দেশের যে ১০টি স্থানে পর্যটকেরা বেশি ভ্রমণ করেন

দেশের পর্যটনশিল্পের হালহকিকত নিয়ে পরিচালিত জরিপের ফল প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। কোথাও ঘুরতে গিয়ে যাঁরা এক রাতের বেশি সময় বাইরে কাটিয়েছেন, জরিপে তাঁদেরই পর্যটক হিসেবে ধরেছে বিবিএস। ‘ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট’ শীর্ষক জরিপটিতে দেশে পর্যটকের সংখ্যা ও ভ্রমণ ব্যয়ের পরিমাণ, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পর্যটন খাতের অবদান ইত্যাদি সম্পর্কে যেমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তেমনই কোন কোন স্থানে মানুষ বেশি ঘোরেন, তারও তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে শুধু ভ্রমণের উদ্দেশ্যেই পর্যটকেরা গেছেন এমন ২৪টি স্থানের তালিকা রয়েছে। ছবির গল্পে থাকল প্রথম ১০টি জনপ্রিয় পর্যটনস্থানের কথা।

১০. বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা, ঢাকা

বনের বাঘ-সিংহ খাঁচায় এসে পেয়েছে বাহারি নাম। বেঙ্গল টাইগার দম্পতির নাম যেমন টগর আর বেলি, তেমনি ফাল্গুনী নামটি জলহস্তীর। তাদের দেখতেই বছরজুড়ে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে থাকে রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানায়। দুটি লেকসহ ১৮৬ একরের এই চিড়িয়াখানায় শতাধিক প্রজাতির প্রায় ৩ হাজার পশুপাখি আছে। করোনা সংক্রমণের আগে প্রতিদিন গড়ে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল ১২ হাজারের মতো।

জাতীয় চিড়িয়াখানায় গেলে এই জলহস্তীদের দেখা মিলবে

৯. সুন্দরবন

সুন্দরবনের সৌন্দর্য দেশের প্রকৃতি ও প্রাণীপ্রেমী মানুষকে সব সময় আকর্ষণ করে। তাই সমুদ্রের তীরবর্তী ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন দেখতে দেশের আনাচকানাচ থেকে পর্যটকেরা ছুটে যান।

প্রকৃতি ও প্রাণীপ্রেমী পর্যটকেরা সুন্দরবন দেখতে দেশের আনাচকানাচ থেকে

৮. রাঙামাটি

রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু, রাজবন বিহারসহ জেলা সদরের বিভিন্ন পর্যটনস্থানে বছরজুড়েই পর্যটকেরা ভ্রমণ করেন।

রাঙামাটির পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ ঝুলন্ত সেতু

৭. বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ

বাংলাদেশের লোকশিল্পের সংরক্ষণ, বিকাশ ও সর্বসাধারণের মধ্যে লোকশিল্পের গৌরবময় দিক তুলে ধরার জন্য ১৯৭৫ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের উদ্যোগে সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে সরকার। এখানে সংরক্ষিত রয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কারুশিল্পীদের হাতে তৈরি ঐতিহ্যবাহী প্রায় পাঁচ হাজার নিদর্শন।

বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরে প্রায় পাঁচ হাজার নিদর্শন আছে

৬. সাজেক উপত্যকা, রাঙামাটি

সাজেক উপত্যকার অবস্থান রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় হলেও যেতে হয় খাগড়াছড়ি হয়ে। পাহাড়ের চূড়ায় সাদা মেঘের আনাগোনা সাজেককে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। পর্যটকদের জন্য এখানে শতাধিক রিসোর্ট ও কটেজ গড়ে উঠেছে।

জুমের ফসল বিক্রি করতে পর্যটনকেন্দ্রে যাচ্ছেন নারী ও কিশোরীরা। সাজেক রুইলুই পুলিশ ক্যাম্প এলাকা থেকে তোলা

৫. বান্দরবান

মেঘ জমে থাকা পাহাড়চূড়া আর ঝুরি ঝরনার প্রশান্ত সৌন্দর্যে ডুব দিতে বান্দরবানে যান পর্যটকেরা। এখানকার নীলাচল থেকে নীলগিরি, মেঘলা থেকে মিরিঞ্জা পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান।

নীলগিরির পাহাড় আর মেঘ মিলেমিশে একাকার

৪. শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার

শ্রীমঙ্গলে সবুজ চা-বাগানের পাশাপাশি অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান যেমন আছে, তেমনি পাঁচ তারকা হোটেলসহ গড়ে উঠেছে অসংখ্য মানসম্পন্ন রিসোর্ট। বছরজুড়ে পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় থাকা শ্রীমঙ্গল জনপ্রিয়তায় চতুর্থ।

শ্রীমঙ্গলে ঘুরতে আসা পর্যটকদের আকর্ষণ সবুজে ঘেরা চা-বাগান

৩. কুয়াকাটা, পটুয়াখালী

একই স্থান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগের বিরল সমুদ্রসৈকত পটুয়াখালীর কুয়াকাটা। পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় জায়গাটি তিন নম্বরে রয়েছে।

সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগের বিরল সমুদ্রসৈকত পটুয়াখালীর কুয়াকাটা

২. পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম

সাগরের বুকে অস্তমিত সূর্যের ম্রিয়মাণ আলোর রূপ দেখতে কিংবা বিশুদ্ধ বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকে ছুটে যান চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে। সৈকতের পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধনের কারণে বেড়েছে পর্যটকও।

পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত

১. কক্সবাজার

দেশের পর্যটকদের মধ্যে সর্বাধিক মানুষ ভ্রমণ করেন কক্সবাজারে। কক্সবাজারকে এ কারণে ‘পর্যটন রাজধানী’ও বলা হয়। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের নোনাজলে পা ভেজাতে বছরজুড়েই পর্যটকদের আনাগোনা। টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কও অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষদের পছন্দের জায়গা। এ ছাড়া কক্সবাজারে আছে নানা পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের নোনাজলে পা ভেজাতে বছরজুড়েই পর্যটকদের আনাগোনা থাকে

আরও যেসব জায়গায় বেশি যান মানুষজন

মেহেরপুরের মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ, কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন ও সিলেটের জাফলং, কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় অবস্থিত বাউলসম্রাট ফকির লালন শাহের মাজার, ঢাকার লালবাগ কেল্লা, দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দির, বগুড়ার মহাস্থানগড়, খাগড়াছড়ি, নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, সিলেটের সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখাল, সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রাতারগুল ও বিছনাকান্দি, বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ।