পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার
প্রশ্ন: আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক হিসেবে আট বছর সততার সঙ্গে চাকরি করেছি। সব নিয়মকানুন মেনে প্রতিষ্ঠান থেকে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে এসেছি। দেড় বছর হয়ে গেছে, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এখনো আমার পাওনা মিটিয়ে দেয়নি। নিয়মমাফিক আমি ভবিষ্য তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড), গ্র্যাচুইটিসহ অন্যান্য ভাতা পাব। কিন্তু তারা সেটা দিচ্ছে না। এখন আমি কি আইনি পদক্ষেপ নিতে পারি? আইনের কোন ধারা আমার জন্য প্রযোজ্য হবে?
এস এম হাসান, মিরপুর ডিওএইচএস, ঢাকা
উত্তর: আপনি বলছেন আপনি ব্যবস্থাপক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। যদি ব্যবস্থাপনামূলক কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন সে ক্ষেত্রে আপনি শ্রমিকের সংজ্ঞায় পড়বেন না এবং আপনার ক্ষেত্রে শ্রম আইন প্রযোজ্য হবে না।
এ ক্ষেত্রে আপনার সঙ্গে আপনার প্রতিষ্ঠানের যে চুক্তি বা নিয়োগপত্র আছে, সেটিতে কী আছে, তা দেখতে হবে। ওই প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব চাকরিসংক্রান্ত বিধিতে যদি ব্যবস্থাপক বা ম্যানেজার পদের জন্য গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের বিধান থাকে, তবে অবশ্যই আপনি তা পাবেন। আপনার প্রতিষ্ঠান যদি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে, তাহলে আপনি দেওয়ানি আদালতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করতে পারেন।
যদি আপনার নিয়োগপত্রে কাজের ধরনে ব্যবস্থাপনা–সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব আপনার ওপর না থাকে, তাহলে আপনি শ্রম আইনের অধীনে সুরক্ষা পাবেন। যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, প্রশাসনিক, তদারকি কর্মকর্তা বা ব্যবস্থাপনামূলক কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত না হলে সেই ব্যক্তি শ্রমিকের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
শ্রম আইন অনুযায়ী, গ্র্যাচুইটি পাওয়ার যোগ্যতা (যদি প্রতিষ্ঠানে এই স্কিম চালু থাকে) হলো পূর্ণ এক বছর চাকরি করা। এবার যদি হিসাব ধরি, তবে প্রতিবছরের জন্য প্রাপ্য গ্র্যাচুইটি হবে ৩০ দিনের মজুরির সমপরিমাণ অর্থ। আর সেটির হিসাব হবে সর্বশেষ পাওয়া মজুরি ধরে। এ ক্ষেত্রে গ্র্যাচুইটি বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের স্কিম চালু না থাকলে আপনি অবশ্যই ক্ষতিপূরণ পাবেন। উচ্চ আদালতের রায়ে সিদ্ধান্ত রয়েছে যে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে (নিয়ম মেনে) যাওয়ার কারণে গ্র্যাচুইটি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে প্রতিবছরের জন্য প্রাপ্য প্রদেয় হবে ১৪ দিনের মজুরির সমপরিমাণ অর্থ। শ্রম আইন অনুযায়ী পদত্যাগের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্যতা হলো পূর্ণ পাঁচ বছর চাকরি করা। তবে গ্র্যাচুইটি ও ক্ষতিপূরণের মধ্যে হিসাব করে যেটা বেশি, সেটা পাবেন।
শ্রম আইনেরই ১৩২ ধারার বিধানমতে, বঞ্চিত ব্যক্তি তাঁর প্রাপ্য বকেয়া মজুরি ও অন্যান্য পাওনাদি (গ্র্যাচুইটিসহ) আদায়ের জন্য শ্রম আদালতে সরাসরি মামলা করতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে ওই অর্থ প্রদেয় হওয়ার বঞ্চিত হওয়ার দিন থেকে ১২ মাসের মধ্যে মামলা করতে হবে। যেহেতু আপনি এখনো মামলা করেননি, কাজেই আপনাকে বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ (বিধি ১১৩) অনুযায়ী নোটিশ দিতে হবে।
আপনি বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ অনুযায়ী লিখিতভাবে প্রতিষ্ঠানের মালিককে জানান। এ ক্ষেত্রে মালিককে ১০ দিনের মধ্যে দাবি নিষ্পত্তি করতে হবে। যদি মালিক ব্যর্থ হন, তাহলে আপনি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক অথবা তাঁর পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত পরিদর্শককে তা লিখিতভাবে জানাতে পারবেন। সুরাহার জন্য বরাদ্দ সময় পদক্ষেপ গ্রহণসহ ৫০ দিন (২০ দিন পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ও ৩০ দিন মীমাংসার জন্য)। মহাপরিদর্শক বা তাঁর পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত পরিদর্শক শুনানি করে তার ভিত্তিতে লিখিত সিদ্ধান্ত দেবেন। এ সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত হলে পক্ষদের জন্য তা বাধ্যতামূলক হবে। আর পরিদর্শক কোনো সিদ্ধান্ত এককভাবে দিলে সংক্ষুব্ধ পক্ষ সিদ্ধান্ত দেওয়ার তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে শ্রম আদালতে মামলা করতে যেতে পারবেন।
তবে আপনার নিয়োগপত্রের শর্ত এবং প্রতিষ্ঠানের বিধি না দেখে সুনির্দিষ্ট কোনো পরামর্শ দেওয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আপনি অভিজ্ঞ কোনো আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে।
ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)
ডাক ঠিকানা: প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন
২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫।
(খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA