টুপি, রিস্টব্যান্ড আর কালো পোশাক - সব মিলিয়ে আমি

আইয়ুব বাচ্চু (১৯৬২—২০১৮)
আইয়ুব বাচ্চু (১৯৬২—২০১৮)
শুরু থেকেই ছুটির দিনের সঙ্গে ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। কখনো নিজে লিখেছেন, কখনো তাঁকে নিয়েই প্রকাশ হয়েছে বিশেষ রচনা। তেমনি দুটি লেখা এখানে পুনঃপ্রকাশ করা হলো। ২০০০ সালের ১৫ জানুয়ারি নিজেই লিখেছিলেন তাঁর জীবনযাপনের কথা। পরের বছর ২০০১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর একটি চিঠি।এ দুটি লেখা এখানে ্পআবার প্রকাশিত হলো।  টুপি, রিস্টব্যান্ড আর কালো পোশাক—সব মিলিয়ে আমি

গান ছাড়াও আমাকে চেনার একমাত্র উপায় হচ্ছে আমার পোশাক। আর পোশাকের যে জিনিসটা প্রথমে সবার চোখে পড়ে, তা হচ্ছে হ্যাট বা টুপি। আমার সংগ্রহে প্রচুর হ্যাট আছে। কনসার্টে সাধারণত আমি ক্যাঙ্গল বা ফেইবিলিসের হ্যাট ব্যবহার করি। আর সাধারণভাবে সব সময় ফিশির হ্যাট পরি। তবে আমার সংগ্রহে কাউয়ে হ্যাটও আছে, যদিও আমি কখনো তা পরি না। আগে কানে দুল পরতাম। তবে এখন আর পরি না। দুলটা এখন আর আমার কাছে ততটা আরামপ্রদ মনে হয় না। তবে আমার গলায় পরার জন্য অনেক নেকলেস বা চেন আছে। যেহেতু ছেলেদের জন্য গলায় সোনা পরা উচিত নয়। তাই আমার সব চেনই অক্সিডাইজড মেটালের তৈরি। আর গলায় চেন পরার মূল কারণ, ভালো লাগে। এসবের সঙ্গে আমি সব সময় পরি টি-শার্ট। এই জিনিসটা বছরের ১২ মাস আমার গায়ে থাকে। টি-শার্টের বেলায় আগে বিভিন্ন ব্র্যান্ড বাছতাম। এখন আমাদের এখানে এক্সটেসি, টিমল প্রভৃতি দোকান হয়ে যাওয়ায় সেখান থেকেই টি-শার্ট কিনি। ভি গলা এবং গোল গলা উভয় ধরনের টি-শার্টই আমার পছন্দ। তবে তা অবশ্যই শরীরের সঙ্গে ফিট থাকতে হবে। তবে শীতকাল হলে টি-শার্টের ওপর ছাপিয়ে দিই মোটা ধরনের কোনো জ্যাকেট।

চিরচেনা আইয়ুব বাচ্চু

ব্যান্ড, ঘড়ি আর আংটি
অনেকে যেমন সে ভাগ্যের প্রতীক ভেবে বাঁ হাতে ঘড়ি না পরে ডান হাতে পরে। আমারও তেমনি সে ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ডান হাতে বেশ কটি রিস্টব্যান্ড আছে। এগুলো পরলে আমি কাজে একধরনের উদ্যমতা অনুভব করি। আর আমার ডান পাশ থেকে বাঁ পাশটা সব সময় ভারী মনে হয়। তাই রিস্টব্যান্ডগুলো পরলে মনে হয় দুই পাশেই ব্যালেন্স হলো। এগুলোর পাশাপাশি আমি ডান হাতে ঘড়িও পরি। ঘড়ির মধ্যে আমার পছন্দসই কোম্পানি হচ্ছে লোগেন ও টাইসার্ট। ঘড়ি এবং রিস্টব্যান্ড ছাড়াও আমার দুই হাতের আঙুলে আছে পাঁচটি আংটি। এর মধ্যে তিনটি আংটি আমার খালা বলেছেন বলে পরছি। বাকি দুটির মধ্যে একটি আমার এনগেজমেন্টের আংটি, অন্যটি আমার শাশুড়ি আমাকে দিয়েছেন। সব ধরনের জিনসই আমার ভালো লাগে। জিনসের প্যান্টের সঙ্গে ব্যবহার করি মোটা চামড়ার বেল্ট। জুতার ব্যাপারে মোটাসোটা যেকোনো বুটজুতাই আমার পছন্দ। কনসার্টে আমি সাধারণত কালো রঙের পোশাককে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। এর একটি কারণ, ১০ বছর বয়স থেকে আমি কালো রঙের পোশাক পরছি এবং আমি নিজে কালো, তাই।

গিটার আমার শরীরের অংশ
পোশাকের পাশাপাশি যে জিনিসটা আমার জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তা হচ্ছে গিটার। এটাকে এখন আমার কাছে আলাদা কিছু মনে হয় না, মনে হয় আমার শরীরের একটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। আমার সংগ্রহে বেশ কিছু গিটার আছে। এর মধ্যে দুটি ফেন্ডার স্টাটোকাস্টার।একটা জন পেট্রোসিয়াম সিরিজের আইভানেজ, ভ্যানহেলেন মডেলের মিউজিকম্যান। জো স্যাটারানি মডেলের আইভানেজ। এসব ইলেকট্রিক গিটার ছাড়াও আমার দুটি অ্যাকুস্টিক গিটার আছে। এর মধ্যে একটা ইয়ামাহা আছে পিকআপ এবং ইকুয়ালাইজারসহ। আর ভারতীয় হোফনার। আমি আমার মিউজিক-জীবনের প্রথমে বাজাতাম একটা জাপানি ট্রিসকো গিটার। এরপর বাজালাম রোল্যান্ড। তার পরপর আবার ট্রিসকো। এরপর হেন্ড্রো ও গার্কে। আমার সে ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে একটা সাদা রঙের ফেন্ডার গিটার আছে। সেটা আমার কাছে এখনো আছে। এই গিটার দিয়েই শুরু হয়েছিল এলআরবির অগ্রযাত্রা। এরপর ফেন্ডার ব্ল্যাক, ওয়াশবর্ন। গিটারের সঙ্গে আমি আগে বিভিন্ন ধরনের ডিস্ট্রাকমন ব্যবহার করতাম। যেমন মেটাল জোন, ডিলে প্রভৃতি। এখন ব্যবহার করি ডিজিটেকের প্রসেসর আরপি-সিক্স। যদিও মাঝখানে কর্গের এ ফাইভ ব্যবহার করেছি। আমার গিটার অ্যাম্পের মধ্যে আছে জেট ভবন সেডি ও কারভিন। তবে আমার স্বপ্নের অ্যাম হচ্ছে মার্শাল—যা আমার নেই।

আইয়ুব বাচ্চুর প্রেমপত্র
প্রেয়সী গো,

দীর্ঘ ৫ বছরের প্রেমময় জীবন আমাদের। এই প্রথম তোমাকে লিখতে বসলাম। আর এটা হয়তো শেষ লেখা। কারণটা তো তুমি জানোই। তোমার আমার দেখা তো প্রতিদিনই হয়। তাই লেখার প্রয়োজন পড়ে না। তবে একটি বিশেষ কারণে আজ লিখতে হলো। তুমি তো জানোই, কোনো বিশেষ কারণ ছাড়া আমি দুকলম লিখি না, লিখলে কলম ভেঙে যায়। আসলে এত ব্যস্ততার মাঝেও তোমাকে লিখে উঠতে পারব, তা কখনো ভাবিনি। কিন্তু বিশ্বাস করো, হঠাৎ কীভাবে যেন খাতায় কলমটা জুড়ে দিলাম। অনেকটা নিজের অজান্তেই। আসলে এই চিঠিটাও তোমাকে দিতে চাইনি। ভীষণ বাধ্য হয়েই লিখতে হলো। আমি তো জানি, এই চিঠিটা তোমাকে বিপদে ফেলে দেবে। তুমি না পারবে ছিঁড়তে, না পারবে রাখতে। কারণ রাখলেই তোমার পিতা-মাতার হাতে ধরা খাওয়ার চান্স ১০০%। আর যদি চিঠিসহ ধরা খাও, তবে আমাদের প্রেমের দফারফা হয়ে যাবে। সেই ভয়ে কখনো লিখি না, আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে, গতকাল সন্ধ্যায় তোমার সঙ্গে দেখা করে বাসায় ফিরে দেখি, পকেটে ঘরের চাবিটা নেই। ছিনতাইকারীদের ভয়ে চাবিটা তোমার ভ্যানিটি ব্যাগে রেখেছিলাম। তোমার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় চাবিটা নিতে মনে ছিল না। এ ভুল আমার অনিচ্ছাকৃত। তাই সারা রাত আমাকে ঘরের বাইরেই কাটাতে হয়েছে। এখন তুমি যদি ছুটির দিনে মারফত চাবিটা পাঠিয়ে দাও, তবে খুব উপকৃত হই। হয়তো তুমি ভাবছ ঘরে তালা, কলম, কাগজ পেলাম কোত্থেকে? তবে তোমার সন্দেহ দূর করার জন্য লিখছি, একটি দোকান থেকে বাকিতে জোগাড় করেছি। তুমি কাইন্ডলি টাকাটা শোধ করে দিও। কারণ যে দোকান থেকে বাকি নিয়েছি, সেটা তোমাদের পাড়ার আব্বাস ভাইয়ের দোকান। এখন মাসের শেষ। পকেট আমার ফাঁকা। তাই কিছুটা অগোছালো। পারলে চাবির সঙ্গে ৫০০ টাকা পাঠিয়ে দিও। কথাটা গতকাল বিকেলেই বলতে পারতাম। সামনাসামনি বলতে লজ্জা পেয়েছি। তাই আজ চিঠিতে ধার চাইলাম। তাহলে আগের সাড়ে ৯ হাজার আর এখন ৫০০ মিলে হলো ১০ হাজার। তোমার মাথা ছুঁয়ে কসম কাটছি, চাকরি পাওয়ামাত্রই প্রতি মাসে ১ হাজার করে শোধ করে দেব। কারণ চাঁদ মামা আমাকে কথা দিয়েছে একটি চাকরি দেওয়ার। আশা করি, আমার প্রতি তোমার অগাধ বিশ্বাস আছে। বিশেষ আর কী।

ইতি
তোমারই প্রাণপ্রিয়