চঞ্চল ছোট্ট পায়ে ঘরজুড়ে দৌড়ঝাঁপ। হাসির ফোয়ারায় আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়া ঘরের প্রতিটি কোণে। ঘরে কি বাইরে ওদের রঙিন শৈশব আমাদেরও মাতিয়ে রাখে। আর সমবয়সী আরেকজন জুটলে তো কথাই নেই, হইচই ‘আনলিমিটেড’। দৌড়ঝাঁপ চলে স্কুলেও। ছুটির দিনে ঘুরতে গেলে মজা ষোলো আনা। বিয়েবাড়ি, উৎসব আয়োজনেও ওদের উৎসাহ কম নয়। সঙ্গে আবার নিজেকে ‘স্মার্ট’ দেখানোর ‘টেনশন’! কী না করতে চায় আজকাল শিশুরা। তবে ‘কাল’-এর দোষ দিয়েই–বা হবে কী! বছর কুড়ি-বাইশ আগে প্রতিবেদক নিজেও যে চাইতেন মায়ের জুতার মতো জুতা পরে বেড়াতে যেতে।
বাটা শু কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক—কালেকশন ডেভেলপমেন্ট (স্কুল ও শিশু ক্যাটাগরি) মো. ফারহান ইথার বললেন, শিশুদের জন্য জুতা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমেই আরামের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। জুতার ভেতর বাড়তি ‘কুশন’ থাকলে তা আরামটা নিশ্চিত করবে। কোন সময়ে কেমন জুতা শিশুর জন্য আরামদায়ক হবে, তা জানালেন তিনি।
বেড়াতে গেলে
রঙিন পোশাকের সঙ্গে রঙিন জুতা পরতে ভালোবাসে শিশুরা। বেনটেন বা পাওয়ার পাফ গার্লস যদি উঠে আসে সেই সব জুতায়, তাহলে তো আনন্দ বহুগুণ। ‘ফ্যাশনদুরস্ত’ শিশুদের পছন্দ অনুযায়ী নমনীয় ও টেকসই জুতা বেছে নিন। ভেতরের অংশ ঢুকে গিয়ে শক্ত হয়ে গেলে শিশু কষ্ট পাবে, শিশুর জন্য তা স্বাস্থ্যকরও নয়। আবার বেশি শক্ত জুতা হলে শিশু সহজে পা ভাঁজ করতে পারবে না। এদিকে পিকনিকের আমেজে সারা দিনের জন্য বাইরে ঘুরতে গেলে স্নিকার পরাতে পারেন।
মেয়েরা উঁচু জুতা পরতে চাইলে ওয়েজ হিল কিংবা ব্লক হিল বেছে নিতে পারেন। ওয়েজ হিলের সামনে থেকে পেছনটা ধীরে ধীরে উঁচু হয়ে আসে। ব্লক হিলের পেছনের অংশে চৌকা হিল থাকে, সামনে থাকে সমান, আর মাঝের অংশ ফাঁকা। এগুলোতে শিশুর ভারসাম্য বজায় থাকে। তবে পেনসিল হিল শিশুর জন্য নয়।
খেলার মাঝে, ধুলার মাঝে
জুতার নিচের সোলের ‘গ্রিপ’ ভালো না হলে দৌড়াতে গিয়ে শিশু পিছলে গিয়ে আঘাত পেতে পারে। এ ছাড়া শিশুর খেলার জুতা নির্বাচনের সময় আরামের দিকটাও খেয়াল রাখুন।
সারা দিন স্কুলে
জুতার ভেতরের সোল ও অন্যান্য অংশে ব্যাকটেরিয়ারোধী রাসায়নিক (গাছের নির্যাস থেকে তৈরি) সমৃদ্ধ স্কুলজুতা এনেছে বাটা, যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর নয় বলে স্বীকৃত। স্কুলের পর বাইরে ঘুরতে নিয়ে যেতে চাইলে ‘ট্রেন্ডি’ সাদা স্নিকার পরাতে পারেন। অন্য কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার হলে আনুষ্ঠানিক ‘লুক’ আনার মতো কালো জুতাও বেছে নিতে পারেন।
বাসায় আরামে
শীতের সময় মোজার মতো আঁটসাঁট ও নরম জুতা বেছে নিতে পারেন। এগুলোর নিচের দিকটায় হালকা সোল থাকে। শুধু মোজা পরে হাঁটতে গেলে যেমন টাইলসের মেঝেতে পিছলে যাওয়ার ভয় থাকে, এগুলোর ক্ষেত্রে তেমনটা থাকে না। এ ছাড়া শুধু মেঝের ঠান্ডাটুকু এড়াতে চপ্পলও পরাতে পারেন। শুকনা মেঝেতে চপ্পল পিছলে যায় না, তবে স্নানঘরের মেঝে শুকনা রাখতে হবে। না হলে ভেজা মেঝেতে শিশু পিছলে যেতে পারে।
ভিন্ন বিষয়
কারও পায়ে দুর্গন্ধ কম হয়, কারও আবার পা সামান্য ঘামলেই বেশ দুর্গন্ধ হয়। অনেক সময় পায়ের দুর্গন্ধ একটি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এ রকম হলে ব্যাকটেরিয়ারোধী জুতা পরার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় মেনে চলতে পারেন:
l মোজা ছাড়া জুতা ব্যবহার করা যাবে না।
l প্রতিদিন মোজা পরিবর্তন করতে হবে। ব্যবহৃত মোজা ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। তাই বাড়তি মোজা রাখুন।
l বাড়ি ফিরে যত দ্রুত সম্ভব পা পরিষ্কার করে ফেলুন।
আবার নতুন জুতার গন্ধে অনেকেরই খারাপ লাগে। শিশুর জন্য এমন জুতা বেছে নিতে পারেন, যাতে দুর্গন্ধ তো নেই-ই, বরং চকলেটের মতো সুঘ্রাণ ছড়ায়।