‘নাশতার টেবিলেই কিন্তু আমাদের কথা শেষ হয়ে যাবে না। আমরা হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে একজন আরেকজনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারি। ভবিষ্যতে হয়তো একে অপরকে সহায়তা করতে পারব।’ বলছিলেন মাইক্রোসফট বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, লাওস ও মিয়ানমার অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোনিয়া বশির কবীর। গত ২৩ মার্চ একদল তরুণ তাঁর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল বিএসআরএম-এর মিট দ্য এক্সপার্ট নামের একটি আয়োজনের মাধ্যমে। আয়োজনটির সঙ্গে আছে প্রথম আলো।
তরুণেরা যেন বিভিন্ন খাতের সফল মানুষদের সঙ্গে মুখোমুখি বসে, কথা বলে পরামর্শ নিতে পারেন, অনুপ্রাণিত হতে পারেন, সে লক্ষ্যেই এই আয়োজন। প্রথম অতিথি হিসেবে এসেছিলেন সোনিয়া বশির কবীর। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তরুণেরা তাঁর সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করে নাম নিবন্ধন করেছিলেন। নির্বাচিত ১০ জন পেয়েছেন সেই সুযোগ—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থী এরিকা আফরিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএর ছাত্রী সারাহ তামান্না, বরিশালের উদ্যোক্তা শারমিন আক্তার, সফটওয়ার্কস লিমিটেডের কর্মী নিতা বর্মন, চট্টগ্রামের ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির ছাত্র ফয়সাল মেহেদী, কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহমুদুল হাসান, ঢাকা ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র মো. নাফিস সাদিক চৌধুরী, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ছাত্র সৌরভ ঘোষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাম্মদ তানসেন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাসুদ রানা।
আমরাই বাংলাদেশের সহপ্রতিষ্ঠাতা আরিফ আর হোসেনের সঞ্চালনায় আলাপ জমে উঠতে সময় লাগেনি। গুলশানের শেফস টেবিলে, সকালের নাশতা খেতে খেতেই তরুণেরা বিভিন্ন পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা পেয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাসুদ রানা যেমন বললেন, তিনি পড়ালেখার পাশাপাশি রানা ম্যাথ একাডেমি নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। সোনিয়া বশিরের কাছে তাঁর প্রশ্ন ছিল, ‘আপনি কি নিজেকে সফল মনে করেন?’ সোনিয়া বশির জানালেন, এখনো তিনি নিজেকে সফল মনে করেন না। আরও অনেক পরিকল্পনা আছে, সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ করছেন তিনি। মাসুদ রানার কাছে একটা পাল্টা প্রশ্নও ছিল তাঁর, ‘আপনি যে ছাত্রদের পড়ান, কাদের আপনি ভালো ছাত্র বলেন? যাঁরা ভালো নম্বর পায় তারা?’ মাসুদের উত্তরটা নিশ্চয়ই ১০০ তে ১০০ পাওয়ার মতো, ‘আমার কাছে ভালো ছাত্র তারা, যারা প্রশ্ন করে। গণিত নিয়ে প্রশ্ন করে, অন্য বিষয় নিয়েও প্রশ্ন করে...’
প্রশ্ন করেছিলেন তরুণদের মধ্যে একজন, ‘মা-বাবা অনেক সময় আমাদের পছন্দের বিষয়টা পড়তে দেন না, পছন্দের বিষয়ে কাজ করতে দেন না, এ ক্ষেত্রে আমরা কী করতে পারি?’ উত্তরটা সোনিয়া বশির একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নয়, মা হিসেবেই দিলেন, ‘মা-বাবা হয়তো অনেক সময় মানতে চান না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের কাছে কিন্তু সন্তানের সন্তুষ্টিটাই বড়।’
বরিশাল থেকে এসেছিলেন শারমিন আক্তার। শারমিনের গল্পটা চমকপ্রদ। তিনি বরিশাল হাতেম আলী কলেজে পড়েন। মানুষকে সাজাতে ভালোবাসেন, তাই এটিকেই ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে চেয়েছিলেন। পরিবার থেকে অনুমতি ছিল না। এর মধ্যে শারমিনের বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর স্বামীর সহায়তায়, শাশুড়িকে নিয়ে বরিশালে ‘শ্রেয়শী বিউটি কেয়ার’ নামে একটি পারলার খুলেছেন শারমিন। তিনি বলছিলেন, ‘আমন্ত্রণ পেয়ে গতকালই আমি ঢাকায় চলে এসেছি। আরিফ আর হোসেন ভাইকে আমি অনেক দিন আগে থেকেই ফেসবুকে ফলো করি। সোনিয়া বশির কবীর ম্যামকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন ফিচার পড়েছি। আজ তাঁদের মুখোমুখি হতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে।’ শারমিনদের মতো তরুণদের মুখোমুখি বসে সোনিয়া বশির কবীর ও আরিফ আর হোসেন অবশ্য শুধু অনুপ্রেরণা দিলেন না, পেলেনও। সোনিয়া বশির বলছিলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটা শক্তি আছে, যেটা আমার মধ্যে নেই। সেটা হলো তারুণ্যের শক্তি।’
মিট দ্য এক্সপার্ট-এর এই আলাপন একযোগে প্রচারিত হবে নাগরিক টিভি, এবিসি রেডিও এবং প্রথম আলোর ফেসবুক ও ইউটিউবে । আয়োজনটির রেস্তোরাঁ সহযোগী শেফস টেবিল। মিট দ্য এক্সপার্টে প্রতি মাসেই আসবেন সফল ব্যক্তিত্বরা। বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন এই ওয়েবসাইটে: www.prothomalo.com/meet-the-expert