প্নাচীনকাল থেকেই মধু বেশ জনপ্রিয়। পৃথিবীজুড়েই মধুর ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে আয়ুর্বেদমতে, যেকোনো একটি ফুলের মধুর চেয়ে বিভিন্ন ফুলের মধুর সমন্বয় বেশি কার্যকর। কারণ, তাতে উপকার পাওয়া যায় নানা ফুলের নানা উপকরণ থেকে।
প্নাচীনকাল থেকেই মধু বেশ জনপ্রিয়। পৃথিবীজুড়েই মধুর ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে আয়ুর্বেদমতে, যেকোনো একটি ফুলের মধুর চেয়ে বিভিন্ন ফুলের মধুর সমন্বয় বেশি কার্যকর। কারণ, তাতে উপকার পাওয়া যায় নানা ফুলের নানা উপকরণ থেকে। শতফুলি মধু (নিদেনপক্ষে ১০০টি ফুলের মধুর সমন্বয়) যেমন রূপচর্চার জন্য অতুলনীয়, তেমনি পুষ্টিগুণেও অনন্য। ভেতর থেকে ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতে প্রতিদিন মধু খাওয়া যেতে পারে। ১ গ্লাস গরম দুধে ২ চা-চামচ মধু আর ৩-৪ টি জাফরান গুলে খেয়ে নিন। এতে ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল, তিন মাসের মধ্যে। এ ছাড়া ১ চা-চামচ মধুর সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে নিন সমপরিমাণ। কোনো পানি না মিশিয়ে খেয়ে নিন এই মিশ্রণ, রোজ সকালে, অবশ্যই ভরপেট নাশতার পর। এটিও উপকারী। তবে প্রথমটিই বেশি কার্যকর বলে জানালেন হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন কেয়ার ক্লিনিকের আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমী।
ত্বক তৈলাক্ত হলেই যে তা আর্দ্র হবে, এমনটা কিন্তু নয়। তৈলাক্ত ত্বকও আর্দ্রতার অভাবে নিষ্প্রাণ হয়ে পড়তে পারে। তৈলাক্ত ত্বকে তুলসী পাতা আর মধু প্রয়োগ করতে পারেন। ১ কাপ তুলসী পাতা নিন। তা থেকে রস বের করুন। মোটামুটি ১ টেবিল চামচ পরিমাণ রস হবে। রস ছেঁকে নিন। রস ছেঁকে নিয়ে পাতার বাকি অংশটুকু ফেলে দেবেন না। তুলার সাহায্যে রসটুকু মুখে লাগিয়ে নিন টোনারের মতো। ৫-৭ মিনিট পর রস শুকিয়ে এলে এবার পাতার সেই বাকি অংশের সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিন ১ চা-চামচ পরিমাণ। এই মিশ্রণই হয়ে গেল একটি ফেসপ্যাক। ফেসপ্যাকটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ১ দিন এভাবে মধু দিয়ে রূপচর্চা করতে পারেন। তবে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বেশি হলে সপ্তাহে ২-৩ দিনও ব্যবহার করতে পারেন।
ত্বক মিশ্র প্রকৃতির হলে একেক মৌসুমে একেক রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। তবে সঠিক নিয়মে ভালো মানের মধু ত্বকে প্রয়োগ করলে তা স্বাভাবিক ত্বকের মতোই স্বস্তিদায়ক হয়ে উঠতে পারে। মিশ্র ত্বকের জন্য দুইভাবে কাজে লাগাতে পারেন মধু। সপ্তাহে ১ দিন করে ব্যবহার করতে পারেন নিচের যেকোনো একটি উপায়ে। ১ কাপ পুদিনা পাতা (ডাল নয়) ধুয়ে চটকে নিন। এই রস তুলার সাহায্যে মুখের ত্বকে লাগিয়ে ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এবার ১ চা-চামচ মধুর সঙ্গে আধা চা-চামচ গোলাপজল মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি তুলার সাহায্যে একইভাবে মুখে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন। পুদিনা পাতা নিন ১ টেবিল চামচ। পাতা পিষে নিয়ে এর সঙ্গে মেশান ১ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি এবং ১ চা-চামচ মধু। কোনো পানি মেশাবেন না। মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।
শুষ্ক ত্বকেও ২টি আলাদা পদ্ধতিতে মধু প্রয়োগ করতে পারেন। চন্দনগুঁড়া নিন ১ চা-চামচ। গরুর দুধ গরম করে এর সঙ্গে মিশিয়ে নিন। চন্দন ভালোভাবে মিশে যেতে যে পরিমাণ দুধের প্রয়োজন হবে, ততটাই নিন। চন্দন ভালোভাবে মিশে যাওয়ার পর এই মিশ্রণে কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে নিন। এরপর ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। সপ্তাহে ২ দিন এভাবে ব্যবহার করতে পারেন মধুর প্যাক। চাইলে চন্দনগুঁড়ার পরিবর্তে সামান্য একটু চন্দন কাঠ দিয়েও একই নিয়মে প্যাকটি তৈরি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে দুধে চন্দন ভিজিয়ে রাখতে হবে কিছুক্ষণ। এরপর শিল–পাটায় ঘষে নিতে হবে। এই প্যাক ত্বকে উজ্জ্বলতা আনে, কালচে ছোপ দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বকে বলিরেখা পড়তে দেয় না। কাঁচা হলুদের রস ভালোভাবে জ্বাল দিয়ে ফুটিয়ে নিন। রস ঘন হয়ে এলে নামিয়ে নিন। এবার ১ চা-চামচ রস নিয়ে এর সঙ্গে মিশিয়ে নিন ১টি ডিমের কুসুম ও আধা চা-চামচ মধু। মিশ্রণটি সপ্তাহে ১ বার মুখে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিটের জন্য। ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হলে, ঠোঁটের আশপাশের বা নাকের চামড়া শুষ্ক হলে সপ্তাহে ২-৩ দিন প্রয়োগ করতে পারেন। ভালোভাবে জ্বাল দেওয়া হলুদের রস ঠান্ডা করে কাচের মুখবন্ধ বয়ামে পুরে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন দিন পনেরোর জন্য। ত্বককে আর্দ্র রাখতে এই প্যাক দারুণ কার্যকর।