অফিসে যত কাজই করুন না কেন, দুপুরের খাবার কিন্তু খেতেই হয়। নইলে কাজ করার শক্তি আসবে কী করে? খাওয়ার ফাঁকে দম ফেলার ফুরসতও কিন্তু মেলে। এ কারণে অফিসের কর্মীদের জন্য দুপুরের খাওয়ার সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। তাই বলে দুপুরের খাওয়ার সময় মানে শুধু পেট ভরানোর বিষয় নয়; সুস্থ থাকার জন্য খাওয়ার আগের সময়টাকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কর্মক্ষেত্রে ভালো একটি দিন কাটানোর জন্য কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে খাবার যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ভেতর থেকে ভালো থাকার বা মানসিকভাবে ভালো থাকার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। ভেতর থেকে সুস্থ না থাকলে মানসিক চাপ বা ক্লান্তি বাইরে ফুটে ওঠে। তাই কাজ করতে করতে ক্লান্তি অনুভব করলে আপনার ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের সামনে থেকে কিছুটা বিরতি নিতে পারেন। এতে শরীরে কিছুটা শক্তি ফিরে পাবেন এবং মানসিক প্রশান্তি আসবে। এ ছাড়া আপনার কাজের রুটিনে কিছুটা পরিবর্তন করতে পারেন। দুপুরের খাবারের বিরতির চিন্তার পরিবর্তে নিজেকে অনুপ্রাণিত করার কিছু উপায় ভেবে দেখতে পারেন। তেমন কয়েকটি উপায় সম্পর্কে জেনে নিন:
একটু হাসি-গল্প
মনে রাখবেন, কাজ থেকে ফুসরত কেবল শারীরিক নয়, এটি মানসিক বিষয়। দুপুরের খাওয়ার বিরতির আগে সহকর্মীর সঙ্গে মজার কোনো বিষয়ে কথা বলে একটু হাসুন। এই খোশগল্প বা আলাপকে সোশ্যালাইজিং বা সামাজিক সম্পর্ক বলে। ছোট একটু বিরতিতে যেকোনো বিষয়ে সহকর্মীর সঙ্গে কথাবার্তার বিষয়টি সম্পর্ক যেমন ভালো করে, তেমনি কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়। এতে দ্রুত মানসিক বিরতি নেওয়া হয়।
হালকা নাশতা
দুপুরে ভারী কিছু খাওয়ার পরিকল্পনা করছেন? পেট পুরে খেয়ে শরীরে বাড়তি শক্তি জোগানোর পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন। দুপুরে খেতে যাওয়ার আগে হালকা নাশতা করে নিতে পারেন। এতে সারা দিনে অল্প অল্প করে পাঁচবারের খাবার যে নিয়ম, সেটি আপনার জন্য মানা সহজ হবে। বেশিক্ষণ না খেয়ে থাকার বদলে হালকা নাশতায় শরীরে প্রোটিনের জোগান দেবে এবং শরীরকে কর্মক্ষম রাখবে। যেদিন কাজের তাড়াহুড়োর কারণে নাশতা করতে পারেন না, সেদিন একবারে না খেয়ে অল্প পরিমাণে খেতে পারেন।
কাজের পরিকল্পনা
অফিসে যাঁরা বেশি পরিশ্রম করেন, তাঁরা কাজের বিষয়টি দুভাগে ভাগ করে নেন। একটি অংশ করেন দুপুরের খাওয়ার আগে এবং আরেকটি খাওয়ার পর। অনেকেই দুপুরের খাওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ কাজ জমিয়ে রাখেন। কিন্তু মনে রাখবেন, দুপুরের খাওয়ার আগেই শরীর ও মনে শক্তি থাকা অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সেরে ফেলা ভালো। তা না হলে সব কাজ ঠিকমতো এগিয়ে নিতে পারবেন না।
হালকা ব্যায়াম
কাজকর্মে মনোযোগ দেওয়ার অর্থ এই নয় যে আঠার মতো সারাক্ষণ ডেস্কে বসে থাকতে হবে। দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করলে কোমরে ব্যথা হতে পারে। নোপানি ইনস্টিটিউট অব প্রফেশনাল স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক এবং ব্যথা, ফিজিক্যাল থেরাপি ও স্পোর্টস ইনজুরি বিশেষজ্ঞ দলিলুর রহমান বলেন, মানবদেহের কলাকৌশল চলাচলের মধ্যে নিহিত। অর্থাৎ শরীরটা টানা ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা বসে বা দাঁড়িয়ে থাকার উপযোগী হয়ে তৈরি হয়নি। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির অতিমাত্রায় ব্যবহার, কাজের পরিবেশ, কর্মক্ষেত্রের কর্মকৌশলের জন্য দীর্ঘক্ষণ সঠিক দেহভঙ্গি না মেনে নিষ্ক্রিয় বা স্থিতিশীল অবস্থায় রাখার কারণে শরীরে বিভিন্ন রোগ বা সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণে কর্মীরা বিভিন্ন রকম ব্যথা, অস্বস্তি, অনুভূতিজনিত সমস্যা, শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি, অসাড়তা, মাথাব্যথায় আক্রান্ত হচ্ছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে কর্মীরা চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। দুপুরে খেতে যাওয়ার আগে অন্তত পাঁচ মিনিট হাঁটুন বা কিছুক্ষণ হালকা ব্যায়াম করে নিতে পারেন।
ইতিবাচক কাজ
যখন কাজ শুরু করেন, অনেকেই কম্পিউটারে সব মনোযোগ দিয়ে দেন। চাপমুক্ত থাকতে মাঝেমধ্যে কিছুটা বিরতি নিলে ভালো। খেতে যাওয়ার আগে ইতিবাচক কোনো বিষয়ে মনোযোগ দিন। সামান্য কিছু পরিবর্তন হয়তো আপনার মধ্যে আবার শক্তি জোগাতে পারে। যদি কাজে মনোযোগ দিতে না পারেন, তবে কিছুটা উচ্চ বিটের গান শুনতে পারেন। কাজে প্রশান্তির জন্য গান শোনাটা কাজে দিতে পারে। বিশেষ করে দুপুরে খেতে যাওয়ার আগে মনে প্রশান্তি আনতে পারে।