যেকোনো উৎসবেই আমাদের দেশে ছেলেদের প্রধান পোশাক পাঞ্জাবি। হোক সেটা ধর্মীয়, সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয়। আর ঈদ হলে তো কথাই নেই। বিশেষ করে সকালে নামাজ পড়তে যাওয়ার সময়। ফ্যাশন হাউসগুলোও ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবির বিশেষ সংগ্রহ আনে। এবারও তেমনটিই দেখা যাচ্ছে। তবে ক্যাজুয়াল শার্ট, পলো শার্ট, টি-শার্টও থাকবে এবার ঈদ ফ্যাশনজুড়ে।
উৎসবে পাঞ্জাবির বহুল ব্যবহারের প্রধান কারণ একই সঙ্গে এটি আধুনিক ও ঐতিহ্যবাহী। তবে পাঞ্জাবি বলতে আমরা এখন আর শুধু একরঙা সোজাসাপটা বা স্ট্রেট প্যাটার্নকে বুঝি না। মেয়েদের পোশাকের মতো ছেলেদের এই ঐতিহ্যবাহী পোশাকের কাট, প্যাটার্ন ও রঙে এসেছে ভিন্নতা। কাপড়েও এসেছে চিত্রিত ভাব।
বৈশাখের ঝাঁজালো রোদে এবার ঈদ করতে হবে। পোশাক তৈরির উপকরণ ও রঙেও দেখা যাচ্ছে এর প্রভাব। যেমন ছেলেদের পাঞ্জাবিতে সুতি, লিনেন, অ্যান্ডি কটন ও সিল্কের ব্যবহার বেশি। এ বিষয়ে ফ্যাশন হাউস ‘কে ক্র্যাফট’-এর স্বত্বাধিকারী খালিদ মাহমুদ খান বলেন, ‘পোশাকগুলোর জন্য ফেব্রিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে কটন, ডিজাইনড কটন, হ্যান্ডলুম কটন, টু-টোন, লিনেন, জর্জেট, ক্রেপ জর্জেট, সিল্ক, হাফ সিল্ক, মসলিন, টিস্যু, সাটিন। পাঞ্জাবির নকশায়ও রাখা হয়েছে সেই আবহ। পুরো বডিজুড়ে কারুকাজ না করে ছোট ছোট নকশা করা হয়েছে।’
পাঞ্জাবিতে রঙের বৈচিত্র্য এবার সবচেয়ে বেশি। ব্ল্যাক, টেন গোল্ড, মেরুন, ম্যাজেন্টা, ফিরোজা, কফি, পার্পল, ভায়োলেট, ল্যাভেন্ডার, চেরি রেড, অরেঞ্জ, হট ও কোরাল পিঙ্ক, অলিভ গ্রিন, ফরেস্ট গ্রিন, মিন্ট গ্রিন ও ব্রোঞ্জ গ্রিন। এক নীলেরই কত ধরন—রয়্যাল, নেভি, মেরিনো, ক্যাডেট, স্কাই। পাঞ্জাবিকে এমব্রয়ডারি, স্ক্রিন ও ব্লক প্রিন্ট, কারচুপি, মেটালিক হাতের কাজ ও টাই-ডাইয়ের মাধ্যমে অলংকৃত করা হয়েছে।
পোশাকগুলোকে সময়োপযোগী করতে বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছে কে ক্র্যাফট। আধুনিকতার আলোয় ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছে আরও অনেক ফ্যাশন হাউস। আছে কাঁথার ফোঁড়, অরনামেন্টাল বিডস, মোগল শৈলী, মোগলীয় আর্ট, উইভিং মোটিফের অনুপ্রেরণা। এ ছাড়া গুজরাটি, ইক্কত, কলকা আর্ট, জামদানি, ফ্লোরাল, ট্র্যাডিশনাল, টার্কিশ আর্ট ও ইসলামিক মোটিফের ছোঁয়ায় সেজেছে ছেলেদের ঈদের পাঞ্জাবি।
আন্তর্জাতিক হালফ্যাশনে বড় একটি জায়গা দখল করেছে রেট্রো ও ক্ল্যাসিক স্টাইল। তেমনই বাংলাদেশেও এবারের ঈদে ছেলেদের পোশাকে দেখা যাচ্ছে রেট্রো ও ক্ল্যাসিক স্টাইলের আধিপত্য। একরঙা পাঞ্জাবি ক্ল্যাসিক স্টাইলের একটি বড় উদাহরণ। এবারও বজায় আছে সেই চল। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে একরঙের সঙ্গে রাখা হয়েছে এমব্রয়ডারির কাজ। বিশেষ করে কলার, কাফ ও বটমলাইনে নানা ধরনের নকশার ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। বডি ও কলার-প্ল্যাকেটে বেশি দেখা যাচ্ছে এসব নকশা। একই সঙ্গে আবার রঙিন ও সাদা-কালো পাঞ্জাবির মিশ্রণও রয়েছে। এবার সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে নীল, লালচের মতো রং। কিন্তু ক্ল্যাসিক ফ্যাশনে জায়গা পেয়েছে সাদা বা কালো রঙের পাঞ্জাবি। তাই রঙিনের পাশাপাশি ঈদ পাঞ্জাবির সংগ্রহে এবার সাদা, কালোও দেখা যাবে।
খাদি পাঞ্জাবির চাহিদা আবার বেড়েছে। তবে সেটা পাতলা খাদি। বিশেষ করে যাঁরা কিছুটা মিনিমাল লুক পছন্দ করেন। ঐতিহ্য আর অভিজাত দুটি শব্দকেই ধারণ করে খাদি। আর কাপড়টা দেখতে যেমন ফ্যাশনেবল, পরতেও তেমনই আরামদায়ক। শুধু পাঞ্জাবি নয়, বাজারে এখন এ কাপড়ের শার্টও পাওয়া যায়।
পাঞ্জাবিতে সিল্কের ব্যবহার অনেকটা কমে এসেছে। তবে কিছু দোকান এবারও নতুন সংগ্রহ এনেছে।
সন্ধ্যার পর দাওয়াতে বা ঈদের সময় কারও বিয়েশাদির মতো বিষয় থাকলে সেখানে সিল্কের পাঞ্জাবি পরার চল আছে। চলতি ধারায় এবার অ্যান্ডিসিল্কের পাঞ্জাবিও থাকছে, যা দিন-রাত দুই সময়েই ব্যবহার উপযোগী। বেশির ভাগ পাঞ্জাবির কাট এবার সেমি লং। গত দুই বছরের তুলনায় প্রিন্টের প্রভাব কিছুটা কমেছে, যা আছে, সেখানে জ্যামিতিক প্যাটার্নের প্রিন্টই বেশি। বাটনপ্লেটের চারপাশে হাতের কাজ যেমন আছে, তেমনি আছে মেশিন এমব্রয়ডারি। বুকের একপাশেও এখন কাজ দেখা যায়। এসিমেট্রিক্যাল প্যাটার্নও আছে। মিডল প্ল্যাকেট থেকে সরে সাইড প্ল্যাকেটের পাঞ্জাবি এসেছে এবার।
বরাবরের মতো পায়জামায় সোজা কাটই থাকছে বলা যায়। তবে পাঞ্জাবির সঙ্গে সাদা পায়জামার পাশাপাশি ডেনিম বা চিনোসও দেখা যাবে। যদিও গরম, তারপরও রাতের অনুষ্ঠানে কটি পরা যেতে পারে। মুজিব কোট থেকে শুরু করে ল্যাপেল দেওয়া স্লিভলেস কটিও মানাবে ঈদের দিন। কটিতে এখনো প্রিন্টের প্রাধান্য বেশি।
পাঞ্জাবির পাশাপাশি অন্য বেলায় পরার জন্য আছে শার্ট, পলো শার্ট, টি-শার্ট। লিনেন কাপড়ের শার্টের বিশেষ চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া ফরমাল ক্যাটাগরিতে রয়েছে বিজনেস শার্ট, নন–আয়রন ইজি কেয়ার শার্ট। পাঞ্জাবির বাইরে ছেলেদের উৎসবের পোশাকের ধরন অনেকটাই এক, প্রতিদিনের পরিধানযোগ্য শার্ট, টি-শার্ট। এ বিষয়ে সেইলরের প্রধান পরিচলন কর্মকর্তা রেজাউল কবির বলেন, ‘আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল ফিতর। ঈদের ছুটিতে সবাই বন্ধু, আত্মীয়স্বজন, সহকর্মীসহ বিভিন্ন সামাজিক গ্রুপের সঙ্গে পার্টি, মিটআপ ও আড্ডায় অংশগ্রহণ করেন। ফ্যাশনসচেতন ছেলেরা পার্টিতে নিজেকে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দেখাতে পছন্দ করে। তাই শার্ট, পলো বা টি-শার্টে লম্বা সময়ের জন্য আরাম মিলবে।’
গ্রীষ্মের উষ্ণ আবহাওয়ার কথা ভেবে হালকা রঙের নরম শাইনি কাপড়ের পোশাক ব্যবহার করা উচিত। উৎসব ও আরাম—দুটিই বজায় থাকবে। ছেলেদের নতুন শার্ট সংগ্রহে চোখে পড়বে ফরমাল ও ক্যাজুয়াল দুই ধরনের শার্ট। অনেকে সারা বছরের কথা ভেবে ফরমাল শার্ট কিনে রাখেন। সে ক্ষেত্রে অন্য সময়ের কথা ভেবে চেক শার্ট কিনতে পারেন। ক্যাজুয়াল শার্টের মধ্যে ফুলেল নকশা ছাড়াও জ্যামিতিক নকশা দেখা যাচ্ছে।
তবে সব মিলে দিন শেষে আপনার স্টাইল আপনাকেই সেট করতে হবে। আর তার জন্য আরামের পাশাপাশি চলতি ধারার খোঁজ রেখে পোশাক বাছাই করা উচিত।