শিশুর শ্রোণিদেশে কাপড়ের তৈরি ডায়াপার, না অন্য কিছু পরাবেন—এই ভাবনায় দ্বিধান্বিত থাকেন অনেক বাবা-মা। আবার অনেক মা-বাবা মনে করেন, শিশুর প্যান্টের ভেতরে ডায়াপার পরিয়ে রাখার মানেই নিশ্চিন্ত থাকা। কিন্তু ছোট্ট শিশুর ক্ষেত্রে ডায়াপার বা যে পোশাকই পরানো হোক না কেন, সমস্যা যা হওয়ার তার ঝুঁকি একই। আর এখন বাচ্চাদের ডায়াপার পরানো খুবই প্রচলিত একটি ঘটনা। এটি কর্মজীবী মায়ের সময় যেমন বাঁচায়, তেমনই বাড়িঘর বা কাপড় নোংরা করা থেকেও মুক্তি দেয়। কিন্তু এটি ব্যবহারের সময়, নিয়ম ও পদ্ধতি না জানার কারণে শিশুর অস্বস্তি তো হয়ই, তা ছাড়া শিশুর ত্বকে নানা সমস্যা হয়। এমনকি ভেজা ডায়াপারের কারণে ঠান্ডা লেগে শিশু অসুস্থও হয়ে যেতে পারে। যে সমস্যাটি বেশি দেখা দেয়, সেটা হলো ডায়াপার র্যাশ বা ফুসকুড়ি। এই র্যাশ বাচ্চার জন্য অস্বস্তিকর ও কষ্টদায়ক।
আর তাই ডায়াপার কেনার সময় দেখতে হবে এর শোষণক্ষমতা, আরামদায়ক কি না এবং লিকপ্রুফ কি না। বিশেষ করে ভ্রমণের সময়, রাতে বাচ্চাকে ঘুমানোর সময়, আবার কেউ কেউ সারা দিন ডায়াপার পরিয়ে থাকেন। যখনই পরান না কেন, একটা দিকে খেয়াল রাখতে হবে, চার-ছয় ঘণ্টার মধ্যেই ডায়াপার পরিবর্তন করে ফেলতে হবে। আর বাচ্চা যদি প্রস্রাব বা পায়খানা করে, তাহলে তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিবর্তন করে দিতে হবে। ছেলেশিশুকে ডায়াপার পরানোর সময় সাবধানে পরাতে হবে যেন প্রস্রাব করলে তা গড়িয়ে ঠিকমতো শোষিত হতে পারে।
ডায়াপার র্যাশ ও করণীয়
শিশুর কোমল সংবেদনশীল ত্বক যখন বেশ কিছু সময় ধরে অথবা বারবার প্রস্রাব ও পায়খানার সংস্পর্শে আসে, তখন আর্দ্রতার কারণে ত্বকের
তৈলাক্ত প্রাকৃতিক স্তরের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। এতে ত্বক লালাভ চাকার মতো হয়ে ফুলে ওঠে অর্থাৎ ত্বকে ফুসকুড়ির মতো দেখা যায়। শিশুর নিচের পোশাক কাপড়ের কিংবা একবার ব্যবহারযোগ্য কোনো জিনিসেরই হোক না কেন, ডায়াপার র্যাশ উভয় ক্ষেত্রেই হতে পারে। যা-ই হোক, র্যাশ বা ত্বকের ফুসকুড়ি থেকে তেমন জটিলতা সৃষ্টি হয় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে অ্যালার্জি, এমনকি প্রস্রাবের নালিতে সংক্রমণ হতে পারে।
l প্রয়োজনে বারবার পোশাক বা ডায়াপার বদলে দিন। কোনোটাই বেশিক্ষণ ভেজা অবস্থায় রাখা উচিত নয়। ভেজা হলে যত দ্রুত সম্ভব ডায়াপার বদলে নিতে হবে।
ভ্রমণের সময় অতিরিক্ত ডায়াপার রাখুন।
l ডায়াপারের ওপর প্লাস্টিকজাতীয় প্যান্ট পরানো ঠিক হবে না। কারণ, প্লাস্টিক আবরণ আর্দ্রতাকে ভেতরে আটকে রাখবে। এটি ডায়াপার র্যাশকে আরও তীব্র করবে।
l যদি শিশুদের ডায়াপার বারবার পরিবর্তন করা হয়, তখন আর ডায়াপার অঞ্চলের পাউডার ব্যবহারের দরকার নেই। অনেকেরই ধারণা, ডায়াপার খোলার পর ছোট্ট শিশুকে বেবি লোশন এবং পাউডার লাগাতে হবে। আসলে এগুলো লাগিয়ে ডায়াপার র্যাশ প্রতিরোধ করা যায় না, বরং এতে ক্ষতি হয়। যেহেতু লোশন ও পাউডারের মধ্যে সুগন্ধি বস্তু ও অন্যান্য পদার্থযুক্ত থাকে, তাই এগুলোর কারণেও ত্বকে র্যাশ উঠতে পারে।
l ডায়াপার বদলানোর পর শিশুর শ্রোণিদেশ ও তলপেট কোমল সাবানের সাহায্যে পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। এভাবে প্রতিটি ডায়াপার বদলে দেওয়ার পর শিশুর ডায়াপার অঞ্চল পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে।
l ডায়াপার র্যাশ দ্রুত সেরে উঠবে যদি আক্রান্ত স্থানে খোলা বাতাস লাগতে দেওয়া যায়। এ জন্য ডায়াপার বদলে স্থানটি পরিষ্কার করার পর অন্তত ১০ থেকে ১৫ মিনিট ডায়াপার ছাড়া অবস্থায় রাখুন। র্যাশ বেশি হলে পুরোপুরি ভালো না হওয়া পর্যন্ত কয়েক দিন ডায়াপার না পরাই ভালো। চিকিৎসকের পরামর্শে জিঙ্ক অক্সাইডজাতীয় পেস্ট লাগালে তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়।