এ কথা সবার জানা যে আধুনিক পৃথিবীতে চলতে গেলে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ পাওয়া ইংরেজি ভাষার শিক্ষকের কোনো বিকল্প নেই। ঠিক এই জায়গাতেই আমরা পিছিয়ে আছি। ছাত্রজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে তো বটেই, উচ্চ শিক্ষাতেও দক্ষ ইংরেজি ভাষার শিক্ষকের সংকট বেশ তীব্র।
ইংরেজি জানা শিক্ষক হয়তো অনেক পাওয়া যাবে, কিন্তু ইংরেজি শেখানোর ক্ষমতাসম্পন্ন শিক্ষক? এক কথায় বেশই অপ্রতুল। আর ঠিক এ জন্যই টিচিং ইংলিশ টু স্পিকারস অব আদার ল্যাংগুয়েজেস (টিইএসওএল) আর ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টিচিং (ইএলটি) নামের স্নাতকোত্তর কোর্স বা প্রোগ্রামগুলোর লক্ষ্য যুগোপযোগী, দক্ষ ও স্বাবলম্বী ইংরেজি ভাষার শিক্ষক তৈরি করা।
শিক্ষাজীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে ইংরেজি ভাষা শেখার বিষয়টিতে নানা অসংগতি চোখে পড়েছে। তাই বিজনেস বা করপোরেট পেশার মোহ ত্যাগ করে একজন দক্ষ ইংরেজি শিক্ষক হওয়ার জন্য তীব্র আত্মপ্রত্যয় অনুভব করেছিলাম। সজ্ঞানেই স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলাম ভবিষ্যতে ইংরেজি ভাষায় শিক্ষকতার পেশা নিয়ে। এর পর থেকেই আমি নানাভাবে খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম যে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক (বিবিএ) হওয়ার পর কোথায় পড়া উচিত। অনেক যাচাই–বাছাই শেষে আমি ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব ল্যাঙ্গুয়েজ (বিআইএল)–এ টিইএসওএল প্রোগ্রামে ভর্তি হই। সেখান থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পড়াশোনা শেষ করি। সৌভাগ্যক্রমে আমার ভালো ফলাফলের কারণে আমি বিআইএলে ইংরেজি ভাষার শিক্ষক হিসেবে যোগ দিই।
শিক্ষকতায় আসার পর থেকেই আমি আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি যে প্রত্যেক সম্ভাবনাময় ইংরেজি শিক্ষকদের টিইএসওএলে ডিগ্রি থাকা আবশ্যক। কেন তা ব্যাখ্যা করছি।
টিইএসওএল বা টেসল প্রোগ্রামটি নানা দিক থেকেই অনন্য। এর প্রধান শক্তি হলো, এটি নন নেটিভ ( এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ) দেশের সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক কাঠামোর কথা চিন্তা করে পরিচালিত হয়। পাঠ্যক্রমের প্রতিটি উপাদান শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি (অ্যাটিচ্যুড) ও প্রেরণাকে (মটিভেশন) প্রাধান্য দেওয়া হয়। গোটা কোর্সজুড়ে শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ভাষা শিক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিক বিষয়গুলো হাতে–কলমে প্রয়োগ করার প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকে। সিলেবাস ও পাঠসূচি পরিকল্পনা করা, পাঠ্যবই ও নানা রকম কোর্স উপাদান তৈরি করা, সেসব ক্লাসে প্রয়োগ করার নানা কৌশল রপ্ত করা, পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি, উত্তরপত্র মূল্যায়নের আধুনিক পদ্ধতিগুলো শেখা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ পাওয়া যায়। সে অনুসারে শিক্ষার্থীদের স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করতে হয়। শুধু তা–ই না, শিক্ষার্থীদের একে অপরের ক্লাসে উপস্থিত থেকে ‘পিয়ার রিভিউ’ করে তার আলোকে প্রতিবেদন লিখতে হয়। এর ফলে সবাই ইংরেজি ভাষা শিক্ষা দেওয়ার ভালো-মন্দ ব্যবহারিক দিকগুলো সম্পর্কে সরাসরি জানতে পারে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ইংরেজি শিক্ষকের সহকারী হিসেবে কাজ করে তাঁদের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করতে শেখে।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এর সমৃদ্ধ থিসিস কোর্স, যেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের তাঁদের পছন্দ মাফিক নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর নিয়মিত গবেষণা করে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার শব্দের থিসিস জমা দিতে হয় এবং একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সামনে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে তা উপস্থাপন করতে হয়। আমার মতে, এটাই একজন স্নাতককে তাঁর ক্যারিয়ারের জন্য তৈরি করে দেয়; তাঁকে কোথাও আটকে থাকতে হয় না। তার মানে দাঁড়াচ্ছে টিইএসওএল একজন শিক্ষার্থীকে নেহাতই শিক্ষক নয়, বরং একজন পরিপক্ব শিক্ষাবিদে পরিণত হতে সহায়তা করে।
শুরুতেই বলেছি, আমি ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব ল্যাঙ্গুয়েজ (বিআইএল) থেকে টিইএসওএলে মাস্টার্স করেছি। এখানে আমার চার সেমিস্টারের অভিজ্ঞতা থেকে অসংকোচে বলতে পারি বিআইএল এই মুহূর্তে দেশে মানসম্পন্ন টিইএসওএল পরিচালনা করছে। বিষয়বস্তুর আধুনিকতা, শিক্ষাদান পদ্ধতি আর শিক্ষকদের যোগ্যতা সব মানদণ্ডেই।
২০১৩ সাল থেকে চালু হওয়া এই প্রোগ্রামের আওতায় এখন পর্যন্ত ৮০ জনের বেশি শিক্ষার্থী স্নাতক হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন। এমনকি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শিক্ষা সংস্থায় দক্ষতার সঙ্গে টিচার ট্রেইনার, কারিকুলাম ডিজাইনার, ম্যাটেরিয়াল ডেভেলপার, গবেষক হিসেবেও সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলছেন। ইংরেজি ভাষার শিক্ষক হিসেবে দেশে বা বিদেশে পেশা গড়তে চাইলে বিআইএলের এমএ ইন টিআইএসওএল বেশ উপযুক্ত একটি কোর্স।
লেখক: ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব ল্যাঙ্গুয়েজেসের শিক্ষক