নতুন চুলের জন্য

চুল পড়া শুরু করলে দেরি না করে নিতে হবে সঠিক ব্যবস্থা। মডেল: সামিয়া, কৃতজ্ঞতা: ক্লিওপেট্রা বিউটি স্যালন, ছবি: সুমন ইউসুফ
চুল পড়া শুরু করলে দেরি না করে নিতে হবে সঠিক ব্যবস্থা। মডেল: সামিয়া, কৃতজ্ঞতা: ক্লিওপেট্রা বিউটি স্যালন, ছবি: সুমন ইউসুফ

যার নেই সে-ই বোঝে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির মাথা ভরা চুলের প্রশংসা করছেন। নিজের চুলের কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন। প্রাচীন মহাভারতের নারী ধ্রুপদি, রামায়ণের সীতা, শক্তিশালী নারী চরিত্রের পেছনে তাদের দিঘল ঘন কালো চুল নিয়ে আলাদা গল্প আমাদের মন ভরায়। মন ভরায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা নজরুল ইসলামের বাবরি দোলানো ঝাঁকড়া চুল। চুল নিয়ে সৌন্দর্যভাবনা খুবই প্রাচীন। সুন্দর, ঝলমলে চুল চেহারাতে যোগ করে অন্য মাত্রা। বাড়ায় আত্মবিশ্বাস। এই চুল যখন পড়তে শুরু করে, চিন্তার শুরু হয় তখনই। তবে সময়মতো পদক্ষেপ নিলে নতুন চুলও গজাবে। জানালেন বিশেষজ্ঞরা।

রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতে পাচ্ছেন বালিশের ওপর চুল পড়ে আছে। চুল আঁচড়ানোর সময় চিরুনিতেও একসঙ্গে উঠে আসছে একরাশ চুল! চুল ঝরতে ঝরতে এমন হলো যে মাথার সিঁথির রেখা বড় হয়ে মাথার ত্বক দেখা দিল। আগের মোটা বিনুনি হয়ে পড়ল সরু। হাতখোঁপায় হাতে চুলই জড়াল না। ছেলেদের কপাল বড় হতে থাকল, মাথার মাঝখানের চুল ঝরে গিয়ে পাতলা হয়ে দেখা দিল টাক! বয়সের সঙ্গে সঙ্গে চুল কমে আসা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও কিশোর-কিশোরীদের জন্য এটি বিব্রতকর ও যন্ত্রণাদায়ক একটি বিষয়। জানালেন, রূপবিশেষজ্ঞ তানজিমা শারমিন মিউনি। তাঁর মতে, চুল হারানো বা ঝরে পড়ার পেছনে কিছু কারণ থাকে। যেমন: বংশগত, মানসিক চাপ, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হারানো, অতিরিক্ত ধুলাবালু, খাবারের অনিয়ম, ভিটামিনের অভাব, ঘুমের অনিয়ম, নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার না করা, মাথার ত্বকে সংক্রমণ, খুশকি, ধূমপান, গর্ভাবস্থা, অতিরিক্ত ওষুধ সেবন ইত্যাদির কারণে চুল পড়ে যেতে থাকে। ঠিকমতো পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত, কেননা সঠিক মাত্রায় প্রোটিন না খেলে চুল যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টি পাবে না। পর্যাপ্ত ঘুম দরকার, ধুলাবালু, রোদ এড়িয়ে সঠিক যত্ন নিলে অনেকাংশে চুল ঝরা রোধ করা যায়। তানজিমা শারমিন বলেন, কিছু চুল স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নাজুক হয়ে ঝরে পড়তে পারে, সে ক্ষেত্রে চিন্তার কিছু নেই। পুরোনো নাজুক, ভঙ্গুর চুল ঝরে গিয়ে নতুন চুল গজায়। নতুবা নতুন চুল গজানোর জন্য নেওয়া যেতে পারে বিশেষ কিছু ট্রিটমেন্ট। সৌন্দর্য সেবাকেন্দ্রে গিয়ে বা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে।

প্রাচীনকালে চুল সুরক্ষিত রাখতে চুলের যত্নে ব্যবহার হতো ঘরোয়া ভেষজ পদ্ধতি। তাতেই খুলত চুলের বাহার। ঝলমলিয়ে উঠত চুলের আসল সৌন্দর্য। কথাগুলো এভাবেই বলছিলেন রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা। তিনি জানালেন চুলের ভাঙা, ঝরা রোধ করতে চাই সঠিক যত্ন। নতুন চুল গজানোর জন্য বাতলে দিলেন বিশেষ উপায়।
উপকরণ: কালিজিরা ১ চা-চামচ, মেথি ৫০ গ্রাম, লং ২টা, জবা ফুল ২টা, লেবু ১টা, কারিপাতা ১০ গ্রাম, নারকেল তেল ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ ২টি, আমলা ২টি। সব উপাদান একত্রে মিশিয়ে পেস্ট করে নিতে হবে।
উপকারিতা
লং এবং লেবু: মাথার ত্বকের সংক্রমণ দূর করে চুল গজাতে সাহায্য করে।
মেথি: খুশকি দূর করে।
জবা ফুল: চুলকে ঝলমলে মসৃণ করে, চুলের বৃদ্ধি ঘটিয়ে থাকে।
কারিপাতা: নতুন চুল গজায়, কন্ডিশন করে, চুলের গোড়া শক্ত করে, চুল পড়া কমায়।
পেঁয়াজ: চুল কালো করে চুলকে ক্যারোটিনসমৃদ্ধ করে নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে থাকে।
ব্যবহারের নিয়ম: যদি অতিরিক্ত চুল পড়ে সে ক্ষেত্রে সপ্তাহে ৩ দিন এই উপকরণ চুলে লাগাতে হবে। এক ঘণ্টা চুলে রেখে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এই প্যাকটি ব্যবহার করে শুধু পানিতে চুল ধুয়ে নিলেই হবে। শ্যাম্পু করার প্রয়োজন হবে না।