যত্ন

চুল মজবুত রাখতে

চুল মজবুত ও ঝরঝরে রাখতে নিয়মিত চুলের যত্ন নিতে হবে। ছবি: অধুনা
চুল মজবুত ও ঝরঝরে রাখতে নিয়মিত চুলের যত্ন নিতে হবে। ছবি: অধুনা

মাথার চুল পড়া একটি সাধারণ সমস্যা। নারী-পুরুষ উভয়েরই চুল পড়ে। তবে মাত্রাতিরিক্ত চুল পড়লে এবং বিষয়টি টাকের পর্যায়ে চলে গেলে চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। এ নিয়ে চিন্তার অন্ত নেই। প্রথমেই জানা প্রয়োজন ৫০ থেকে ১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার অংশ। তাই বলে চুল আঁচড়ানোর সময় চিরুনিতে চুল দেখেই আঁতকে ওঠার কিছু নেই। চুল প্রতি মাসে আধা ইঞ্চি করে বড় হয়। স্বাভাবিকভাবে একটি চুল দুই থেকে চার বছর পর্যন্ত বড় হতে থাকে। এরপর বৃদ্ধি কমে যায়।

চুল কীভাবে মজবুত ও চুল পড়া প্রতিরোধ করা যায়, এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চর্ম ও যৌন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদা খাতুন বলেন, সাধারণত সবার ক্ষেত্রেই খুশকি বড় সমস্যা। বিশেষ করে এই সময়ে যখন কিনা সহজেই ভেজা চুল শুকাতে চায় না এবং এই স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ছত্রাকের বিস্তার বেশি ঘটে। ছেলেদের ক্ষেত্রে বংশগত কারণ, অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন, দুশ্চিন্তা আবার মেয়েদের ক্ষেত্রে অপুষ্টি, গর্ভধারণ-শিশুকে দুধ দান, অতিরিক্ত ডায়েট, চুলে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করার জন্য চুল পড়ে থাকে। থাইরয়েডের সমস্যা, রক্তশূন্যতা, দীর্ঘ সময় ধরে জ্বরে ভোগা এবং বংশগত সমস্যার কারণেও চুল পড়তে পারে। তবে একটু সচেতন হলেই চুল পড়া রোধ করা যায়, মজবুত রাখা যায়। পর্যাপ্ত ঘুম আর প্রচুর শাকসবজি খাওয়ার পাশাপাশি একটু নিয়ম মানতে হবে।

কিছু উপায়
অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন নারীর চুল পড়া ও পুরুষের টাকের সবচেয়ে বড় কারণ। এই হরমোন সাধারণত পুরুষের শরীরে বেশি পরিমাণে থাকে। যাঁদের শরীরে এই হরমোনের প্রভাব বেশি, তাঁদেরই বেশি করে চুল পড়ে। নারীর মেনোপজের সময় ও পরে অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন আনুপাতিক হারে বেড়ে যায়। তখন হঠাৎ চুল বেশি করে পড়তে শুরু করে। এ ক্ষেত্রে খুব বেশি করণীয় থাকে না। তবে সমস্যা বেশি মনে করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

ছত্রাক সংক্রমণ বা খুশকি হলো চুল পড়ার অন্যতম কারণ। তাই চুল ভেজা রাখা যাবে না। প্রয়োজনে সে ক্ষেত্রে ছত্রাকরোধী শ্যাম্পু চুলে ব্যবহার করতে হবে। ছত্রাকরোধী শ্যাম্পু ব্যবহারকালীন অন্য শ্যাম্পু ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন নেই। শ্যাম্পু সপ্তাহে কত দিন ব্যবহার করতে হবে, তা নির্ভর করে খুশকির তীব্রতার ওপর। ওষুধও খেতে হতে পারে। সংক্রমণ ভালো হয়ে গেলে চুল আবার গজায়।

শরীরের পুষ্টির ওপর চুলের স্বাস্থ্য নির্ভর করে। দৈনিক খাদ্যতালিকায় প্রোটিন, শর্করা, চর্বি, খনিজ ও ভিটামিন পরিমিত পরিমাণে না থাকলে চুল পড়ে যায়। এ ছাড়া শরীরে দীর্ঘদিন কোনো একটি উপাদানের অভাবে চুল পড়ে যায়। আবার যাঁরা না খেয়ে অতিরিক্ত ডায়েট করেন, তাঁদেরও পুষ্টিহীনতা হয়ে চুল অতিরিক্ত পড়তে পারে। চুল মজবুত রাখতে প্রত্যেকের উচিত নিয়মিত সুষম খাবার খাওয়া।

দুশ্চিন্তায় ভুগলে বা মানসিক সমস্যা থাকলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চুল পড়তে পারে। তবে এই চুল পড়া সাময়িক এবং পুনরায় চুল গজায়। দীর্ঘদিন মানসিক দুশ্চিন্তায় থাকলে বা দুশ্চিন্তা কাটিয়ে উঠতে না পারলে অনেক বেশি চুল পড়ে যেতে পারে। তাই চিন্তা ও চাপমুক্ত থাকতে হবে।

চুলের বিশেষ কোনো স্টাইলের জন্য যদি দীর্ঘদিন খুব টেনে চুল বাঁধা হয় বা টাইট করে খোঁপা বা ব্যান্ড করা হয়, তবে এ ধরনের চুল পড়া শুরু হতে পারে। খুব বেশি পরিমাণে চুল রঙিন করার প্রসাধনী, চুল সোজা করা বা ক্রমাগত রিবন্ডিং করলে চুল পড়ার হার বেড়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে আবার চুল ওঠে, কিংবা অনেক সময় হেয়ার ফলিকলের স্থায়ী ক্ষতি হয়ে গেলে চুল আবার না-ও গজাতে পারে।

মজবুত রাখতে চুলকে পরিষ্কার রাখতে হবে, নিয়মিত পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে, দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করতে হবে।

চুলের পরিচর্যায় নিয়মিত তেল ব্যবহার করতে পারেন। এরপর সপ্তাহে অন্তত তিন দিন চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুতে হবে।

যেকোনো ওষুধ গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখক: চিকিৎসক