হৃদ্রোগ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ ছাড়া ক্যানসারেরও বড় কারণ ধূমপান ও তামাক। তবে তামাক শুধু বিড়ি-সিগারেটেই ব্যবহৃত হয় না, বরং এর রয়েছে বহু রূপ। জর্দা, গুল, সাদাপাতা ইত্যাদি তামাকের ভিন্ন ভিন্ন রূপ এবং এগুলোও ক্ষতিকর। তামাকের ধোঁয়ায় দুই থেকে চার হাজার রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যার মধ্যে ৬০টির বেশি কারসিনোজেন বা ক্যানসার সৃষ্টিকারী পদার্থ। যেমন অ্যারোমেটিক অ্যামাইনো, নাইট্রোসামাইন, পোলোনিয়াম, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিক, র্যাডন ইত্যাদি। নিকোটিন সরাসরি ক্যানসারের সঙ্গে জড়িত না থাকলেও দেহের কোষের অ্যাপোপটসিস বা স্বাভাবিক মৃত্যুকে বাধাগ্রস্ত করে এবং ক্যানসার কোষে এনজিওজেনেসিস বা রক্তনালি সৃষ্টিতে সাহায্য করে। ফলে ক্যানসার বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। তামাক বা ধূমপানের ক্ষতির মাত্রা নির্ভর করে ব্যবহারের পরিমাণ ও কত দিন ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে, তার ওপর। প্রায় ৪০ ভাগ ক্যানসারের সঙ্গে তামাকের সম্পর্ক আছে।
ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ২০ গুণ বৃদ্ধি করে ধূমপান। গবেষণা বলছে, ধূমপান ত্যাগের ১০ বছরের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসারে মৃত্যুর ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে। যাঁরা ধূমপান করেন বা অন্য কোনোভাবে তামাক সেবন করেন, তাঁদের মধ্যে যেসব ক্যানসার বেশি হয় তা হলো—ঠোঁট, মুখ, জিহ্বার ক্যানসার; ল্যারিংস বা স্বরনালি, ফ্যারিংস, খাদ্যনালি, পাকস্থলী, প্যানক্রিয়াস, কিডনি, মূত্রথলি, কোলন, লিভার ও জরায়ুর ক্যানসার।
ধূমপান বা জর্দা, গুল, সাদাপাতা ছাড়ার জন্য আপনার সদিচ্ছাই যথেষ্ট। কীভাবে এই মন্দ অভ্যাস ছাড়বেন, এখানে রইল তার সাতটি পরামর্শ—
যেখানে বা যাঁদের সঙ্গে তামাক গ্রহণ করেন, তাঁদের এড়িয়ে চলুন।
যেসব পরিস্থিতিতে যেমন দুশ্চিন্তার সময় বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সময় তামাক বা সিগারেটের টান অনুভূতব হয়, সে সময় অন্য কোনো কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। যেমন একটি কাগজে আঁকিবুঁকি করুন বা কোনো কিছু যেমন চুইংগাম চিবাতে শুরু করুন।
তামাক একবার ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে, তা আর ধরবেন না। ‘আরেকবার খাব’—এমনটা কখনোই ভাবা যাবে না।
নিয়মিত ব্যায়াম শুরু করুন। এটি তামাকের নেশা ছাড়াতে সহায়ক।
ধ্যান, যোগ ইত্যাদি করার চেষ্টা করুন।
যাঁরা ধূমপান বা তামাক ব্যবহার ছেড়েছেন এবং যাঁরা অধূমপায়ী, তাঁদের সঙ্গে বেশি মেশার চেষ্টা করুন।
তামাক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে ভাবুন আর ছেড়ে দেওয়ার ফলে কী কী লাভ হচ্ছে, তা মনে মনে ভাবুন।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, রেডিওথেরাপি বিভাগ, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল