জিয়ার কনসেপ্ট-আর্টের দুনিয়া

একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত প্রান্তর। সেখানে কোনোমতে টিকে আছে একটি প্রাসাদের কিছু অংশ। সেই ধ্বংসাবশেষের এক কোণে দাঁড়িয়ে একটি অবিস্ফোরিত পারমাণবিক বোমা। বোমার নিচে এক নভোচারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে। পারমাণবিক বোমার বিরুদ্ধে কথা বলাই নভোচারীর অপরাধ। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থী জিয়াউর রহমানের আঁকা একটি চিত্রকর্মের বিষয়বস্তু এটি। তিনি নিজেকে ‘কনসেপ্ট আর্টিস্ট’ হিসেবে পরিচয় দেন।

ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকির প্রতি জিয়াউর রহমানের ঝোঁক। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পেয়ে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগে। পরিবারের সদস্যের সায় ছিল না। সেখানে তিন মাস পড়ার পর তাঁর মনে হয়েছে, এখানে ধরাবাঁধা নিয়মের মধ্যে শিল্পকলাচর্চা হয়। তাই চারুকলা ছেড়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং নিজ উদ্যোগেই শিল্পকলা চর্চা শুরু করেন।

দূষণের কারণে মরে গেছে সুরমা নদী।

জিয়া রাজশাহীর ছেলে। বুধবার জিয়া প্রথম আলোকে জানালেন, তাঁর জন্ম ১৯৯৫ সালে। তিনি বললেন, ‘আমি বুঝিয়ে কথা লিখতে বা বলতে পারি না। কিন্তু আমি দেখলাম, আমার একটি কনসেপ্ট আর্ট ওয়ার্ক শত শত শব্দের লেখার চেয়েও বেশি কমিউনিকেটিভ।’ তিনি বললেন, ‘আমার চিত্রকর্মের প্রতীকী অর্থ মানুষ যখন নিজের মতো করে খুঁজে নিতে চান, তখন আমার ভালো লাগে।’

‘কনসেপ্ট আর্টিস্ট’ জিয়াউর রহমান। ছবি: আবদুস সালাম

কনসেপ্ট আর্টের বিশেষত্বের বিষয়ে জিয়া বলেন, ‘যা দেখছি, এর হুবহু কপি করে লাভ নেই। কনসেপ্ট আর্ট শিল্পীকে অন্যান্য শিল্পীদের থেকে পৃথক করে। কনসেপ্ট আর্ট মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। আমি মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে চাই—যা আমি কখনো পাইনি।’

জিয়া তাঁর চিত্রকর্মে ভবিষ্যতের গল্প বলেছেন।

জিয়ার ছবিতে প্রাধান্য পায় সমকালীন ইস্যু। তিনি বলেন, শিল্পী হিসেবে তিনি ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁর চিত্রকর্ম ভয়াবহ পরিণতির চিত্র তুলে ধরে। তরুণ এই শিল্পীর দাবি, ভয়াবহ এই চিত্র শেষে দূষণ, ধর্মান্ধতা ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সচেতনতাও সৃষ্টি করে।

তাঁর চিত্রকর্মগুলো যেন ভিন্ন এক পৃথিবী ও সময়ের কথা বলে।