ভালোবাসার গল্প আহ্বান করেছিল ‘ছুটির দিনে’। বিপুল সাড়া দিয়েছেন পাঠকেরা। কেউ লিখেছেন দুরন্ত প্রেমের গল্প, কেউবা শুনিয়েছেন দূর থেকে ভালোবেসে যাওয়ার অনুভূতি। এখানে রইল বাছাই একটি গল্প।
ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছিলাম। স্যুটকেসে ছোট ছোট উপহার তো নয়, প্যাকেট করা কিছু স্বপ্ন। সবার উপহারের সঙ্গে ছোট বোনের লাল ফ্রক আর তার বায়নার জেলখানার কয়েদিদের বানানো লাল গামছা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে উঠে বিআরটিসি বাসের জানালার দিকের সিটে বসেছি। এদিকে বাসের তেমন জ্যাম নেই, তাই বেশ নিশ্চিন্ত একটা যাত্রা আশা করছিলাম। কিন্তু হায়, মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক। মাঝপথে রংপুরের কাছাকাছি যেতেই বিকট শব্দ করে গাড়িটা থেমে গেল।
আমার পাশের সিটে বসা ছেলেটা বারবার ঘড়ি দেখছিল। বোঝা যাচ্ছিল তার খুব তাড়া।
প্রায় ৪০ মিনিট পার হয়ে গেল। বাস ছাড়ার নাম নেই। পাসে বসা ছেলেটা তড়িঘড়ি স্যুটকেস নিয়ে নেমে গেল। নামার সময় তার হাতে স্যুটকেস দেখে চমকে উঠলাম। একদম আমার স্যুটকেসের মতো। তাড়াতাড়ি ওপরে তাকালাম, দেখলাম আমার স্যুটকেসটা ঠিক আছে।
আরও ঘণ্টাখানেক পর গাড়ি ছাড়ল।
বাড়ির কাছে এসে নামলাম। দূর থেকে আমাদের গ্রামটাকে মনে হয় একটা বনের মতো, শুধু গাছ আর গাছ, কোনো ঘরবাড়ি দেখা যায় না। গ্রামের এক পাশে দুধকুমার নদ। আমার জন্য এত শান্তি আর কোথাও অপেক্ষা করে না।
বাড়ি পৌঁছাতেই ছোট বোন এসে জড়িয়ে ধরল। তার বায়নার জিনিস বের করতে গিয়ে বুঝলাম, এটা আমার স্যুটকেস নয়।
আর তখনই ফোনটা বেজে উঠল। অপর প্রান্ত থেকে বলে উঠলেন, ‘ধন্যবাদ, ফোন নম্বরটা বুদ্ধি করে স্যুটকেসে লিখে রেখেছেন!’ সেই সঙ্গে দুঃখ প্রকাশ করলেন আমাকে অনিচ্ছাকৃত ঝামেলায় ফেলার জন্য। জানালেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজ আছে, তাই তিনি আজই আসতে চান। আমিও বাড়ির ঠিকানা দিয়ে দিলাম।
এরপর তিনি এলেন, দেখলেন, জয় করলেন! এখন আমাদের ঘরে অনেক জিনিসপত্রের সঙ্গে কুচকুচে কালো স্যুটকেস দুটোও যত্নে রাখা।