সিডও সনদের ব্যাপারে তরুণদের অভিমত জানতে সম্প্রতি প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সহায়তায় আইজ্যাক, উইমেনভিউ ও প্রথম আলো বন্ধুসভা যৌথভাবে একটি জনমত জরিপ পরিচালনা করে। অনলাইনভিত্তিক এ জরিপে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সীরা অংশগ্রহণ করেন। জরিপটি সিডও সনদের দ্বিতীয় ও ষোলোতম ধারার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। উল্লেখ্য, নারীর প্রতি সব বৈষম্য বিলোপ সনদের (সিডও) মূল লক্ষ্য হলো রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যক্তিজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারী-পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য বিলোপ নিশ্চিত করা।
জরিপে অংশ নেওয়া ৭২৭ জনের মধ্যে ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ নারী, ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ এবং শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ ছিলেন ট্রান্সজেন্ডার। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২১ বছর বয়সী ছিলেন সর্বোচ্চ ১২৩ জন, ২৩ বছর বয়সী ১০৯ এবং ২২ বছর বয়সী ১০৬ জন। জরিপে বয়সের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য রাখা হয়েছে যেন বিভিন্ন বয়সীদের মতামত জানা সম্ভব হয়। এ ক্ষেত্রে মতামত দাতাদের ৬০ শতাংশ বয়সে তরুণ এবং স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী। অন্য যাঁরা মতামত দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এইচএসসি ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা রয়েছেন। জরিপে এসএসসি বা সমমান পর্যায়েরও অনেকে অংশ নিয়েছেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২০০-এর বেশি ছিলেন ঢাকার। তবে ময়মনসিংহ, রংপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ থেকেও অনেকে এ জরিপে অংশ নেন।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে প্রথমে জানতে চাওয়া হয় তাঁরা নারী-পুরুষের সমান অধিকারে বিশ্বাস করেন কি না। এ প্রশ্নের উত্তরে ৫৫০ জন (৭৫.৭ শতাংশ) হ্যাঁ ও ১৯ জন (২১.৭ শতাংশ) না বলেন এবং অল্পসংখ্যক এ ব্যাপারে নিশ্চিত নন বলে জানান। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩৯১ জন, অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি (৫৩.৮ শতাংশ) সিডও সনদ সম্পর্কে অবগত বলে জানান। অন্যদের মধ্যে ২২৫ জন (৩০.৯ শতাংশ) এ ব্যাপারে জানেন না এবং ১১১ জন (১৫.৩ শতাংশ) এ সনদ সম্পর্কে জানেন কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত নন বলে উল্লেখ করেন।
যাঁরা সিডও সনদ সম্পর্কে জানেন, তাঁদের এই তথ্যের উৎস জানতে চাইলে ৪৮.৮ শতাংশ উত্তরদাতা এ ব্যাপারে ইন্টারনেট থেকে জেনেছেন বলে উল্লেখ করেন। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উত্তরদাতা হিসেবে ২৬ শতাংশ তাঁদের তথ্যের উৎস হিসেবে স্কুলের কথা উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের আইনে এমন কিছু ধারা রয়েছে, যা সিডও সনদ অনুযায়ী নারীর প্রাপ্য অধিকারকে সংকুচিত করে—এ ব্যাপারে জানেন কি না, এমন প্রশ্নে উত্তরদাতাদের ৪৭.৫ শতাংশ তা জানেন না এবং ৩৮.৪ শতাংশ এ ব্যাপারে ধারণা রাখেন বলে উল্লেখ করেছেন।
সিডও সনদ বাংলাদেশের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ, এ প্রশ্নে উত্তরদাতাদের ৭২.৮ শতাংশ (৫২৯) বলেন, বাংলাদেশে নারীরা অহরহই নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হন। উত্তরদাতাদের মধ্যে ১৭৩ জন (২৩.৮ শতাংশ) মনে করেন, নারীর অধিকার বিষয়ে বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত এটিই (সিডও) একমাত্র দলিল। ২৫ জন (৩.৪ শতাংশ) মনে করেন, পৈতৃক সম্পত্তিতে নারীদের অধিকার নেই, তাই এ ধরনের আইন প্রয়োজনহীন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে উত্তরাধিকারসংক্রান্ত আইন সম্পর্কে অবগত কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে ৪২১ জন (৫৭.৯ শতাংশ) জানেন, ১৯১ জন (২৬.৩ শতাংশ) নিশ্চিত নন এবং ১১৫ জন (১৫.৮ শতাংশ) জানেন না বলে উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন নারী-পুরুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ না-সূচক, ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ হ্যাঁ-সূচক এবং ৩২ দশমিক ৩ শতাংশ এ-সংক্রান্ত আইন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই বলে জানান। এ ছাড়া মা-বাবার সম্পত্তিতে নারী ও পুরুষের সমান ভাগীদার হওয়া উচিত কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে ৭১ দশমিক ৭ শতাংশ (৫২১ জন) সম্মতিসূচক উত্তর দেন। জরিপের সর্বশেষ প্রশ্নে বাংলাদেশে নারী-পুরুষের বৈষম্যমূলক যেসব আইন রয়েছে, সেগুলো বাতিল করা দরকার কি না, এর উত্তরে ৯৫ দশমিক ৫ শতাংশ তা বাতিল করার পক্ষে মত দিয়েছেন।
পুরো জরিপটি পরিচালনা এবং প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণের পর মনে হয়েছে, উত্তরদাতাদের মধ্যে সিডও সনদ এবং বাংলাদেশে বিদ্যমান প্রাসঙ্গিক আইন সম্পর্কে উত্তরদাতাদের সবার মধ্যে সুস্পষ্ট ধারণা বা পর্যাপ্ত তথ্য নেই। তবে খুব ছোট একটি অংশ ছাড়া প্রায় সবাই মনে করেন, নারীরা নানা ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার এবং এ বৈষম্য বিলোপ হওয়া প্রয়োজন।
এ জরিপের মাধ্যমে বোঝা যায়, তরুণসমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের মধ্যে সিডও সনদ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই; তবে সঠিক তথ্য প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন করা সম্ভব, এভাবে একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র উপহার দেওয়া সম্ভব।