‘ক্লান্ত চোখ ও ক্লান্ত চোখের পাতা, তাহার চেয়েও ক্লান্ত আমার পা। মাঝ উঠোনে সাধের আসন পাতা, একটু বসি? জবাব আসে, না।’ বলেছিলেন জনপ্রিয় সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ।
ব্যস্ততার ভিড়ে একান্ত নিজের প্রয়োজনগুলো কখন যে হারিয়ে যায়, সেদিকে আর নজর পড়ে না। ক্লান্ত শ্রান্ত দেহে যখন রোগ বাসা বাঁধে তখন টনক নড়ে। সুস্থ থাকতে বাড়তি কোনো টনিক নয়, প্রয়োজন সচেতনতা আর সহজ কিছু নিয়ম মেনে চলা।
পুরুষের ত্বক
ত্বকের যত্ন নারী–পুরুষ উভয়েরই প্রয়োজন। সানস্ক্রিন ক্রিম কিংবা ছাতা ব্যবহার না করায় ত্বক দ্রুত উজ্জ্বলতা হারায়। অতি বেগুনি রশ্মি ত্বকের জন্য খুব ক্ষতিকারক। এ জন্য কাজে বের হওয়ার ২০-৩০ মিনিট আগে ত্বকের জন্য মানানসই সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করা উচিত। এটি রোদে পোড়া ভাব দূর করার পাশাপাশি ত্বককে সুরক্ষা দেবে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ছেলেরা অয়েল কন্ট্রোল ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে পারে। এটি ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণে রাখে। আর শুষ্ক ত্বকের জন্য সাধারণ ফেসওয়াশে মুখ পরিষ্কার করে অবশ্যই ক্রিম লাগাতে হবে। যানবাহনের ধোঁয়া ও ধুলা শরীরে বয়সের ছাপ ফেলে দেয়। ঘরে ফিরে দ্রুত ত্বক পরিষ্কার করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বকে থাকবে তারুণ্য।
চুল–দাড়ি
মুখের আকৃতি অনুযায়ী চুলের বিন্যাস হলে ভালো হয়। পুরুষের সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ এবং মেনস পারলারে কয়েকটি কাটে চুল কেটে আপনার মুখের সঙ্গে মানানসই কাটটি বেছে নিতে পারেন।
চুলের জেল বা হেয়ার স্প্রে প্রচুর ময়লা টানে। লম্বা সময় ধরে জেল ব্যবহার করলে মাথার ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার গ্রোথ হতে পারে। বাড়ি ফিরে চুল দ্রুত ধুয়ে ফেলুন। নারকেল তেল গরম করে রাতে ঘুমানোর আগে স্কাল্পে ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে স্কাল্পে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে এবং চুলের গোড়া মজবুত হয়ে চুল পড়ার প্রবণতাও কমবে। এ ছাড়া অন্তত সপ্তাহে তিনবার শ্যাম্পু কারা উচিত।
রেজর ব্যবহারে অনেকের ত্বকে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। প্রথমেই দাড়ি–গোঁফ ভিজিয়ে ভালো করে ভিজিয়ে নিন। ফোম বা জেল দিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। মুখে দাড়ি বা গোঁফ যেদিকে গেছে, সেদিকেই রেজর চালান। সময় বাঁচাতে ট্রিম মেশিনও ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া ঊর্ধ্ববাহুর নিচ পরিষ্কার রাখতে হবে। ডিওডোরেন্ট ব্যবহারের আদর্শ সময় রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে। এটি ব্যাকটেরিয়া দূর করে বাজে গন্ধ তৈরি হতে দেয় না।
স্বাস্থ্যসম্মত পেশি
পুরুষের স্বাস্থ্যসম্মত পেশি সৌন্দর্য বাড়ায়। এই পেশি বানানোর জন্য প্রয়োজন পরিশ্রম এবং পরিমিত খাবার। প্রতিদিনের খাবারে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন এবং মিনারেল থাকতে হবে। মাংস কিংবা ডালের মতো উৎস থেকে পর্যাপ্ত প্রোটিন খেতে হবে। প্রোটিন স্বাস্থ্যসম্মত পেশি গঠনে সহায়তা করে। পেশি গঠনে প্রতিদিন অন্তত বাড়তি ৫০০-১০০০ ক্যালরি প্রয়োজন। খাবার শরীরের অভ্যন্তরীণ শক্তি বাড়াবে, তবে পরিমিত ব্যায়াম না করলে পেশি গঠিত না হয়ে তলপেট ভারী হতে থাকবে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরে সামঞ্জস্য রেখে গঠিত হবে পেশি। দেহের শৌর্য–বীর্য বাড়বে, সঙ্গে সুস্থও থাকা যাবে।
যৌনস্বাস্থ্য
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শুক্রাণুর সক্ষমতা কমতে থাকে। রাত না জেগে দ্রুত ঘুমানো উচিত। পর্যাপ্ত ঘুম শুক্রাণুকে সক্রিয় করে এবং ডিম্বাণুকে সহজে নিষিক্ত করতে পারে। শরীর পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পেলে রক্তে এক ধরনের খারাপ প্রোটিনের মাত্রা বেড়ে যায়। এই প্রোটিন বীর্যের মান নষ্ট করে দেয়।
যাঁরা শরীরিক পরিশ্রম করেন না তাঁদের মধ্যে যৌন অক্ষমতার প্রবণতা বেশি। অতিরিক্ত ধূমপান যৌন ক্ষমতাকে হ্রাস করে। যৌনস্বাস্থ্য ভালো রাখতে ধূমপান এবং মদপান থেকে বিরত থাকা উচিত। এ ছাড়া অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার পুরুষের যৌনশক্তি কমিয়ে দিতে পারে। যৌনস্বাস্থ্য ঠিক রাখতে স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম এবং শারীরিক পরিশ্রমে যৌনস্বাস্থ্য ভালো থাকে।
লেখক: চিকিৎসক