আমার পণ্যটি একজন কিশোরী তার সামান্য বাজেট থেকে কিনতে পারে।’
২০১৭ সালে মাত্র তিন হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেছিলেন সচি। এখন ধানমন্ডিতে একটি শো রুমে কর্নার ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন তিনি। মূলত টাঙ্গাইল থেকে শাড়ি সংগ্রহ করেন সচি। তবে মূল ডিজাইনের কাজটা তিনি নিজেই করেন। যেমন শাড়ির পাড়ে ফুলেল মোটিফ বা কোনো কবিতার লাইন যুক্ত করে ভ্যালুঅ্যাড করেন। কিছু শাড়িতে ডিজাইনারের মাধ্যমে নিজের ভাবনার কথা স্ক্রিনপ্রিন্ট করান। একইভাবে ব্লক বা এমব্রয়ডারির কাজও করানো হয়। এ ছাড়া মণিপুরি কারিগরদের ডিজাইনে কালার কম্বিনেশন পাল্টে নতুনত্ব আনেন।
এখনো নিজস্ব কোনো কারখানা দাঁড় করাতে পারেননি সচি। তবে কয়েকজন কারিগর আছেন, যাঁরা শুধু তাঁর ডিজাইন নিয়ে এককভাবে কাজ করেন। সচি জানালেন, শুরুতে শুধু শাড়ি নিয়ে কাজ করলেও এখন অন্য পোশাক নিয়েও কাজ করছে কুমুদিনী। এ উদ্যোগে ২০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
সচি বলেন, ঘরে বসেই আমাদের ওয়েবসাইট অথবা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে পণ্য নিতে পারেন যে কেউ। দেশের বাইরে থেকেও প্রচুর অর্ডার পাই।’ সচি স্বপ্ন দেখেন তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি আরও বড় হবে। শাড়ি কিনতে এসে মানুষ বই পড়তে পারবে, একটু আড্ডা দিবে...। শুধু কেনাকাটাই নয়, তাঁর শাড়ির দোকান হবে সব বয়সী নারীদের আড্ডার জায়গা।