শহর থেকে খানিকটা দূরে আমাদের বাড়ি। আমাদের সঙ্গে দাদিও থাকেন। করোনাভাইরাস যখন পুরো এলাকাটি তছনছ করে ফেলছে, তার আগে থেকেই আমরা সচেতন।
এমন অবস্থায় হঠাৎ করেই দাদি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাঁর জ্বর, সর্দি, শরীর ব্যথা, সামান্য কাশি ও হালকা শ্বাসকষ্ট দেখা দিল। বাবা টেলিমেডিসিনে ফোন করে দাদির জন্য ওষুধ আনালেন। দাদি একটুও সুস্থ হলেন না।
দাদিকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় দিন কাটতে লাগল আমাদের। বয়স হয়েছে তাঁর, তার ওপর ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টের রোগী। এমন অবস্থায় বাবা বিশেষ নম্বরে ফোন করলে কজন লোক বাড়িতে এলেন। তাঁরা দাদির কফ ও নাকের ভেতর থেকে কী যেন নিয়ে চলে গেলেন এবং বলে গেলেন, ‘আমরা কিছু না জানানো পর্যন্ত সবাই আলাদা থাকবেন। বাইরে বের হবেন না। বাইরের কাউকে বাসায় ঢুকতেও দেবেন না।’
ভয়ে সবাই কাতর হয়ে পড়লাম। দাদির বেশ কষ্ট হচ্ছিল। প্রায় না ঘুমিয়েই সেই রাত পার করলাম। সকাল পেরিয়ে দুপুর এল। আমরা দাদির টেস্টের রেজাল্টের অপেক্ষায় থাকলাম।
সময় কাটাতে বাবার মোবাইলটি নিয়ে গেম খেলছিলাম। হঠাৎ একটি মেসেজ এল। তাতে লেখা, ‘ইয়োর করোনা টেস্ট ইজ নেগেটিভ’। আমি হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম। পাশের ঘর থেকে বাবা এসে মেসেজটি দেখলেন। তাঁর চোখ দিয়েও জল গড়াল। খানিক বাদে আমাকে দেখে হেসেও উঠলেন! আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না।
বাবা বললেন, ‘আরে বোকা, তোমার দাদির করোনা হয়নি। টেস্ট নেগেটিভ মানে খারাপ কিছু নয়। পজিটিভ লিখলে খারাপ কিছু, মানে তাঁর করোনা সংক্রমণ হয়েছে।’
এক মুহূর্ত দেরি না করে বাবা আমাকে নিয়ে দাদির রুমে গেলেন। আমি দাদিকে জড়িয়ে ধরলাম। দাদির মুখে হাসি ফুটে উঠল।
অষ্টম শ্রেণি, রংপুর জিলা স্কুল, রংপুর