বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ—এ কথা বলছে ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফাউন্ডেশন। কিন্তু যাঁরা আক্রান্ত, তাঁদের ৫৭ শতাংশই জানেন না যে তাঁদের ডায়াবেটিস রয়েছে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের খাদ্যব্যবস্থা নিয়ে অনেকেরই ভুল ধারণা রয়েছে। তাদের জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাসে নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাবার নিয়ে অনেকের মনেই নানা ভুল ধারণা রয়েছে। কোন খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী, এ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে অনেক গবেষণা করা হয়েছে। ডায়াবেটিস নিয়ে যেসব ভুল ধারণা রয়েছে, সেসব সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো।
ডায়াবেটিস কি ছোঁয়াচে
না, ডায়াবেটিস কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। বিশেষ করে জিনগত কারণে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হতে পারে। প্রচলিত এসব ধারণায় বিশ্বাস না রেখে চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে নিন। যদি ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, তাহলে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন প্রণালির পরিবর্তন, নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মধ্যে থেকে নিজেকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে সম্পূর্ণ সুস্থ জীবনযাপন করা যায়।
মিষ্টি বেশি খেলে কি ডায়াবেটিস হয়
সরাসরি মিষ্টি খাওয়ার সঙ্গে ডায়াবেটিস হওয়ার কোনো যোগসূত্র নেই। মিষ্টি বেশি না খেলেও ডায়াবেটিস হতে পারে। আসলে পারিবারিক ইতিহাস, ওজন বৃদ্ধি, অস্বাস্থ্যকর খাবার, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা ইত্যাদি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। মিষ্টি বেশি খেলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ, মিষ্টি দ্রব্যে ক্যালরি বেশি আর এ কারণে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কিছুটা বাড়ে।
ইনসুলিন কি শেষ চিকিৎসা
ব্যাপারটা এমন নয় যে ইনসুলিন দেওয়া হচ্ছে মানে আপনার অবস্থা খুব জটিল। ইনসুলিন একজন ডায়াবেটিস রোগীর জীবনে যেকোনো সময়েই লাগতে পারে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায়, যেকোনো বড় অস্ত্রোপচারের আগে-পরে, কোনো গুরুতর রোগে হাসপাতালে থাকাকালীন বা মারাত্মক কোনো সংক্রমণের সময়, কিডনি বা যকৃতের ইত্যাদি জটিলতায় ইনসুলিনই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ চিকিৎসা। এ ছাড়া কোনো কারণে রক্তে শর্করা অনেক বেড়ে গেলেও ইনসুলিন দরকার হয়।
শ্বেতসারজাতীয় খাবার কি ক্ষতিকর
এর উত্তর হচ্ছে—না, মোটেই ক্ষতিকর নয়, বরং শ্বেতসার জাতীয় খাবার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য খুবই স্বাস্থ্যসম্মত। রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে শ্বেতসারের ভূমিকা অনেক বেশি। শ্বেতসার জাতীয় খাদ্যে শরীরের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি, ভিটামিন, খনিজ ও আঁশজাতীয় উপাদান রয়েছে, যা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর জন্য অত্যন্ত জরুরি। বেশি আঁশযুক্ত ফল ও শাকসবজি জাতীয় খাবার ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উত্তম। তবে প্রতিদিন কী পরিমাণ শ্বেতসার জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত, তা একজন পুষ্টিবিদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করে নেওয়া উচিত।
মিষ্টিজাতীয় সব খাবার ত্যাগ করতে হবে
এটি সত্যি নয়। আপনি যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন এবং মিষ্টান্ন যদি খেতে চান, তবে বিভিন্ন উপায়ে এই জাতীয় খাবার আপনার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। যেমন—
* মিষ্টিজাতীয় খাবার তৈরিতে কৃত্রিম চিনি ব্যবহার করা যেতে পারে।
* মিষ্টিজাতীয় খাবার খেলেও তা পরিমাণ কমিয়ে আনুন। যেমন দুই চামচ আইসক্রিম খাওয়ার পরিবর্তে এক চামচ খান।
* নিয়মিত খাওয়ার পরিবর্তে শুধু উৎসব বা অনুষ্ঠানে মিষ্টিজাতীয় খাবার গ্রহণ করুন।
* আর বেশি খাওয়া হয়ে গেলে একটু ব্যায়াম করে নিন।
কোন ফল কতবার, কী পরিমাণে খাবেন
অবশ্যই ফল স্বাস্থ্যকর খাদ্য। এতে আঁশ ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে; কিন্তু ফলে শর্করাও থাকে, যাকে অবশ্যই খাদ্যতালিকার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের সঙ্গে আলাপ করে ঠিক করুন, কোন ফল কতবার, কী পরিমাণে খাবেন। ডায়াবেটিস হলে পছন্দের সব খাবার পরিহার করতে হবে এটিও সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা পছন্দের খাবার অবশ্যই খেতে পারবেন, তবে তা তৈরিতে সামান্য পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন খাবারে তেলের পরিমাণ কমিয়ে আনা।
লেখক: বিআরবি হাসপাতালের পুষ্টিবিদ