আজ থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করল ডাক বিভাগের সদর দপ্তর ‘ডাকভবন’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি এর উদ্বোধন করেন। ডাকবাক্সের আদলে নির্মিত ডাক ভবনের নির্মাণ সম্পন্ন হয় দুই বছর আগে। দৃষ্টিনন্দন ভবনটি নিয়ে ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট প্রথম আলোর শনিবারের ক্রোড়পত্র ছুটির দিনে’তে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। ‘ডাকবাক্সে ডাক ভবন’ শিরোনামে লেখাটি ঈষৎ পরিমার্জন করে এখানে প্রকাশ করা হলো।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের প্রশাসনিক এলাকায় হাঁটতে হাঁটতেই দেখি ইয়া বড় লাল টুকটুকে এক ডাকবাক্স! কাগজে চিঠি না লেখার যুগেও এত বড় ডাকবাক্স! আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ল নবনির্মিত ‘ডাক ভবন’।
বেশ আগ্রহ নিয়েই প্রবেশ করলাম ভবনের ভেতরে। একদল শ্রমিক দ্রুত তালে কাজ করে যাচ্ছেন। নিচতলায় বিশাল বিশাল ডাকটিকিট দেয়ালে খোদাই করা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, সাত বীরশ্রেষ্ঠ—জাতীয় বীরদের কে নেই সেখানে। অল্প কথায় আমাদের বীরত্ব আর বীরসন্তানদের কীর্তিগাথা বর্ণনা করা হয়েছে যেন।
সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠে গেলাম। কথা হলো বেশ কজনের সঙ্গে। তাঁদের অনেকেই পরামর্শ দিলেন ভবনসম্পর্কিত তথ্যের জন্য মো. রিয়াজুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে। রিয়াজুল ইসলাম এই ভবন নির্মাণ প্রকল্পের একজন প্রকল্প পরিচালক। মুঠোফোনে ডাক ভবনের এমন লেটারবক্সে পরিণত করার স্থাপত্য চিন্তাটা সম্পর্কে জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, ধারণাটা ডাক অধিদপ্তরের (সাবেক) মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্রের। মূলত সে ধারণা মাথায় রেখেই স্থাপত্য নকশা তৈরি হয়েছে।
ডাক ভবনের স্থাপত্য নকশা করেছেন স্থপতি কৌশিক বিশ্বাস। তিনি বলেন, ভবনে যাতে ডাকঘরের একটা আবহ থাকে, তা চেয়েছিলেন সুধাংশু শেখর ভদ্র। আইডিয়া মূলত তাঁর। সেই ভাবনাকে স্থাপত্য নকশায় পরিণত করেন কৌশিক। এই ভবনের প্রকৌশল উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান শহীদুল্লাহ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস সেই নকশা নিয়ে কাজ করেছে।
১৪ তলাবিশিষ্ট এই ভবনে আছে দুটি বেজমেন্টসহ মিলনায়তন, সভাকক্ষ, সার্ভার, ডাক জাদুঘর, গ্রন্থাগার। আছে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও।
২০১৬ সালের শেষ দিকে প্রায় পৌনে ১ একর জমির ওপর কাজ শুরু হয় ডাক ভবনের। প্রথমে ৮ তলা নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও পরবর্তী সময়ে তা দাঁড়ায় ১৪ তলায়। বাজেটও বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৯২ কোটি টাকায়। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ অর্থ।
বাংলাদেশ ডাক বিভাগ প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। শেরেবাংলা নগরের এই নতুন ভবন ডাক বিভাগের কর্মীসহ সবাইকে উজ্জীবিত করবে বলে মনে করছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বললেন, এর স্থাপত্যশৈলী এমন, যা ডাক বিভাগকে সহজেই তুলে ধরতে পারছে। আইকনিক এই ভবন ডাক বিভাগের ডিজিটাল যাত্রাকে গতিশীল করে তুলবে।
ডাক ভবন থেকে বের হয়ে আসতে আসতে ভাবছি কোনো একদিন আমিও উড়োজাহাজে করে মেঘের ওপর থেকে দেখব বিশাল এই লেটারবক্স। সেই সঙ্গে হয়তো নিজের অজান্তেই কারও উদ্দেশে বলব মহাদেব সাহার মতো, ‘...করুণা করেও হলে চিঠি দিও, ভুলে গিয়ে ভুল করে একখানি চিঠি দিও খামে’।