তোমার চুল এমন কোঁকড়ানো কেন? এটা কেমন রং আবার চুলের? চুল, নাকি কাকের বাসা? এত বড় চুল, তেল দাও না কেন? ছেলেদের মতো চুল কেন তোমার? সবই তোমার স্টাইল নাকি?
এমন নানা প্রশ্নই একজন নারীকে প্রতিনিয়তই শুনতে হয়। অনেকের চোখে নারীর চুলই যেন তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়। সেই চুলও যেন হতে হবে সমাজের পছন্দমতো। কিন্তু একজন মানুষের চুল তো তার নিজস্ব ব্যাপার। চুল দিয়েই কি তার পরিচয় যাচাই করা যায়? নারীর পরিচয় হওয়া উচিত তার মেধায়, কাজে, সাফল্যে, মানুষ হিসেবে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে জুঁই নারকেল তেল একটি ভিডিও আপলোড করেছে। নারীর চুলের স্টাইলের ওপর নিজের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেছেন পাঁচটি ভিন্ন মাধ্যমে কাজ করা বিভিন্ন বয়সের পাঁচজন নারী। প্রত্যেকেই কথা বলেছেন চুল নিয়ে প্রতিনিয়ত কী ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, তা নিয়ে।
প্রথমেই কথা বলেছেন মুশফিকা আক্তার, যিনি পেশায় একজন জিম ইনস্ট্রাক্টর। তাঁর দিঘল কালো চুলে কয় বোতল তেল প্রয়োজন হয় তা বলে লোকেরা তাঁকে বিদ্রূপ করেছে।
ফাহরিন জান্নাত ফাইজা নামের একজন ইউটিউবার ও ফুড ব্লগার জানালেন, তিনি হিজাব পরেন বলে অনেকে তাঁকে রক্ষণশীল মনে করে। তিনি জানালেন, তাঁর চুল বেশ সুন্দর।
ফটোগ্রাফার ও বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করা সানজিদা জুঁই জানালেন, তিনি ঘুরতে ভালোবাসেন। রঙিন চুল বলে তাঁর আত্মীয়রা তাঁকে পাগল বলে। আর বন্ধুরা বলে জোকার। রাস্তায় একবার এক দম্পতি তাঁকে আফ্রিকান বলেও ঠাট্টা-মশকরা করে। তিনি বলেন, ‘শুধু আমি না, আমার মাকেও জিজ্ঞেস করা হয়, আমার চুলের রং এমন কেন?’
কমিউনিকেশন এক্সপার্ট তৌহিদা হক উমি বলছিলেন, তাঁর চুল একটু ছোট বলে বন্ধুরা তাঁকে বলে কবে তিনি একটু মেয়ে হবেন। এর পাল্টা তাঁর বক্তব্য, ‘আমার একটি মেয়ে রয়েছে। আমি আর কী মেয়ে হব।’
কাকের বাসা, নুডলস, অহংকারী, বেয়াদব ইত্যাদি কথা চুল নিয়ে শুনতে হয় বলে জানালেন শরীফ ফারজানা ফাইজা বুশরা। তিনি বলেন, তিনি একজন সফল মানবসম্পদ নির্বাহী। কিন্তু চুলই যেন তাঁর বড় পরিচয়। তাঁর চুল একটু কোঁকড়া। এ জন্য ক্লাসে, পরিবারে, বন্ধুরা, এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনবক্সেও তাঁকে এ নিয়ে প্রশ্ন শুনতে হয়েছে, হচ্ছে। তিনি জানালেন, যে যা-ই বলুক না কেন, তিনি তাঁর চুলকে ভালোবাসেন।
চুলের বিষয়টি যার যার নিজস্ব স্বাধীনতা, নিজস্ব স্টাইল। চুল নিয়ে প্রশ্ন করবে কেন কেউ? একজন নারীর চুল শুধু তাঁর সৌন্দর্য ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সনদপত্র হতে পারে না। বুশরা, উর্মি, জুঁই—সবাই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানালেন, নিজের ভালো লাগার ব্যাপারে তাঁরা একচুলও ছাড় দেবেন না। নারী দিবসে জুঁই মনে করে, নারীরা তাঁদের যোগ্যতায় এগিয়ে যাক, গড়ে উঠুক সমতার বিশ্ব।