ডেনিমে তৈরি পোশাকের প্রধান বিষয় হচ্ছে, এতে ছেলেমেয়ের ভেদাভেদ খুব একটা নেই। পাশাপাশি কয়েক প্রজন্ম ধরে এর জনপ্রিয়তায় বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি। এর মূল কারণ হচ্ছে, ফ্যাশন চক্রে ফিরে আসা কখনোই একই রকম হয় না। সময় অনুযায়ী পরিবর্তনে ডেনিমে তৈরি পোশাক অতুলনীয়। এ জন্য বলা হয়, ফ্যাশনে ডেনিম কখনোই হারিয়ে যাওয়ার নয়। চলতি ফ্যাশন আর নতুনত্বের প্রয়োজনে এর রূপ বদল হয় নানা আঙ্গিকে। ছেলে ও মেয়েদের ফ্যাশনে (ইউনিসেক্স) চলতি ধারায় মানানসই পোশাক হচ্ছে ডেনিম কাপড়ে তৈরি জিনস। কারণ, এর রং থেকে শুরু করে পোশাকের ধরন ও ফিটের জন্য একই পোশাক ছেলেমেয়ে উভয়েই পরতে পারে নানাভাবে।
ডেনিমে তৈরি ক্যাজুয়াল শার্ট ও টি-শার্ট হচ্ছে সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এই দুটি পোশাক ছেলেমেয়ে উভয়েই ব্যবহার করতে পারে অনায়াসে। অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে ডেনিমের ক্ল্যাসিক নীল রং (ইনডিগো) এবং এর বিভিন্ন শেড। এই রংগুলো সবারই যেমন পছন্দ, তেমনই মানায়ও সবাইকে। স্টাইলেও রয়েছে অভিন্নতা। বেশ কয়েক বছর ধরে ডেনিম শার্টের ইউনিসেক্স ফ্যাশন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, যা এক দশক আগেও দেখা যায়নি। এর মধ্যে ভিন্টেজ লুকের ডেনিম শার্ট বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে তরুণ–তরুণীদের মধ্যে। শুধু প্রাচীন ঘরানার নয়, চেকের ক্যাজুয়াল শার্টও বর্তমানে তরুণীদের বেশ পছন্দ। স্টাইলে ভিন্নতা আনতে মেয়েরা এখন হরহামেশাই পরছে বড় মােপর (ওভারসাইজড) ডেনিমের চেক শার্ট, যা একসময় শুধু ছেলেদের পোশাক হিসেবেই বিবেচিত ছিল। শার্টের মতো ডেনিম টি-শার্টেও এসেছে বেশ কিছু পরিবর্তন; বিশেষ করে এর প্যাটার্নে। যেমন এর প্যাটার্নে এখন আর ছেলেমেয়ে বলে কিছু নেই। ঢিলেঢালা এই টি–শার্টগুলো একসময় শুধু র্যাপ গায়কদের পরতে দেখা গেলেও এখন সবারই বেশ পছন্দের। রং, মোটিফ ও ডিজাইনেও খুব একটা পার্থক্য দেখা যায়, এমন নয়। তবে এর মানে এই নয় যে মেয়েদের টি-শার্ট হারিয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে কিছু ডিজাইন সব সময়ই ইউনিসেক্স। যেমন নির্দিষ্ট কোনো ব্র্যান্ড, গানের দল বা বিশেষ কোনো প্রচার-প্রচারণার টি-শার্টে ছেলেমেয়ে ভেদাভেদ থাকে না।
তরুণ-তরুণীদের পছন্দের আরও দুটি ডেনিম পোশাক হচ্ছে সোয়েটশার্ট ও জ্যাকেট। চলতি ফ্যাশনে সোয়েটশার্ট দারুণ জনপ্রিয়; বিশেষ করে নিট ডেনিমের সোয়েটশার্ট। এর একটি বিশেষ কারণ হচ্ছে নিট ডেনিমের সোয়েটশার্টে নিজস্ব প্যাটার্ন রয়েছে এবং এ কারণে ছেলেমেয়ের সোয়েটশার্ট আলাদা করে বোঝার উপায় নেই। এ ধরনের সোয়েটশার্টের হাত এবং নিচের দিকের আলাদা রং বা ডিজাইনের রিব দেওয়া হয়, যার দরুন ছেলে বা মেয়ে উভয়েরই ফিট একই থাকে। আর ডেনিম জ্যাকেট এখন ক্ল্যাসিক ফ্যাশনের অংশ। বহু বছর ধরে নানা বয়সী ছেলেমেয়ে তাদের ফ্যাশন স্টেটমেন্টে ডেনিম জ্যাকেটকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে।
ছেলে ও মেয়েদের ডেনিমের তৈরি প্যান্টের নকশায় তেমন একটা ভিন্নতা থাকছে না। বিশেষ করে জগার ও সিগারেট জিনস। জগারের শুরু যদিও খেলার মাঠ থেকে, অর্থাৎ স্পোর্টস গার্মেন্টস হিসেবে। তাই শুরু থেকেই এটি ছিল ছেলে ও মেয়ে উভয়েরই পোশাক। এরপর যখন খেলোয়াড়দের সংগ্রহ থেকে এটি ব্যক্তিগত সংগ্রহে জায়গা করে নেয়, তখন ছেলেমেয়েদের জন্য আলাদাভাবে তৈরি হতো। বেশ কয়েক বছর ধরে এটি ছেলে–মেয়ে উভয়ের পোশাক হিসেবে ফ্যাশন ধারায় যোগ হয়েছে। তবে এই সংযোজনে জগারে এসেছে কিছু পরিবর্তন। যেমন কোমরে যোগ হয়েছে ইলাস্টিক এবং নিট ডেনিম কাপড়। আর ক্ল্যাসিক ফ্যাশনে সিগারেট জিনসে ছেলেমেয়ে বিভাজন থাকলেও, চলতি ট্রেন্ডে তা মুছে গেছে অনেকটাই। অনেকে অবশ্য একে স্ট্রেট ফিট জিনস বলতে বেশি আগ্রহী। কারণ, কোমর থেকে সোজা কাটের এই প্যান্ট ছেলেমেয়ে উভয়ের জন্য একই প্যাটার্নে তৈরি হচ্ছে।
দেশের তরুণদের ডেনিম চাহিদা মাথায় রেখে এপেক্স ফুটওয়্যারের লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ম্যাভেরিক দেশের বাজারে এনেছে নতুন ডেনিম সংগ্রহ, যেখানে প্রাধান্য পেয়েছে ডেনিমের বিভিন্ন ধরনের ওয়াশ। এ বিষয়ে এপেক্সের ব্র্যান্ড ও মার্কেটিং বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন বলেন, ডেনিমের প্রতি তরুণদের আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলেছে। ক্যাজুয়াল, সেমি ফরমাল পোশাক হিসেবে ডেনিমের চাহিদা বেড়েছে। বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে এপেক্স ফুটওয়্যারের লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ম্যাভেরিক ছেলেদের জন্য নতুন ডেনিম সংগ্রহ নিয়ে এসেছে। টিনটেড ওয়াশ, স্টোন ওয়াশ, সেন্ডব্লাস্টিং ও গ্রিন কাস্ট—এই চার ধরনের ওয়াশের ডেনিমে তৈরি হয়েছে সংগ্রহগুলো।