মানুষের জীবন বাঁচাতে জাপানের হাসপাতালগুলোতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। কিন্তু পাইলটের সংকটের কারণে জাপানের হেলিকপ্টার কোম্পানিগুলো আরও বেশি সংখ্যায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারছে না। কোম্পানিগুলো পাইলট নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু এ রকম একটি পেশার জন্যে দক্ষ পাইলট খুঁজে পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে।
এনএইচকে সূত্রে জানা যায়, জাপানের নাগানো প্রিফেকচারের জেনারেল হাসপাতালে নয় বছর আগে প্রথম হেলিকপ্টার অ্যাম্বুলেন্স চালু করা হয়। সেখানে সার্বক্ষণিকভাবে একজন পাইলট উপস্থিত থাকেন। দমকল বিভাগ থেকে খবর পেলেই তিনি আকাশে ওড়েন এবং অকুস্থলে হাজির হন।
বর্তমানে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কেবল দিনের আলোয় ব্যবহার করা হয়। তবে নাগানো প্রিফেকচারের হাসপাতালটি ভোর ও সন্ধ্যায়ও হেলিকপ্টার অ্যাম্বুলেন্সের কার্যক্রম সম্প্রসারিত করতে চায়। সাকু অ্যাডভান্সড কেয়ার সেন্টারের প্রধান কুনিহিকো ওকাদা এনএইচকের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ভোর ও সন্ধ্যায় বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এ জন্য ওই সময়ে আমরা হেলিকপ্টার অ্যাম্বুলেন্সের সুবিধা প্রদান করতে চাচ্ছি। কিন্তু হেলিকপ্টারের পরিচালন ঘণ্টা বৃদ্ধি করাটা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। কারণ, আমাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক পাইলটের অভাব রয়েছে।
এনএইচকে সূত্রে আরও জানা যায়, নাকানিহন এয়ার সার্ভিস হলো এ ধরনের একটি হেলিকপ্টার কোম্পানি, যারা হাসপাতালগুলোতে হেলিকপ্টার-সুবিধা দিয়ে থাকে। সারা দেশের ১৩টি হাসপাতালের জন্যে তাদের ২৮ জন পাইলট ও স্টাফ রয়েছেন। একটি হেলিকপ্টার পর্যায়ক্রমে দুজন পাইলট চালিয়ে থাকেন। এসব পাইলটকে দেশজুড়ে কাজ করতে হয়। এখানকার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘আমাদের স্টাফদের ব্যবস্থাপনার হাল হলো ধাঁধার মতোন। আমরা আমাদের সীমায় পৌঁছে গেছি। গত ১৫ বছরে হেলিকপ্টার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বেড়েছে। কিন্তু পাইলটের সংখ্যা একই পরিমাণ রয়ে গেছে।’
যেকোনো সময় বা স্থানে হঠাৎ করেই জরুরি পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং পাইলটদেরকে যেকোনো অবস্থাতেই কাজ করতে সক্ষম হতে হয়। একজন যোগ্যতাসম্পন্ন হাসপাতাল পাইলট হতে হলে তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলিতে অবশ্যই দুই হাজার উড্ডয়ন ঘণ্টা থাকতে হবে। জাপানে আগে একজন প্রশিক্ষণ পাইলট কৃষি খেতে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে কীটনাশক ছিটিয়ে এই উড্ডয়ন ঘণ্টা অর্জন করতে পারতেন। তবে আধুনিককালে চাষিরা দূরনিয়ন্ত্রিত হেলিকপ্টার বা বিমান ব্যবহার করছেন। ফলে জাপানের তরুণ পাইলটদের অভিজ্ঞতা অর্জন করার সুযোগ অনেক কমে এসেছে।
কোনো কোনো হেলিকপ্টার পরিচালনাকারী সংস্থা অবশ্য নিজেরাই এগিয়ে এসেছে পাইলটের স্বল্পতা দূর করতে। শুধু গত বছরই তারা জনপ্রতি এক লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছে পাইলট প্রশিক্ষণ খাতে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দুই হাজার উড্ডয়ন ঘণ্টা অর্জন করা পাইলটদের জন্যে কঠিন হয়ে উঠেছে।
একটি পাইলট ট্রেনিং সেন্টারের সভাপতি মোতোআকি ইয়ামাদা জানিয়েছেন, ‘পাইলট সরবরাহই হচ্ছে আমাদের ব্যবসা। কিন্তু একজন পাইলটের দুই হাজার উড্ডয়ন ঘণ্টা অর্জন করতে প্রায় ১০ বছর সময় লেগে যায়। কাজেই উড্ডয়ন ঘণ্টার বিষয়টি এ ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা।’
জাপানে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের চাহিদা বাড়ার প্রেক্ষাপটে যোগ্যতাসম্পন্ন পাইলট খুঁজে পেতে হেলিকপ্টার পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। বাংলাদেশি অভিজ্ঞ হেলিকপ্টার পাইলটেরা এই সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন।
কাজী ইনসানুল হক
জেড এম আবুসিনা, জাপান
ছবি ১: জাপানের একটি হেলিকপ্টার অ্যাম্বুলেন্স