চিভনিং বৃত্তির জন্য যেভাবে মনোনীত হলাম

সহপাঠীদের সঙ্গে লেখক
সহপাঠীদের সঙ্গে লেখক

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরই চিভনিং স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাজ্যে পড়তে যাচ্ছেন অভিজ্ঞ গবেষক, পেশাজীবী ও শিক্ষার্থীরা। যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন এই বৃত্তির অর্থায়ন করে। ভবিষ্যতের নেতৃত্ব দেবেন, বিভিন্ন দেশের এমন মেধাবী শিক্ষার্থীরা চিভনিংয়ের জন্য নির্বাচিত হন। বৃত্তির আওতায় এক বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর করার সুযোগ থাকে। আমি ২০১৯ সালে চিভনিং বৃত্তির মাধ্যমে মেডিকেল প্যারাসাইটোলজি বিষয়ে লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনে পড়েছি। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধিভুক্ত এই স্কুল লন্ডনের ব্লুমসবারিতে অবস্থিত।

আবেদনের প্রক্রিয়া

চিভনিং স্কলারশিপের জন্য প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। শুরুতে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের নানা দিক, যুক্তরাজ্যে পড়ার কারণ ও ভবিষ্যতের লক্ষ্য নিয়ে লিখতে হয়। এটি মূলত নিজের অভিজ্ঞতা ও ধ্যানধারণা তুলে ধরার একটি সুযোগ। আবেদনের সময় পছন্দ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ও বিষয় লিখতে হয়। পরবর্তী ধাপে শিক্ষা ও কাজসংশ্লিষ্ট ‘রেফারেন্স’ যাচাই করা হয়। আমি আবেদন করেছিলাম করোনাকালের আগে। তাই আমাদের সাক্ষাৎকার পর্ব ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যাঁরা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করার কথা ভাবছেন, চোখ রাখতে পারেন এই ওয়েবসাইটে

আমার অভিজ্ঞতা

আমি মনে করি, স্কুল-কলেজ ও পরবর্তী সময়ে মেডিকেল কলেজের সহশিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতা এই বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে আমার খুব কাজে এসেছে। এ ছাড়া নানা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা ও কাজের অভিজ্ঞতা আমাকে এগিয়ে রেখেছিল।

চিভনিং বৃত্তিপ্রাপ্ত গবেষক শমিক মারুফ

ঢাকার সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও নটর ডেম কলেজ থেকে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পেরিয়েছি। স্কুলে আমি বিজ্ঞান ক্লাব ও কালচারাল ফোরামের সদস্য ছিলাম। পড়ালেখার পাশাপাশি সব ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে চেষ্টা করতাম। কলেজে কুইজে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রেও বেশ সক্রিয় ছিলাম। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করি ২০১৪ সালে। মেডিকেল কলেজে পড়ার সময়ও আমি নানা সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলাম। কলেজের বিতর্ক ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের একজন আমি। পরে সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছি। কীভাবে নেতৃত্ব দিতে হয়, কীভাবে দলগতভাবে কাজ করতে হয়, সমস্যা সমাধান করতে হয়, এই সব দক্ষতা সেই সুবাদেই চর্চা করার সুযোগ পেয়েছি। একটি ব্যান্ডের সদস্য ছিলাম। যেকোনো উৎসবে, আয়োজনে আমার অংশগ্রহণ থাকতই। এখনো গানের চর্চা ধরে রেখেছি। এই সব অভিজ্ঞতার কথা আমি আবেদনের বিভিন্ন ধাপে উল্লেখ করেছি।

পড়াশোনা শেষে আমি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করি। জনস্বাস্থ্য নিয়ে নানা ধরনের গবেষণায় যুক্ত হই। কালাজ্বর, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গুসহ নানা রোগ নিয়ে গবেষণায় অংশ নিয়েছি। এরই মধ্যে আমি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর করি। জ্যেষ্ঠ গবেষকদের তত্ত্বাবধানে গবেষণার নানা বিষয়ে জানার সুযোগ পেয়েছি এই স্নাতকোত্তর পর্যায়ে। স্পেন ও বেলজিয়ামে একাধিক সম্মেলনে আমার গবেষণা নিবন্ধ উপস্থাপনের সুযোগ পেয়েছি। চিভনিং বৃত্তির আবেদনের সময় এই সব অভিজ্ঞতা, দক্ষতা আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেছি।

যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে:

  • পড়ালেখার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের অভিজ্ঞতা চিভনিং বৃত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ।

  • আপনার আগ্রহ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। সেই অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় নির্বাচন করতে হবে।

  • ভাষাগত দক্ষতা, কারিগরি দক্ষতা আপনাকে এগিয়ে রাখবে।

  • কাজের মাধ্যমে নেটওয়ার্কিং করার কৌশল জানতে হবে।