আমাদের ছোট-বড় স্বপ্ন পূরণে ছায়ার মতো পাশে থাকেন মা। কখনো কখনো মায়ের অনুপ্রেরণাতেই আমরা স্বপ্নের ক্যাম্পাসে পা রাখি, পছন্দের পেশা বেছে নিই কিংবা শুরু করি সাহসী কোনো উদ্যোগ। কিন্তু স্বপ্নপূরণের সঙ্গী, মাকে ধন্যবাদ দেওয়া হয়ে ওঠে না। আজ মা দিবস উপলক্ষে তাই মায়ের কাছে খোলা চিঠি নিয়ে বিশেষ আয়োজন।
‘চন্দ্র যে তুই!
বাবা, সূর্য যে তুই;
আমারই আঁখিতে তারা যে তুই—
খুশি হয় মন মোর তোকে পেলে।’
মনে আছে, মা? গানের কথাগুলোয় আজও মিশে আছে আমাদের মধুর স্মৃতি। ছোটবেলায় গান গাইতে বা ছবি আঁকতে ইতস্তত বোধ করতাম। আত্মবিশ্বাস ছিল না। তুমিই আমাকে হাত ধরে শিখিয়েছ, কীভাবে সবুজ আয়তক্ষেত্রের মাঝখানে লাল বৃত্ত আঁকলে বাংলাদেশের পতাকা হয়। সপ্তসুরের মাধ্যমে কীভাবে সুর, তাল, লয় ঠিক রাখতে হয়, তা তো তোমার কাছেই শিখেছি। যখন ঠিকঠাক তোমার কথামতো কাজ করতাম, তুমি কী খুশিই না হতে! নিজে না খেয়ে আমার জন্য রেখে দিতে টাকি মাছের টুকরাটা। মহানন্দে খেতে গিয়ে একবার গলায় কাঁটা বিঁধে কী এক বিপত্তিই না হলো!
২০১৫ সালের শেষ দিকে যখন নোয়াখালী জিলা স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাই, গণিতের অংশটা একটু খারাপ হওয়ার পরও তুমি সাহস জুগিয়েছিলে। পরে দেখি টিকে গেছি স্কুলে! ২০১৬ সালের শেষের দিকে গণিত অলিম্পিয়াড হলো। আমি যেতে চাইনি, কারণ হাতে ছিল মাত্র এক দিন। তোমার উৎসাহেই ফেনীতে গেলাম তোমার সঙ্গে। মনে আছে মা? বিজয়ীদের মধ্যে যখন আর মাত্র একজনের নাম ঘোষণা বাকি, আমি তখন হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। তুমি ঠিকই ঈশ্বরের নাম জপছিলে। মাইকে আমার নাম ঘোষণার পর তোমার সে কী আনন্দ!
২০১৭ সালেও তুমিই আমাকে নিয়ে গিয়েছিলে প্রথম আলোর ভাষা প্রতিযোগে। বলেছিলে, ‘বাবা, তুই পারবি। শুধু ভরসা রাখ!’ তখন ভাবতেও পারিনি, ২০১৮ সালে এই প্রতিযোগিতায়ই আমি ‘সেরাদের সেরা’ হব! তোমার অনুপ্রেরণায়, তোমার উৎসাহে কমনওয়েলথের রচনা প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ পুরস্কার পেয়েছি দুবার। এই সব পুরস্কার তোমার।
করোনা আমাদের জীবনে বড় ধাক্কা দিয়ে গেছে। বাবা দুই বার হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়েছে। আমরা হারিয়েছি প্রিয় মেসোমশাইকে। সবাই ভেঙে পড়লেও তুমি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করে গেছ আপ্রাণ।
আমি তোমার ছোট বাবাটাই আছি, ছিলাম, থাকব।