আমরা জানি, সুস্থতার জন্য ঘুম কত জরুরি। ঠিকঠাক ঘুমানোর জন্য অনেকগুলো বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়।
কোনটা আদর্শ শয়নভঙ্গি
ইলিনয়ের নর্থ ওয়েস্টার্ন মেডিসিন স্লিপ সার্ভিসেসের তথ্যমতে, চিত, উপুড় নাকি পাশ—শয়নভঙ্গির ওপরও নির্ভর করে আপনার ঘুম কতটা গভীর হবে। এখন প্রশ্ন হলো শ্রেষ্ঠ শয়নভঙ্গি কোনটি? দুর্ভাগ্যবশত এ প্রশ্নের আদর্শ উত্তর নেই। কারণ, সবাই একইভাবে ঘুমায় না। একেকজনের একেক রকম শয়নভঙ্গি। আমেরিকার মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির স্লিপ ল্যাবের পরিচালক জেনিফার এমডি বলেন, ‘ব্যক্তির জীবনের পর্যায়ভেদে আর অসুস্থতার ওপর নির্ভর করে তাঁর আদর্শ শয়নভঙ্গি।’
তাহলে কখন পাশ ফিরে শোয়া ভালো? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই ধরনের লোক পাশ ফিরে শুয়ে আরাম পাবেন। যাঁদের আছে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (যে কারণে ভারতীয় সংগীতশিল্পী বাপ্পি লাহিড়ীর মৃত্যু হলো বলে মনে করা হয়), তাঁদের পাশ ফিরে শোয়া ভালো। তাতে এ ধরনের মানুষের শ্বাসপথ খোলা থাকে। চিত হয়ে ঘুমালে জিবের ওপর অভিকর্ষ টান পড়ে, এতে শ্বাসপথ রোধ হয়ে যায়। তাই পাশ ফিরে ঘুমালে শ্বাসপথ অবরুদ্ধ থাকলেও আংশিক খুলে যায়।
আর যাঁরা অবিরাম নাক ডাকেন, তবে স্লিপ অ্যাপনিয়া নেই, তাঁরাও এভাবে ঘুমিয়ে আরাম পাবেন। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের কাত হয়ে শোয়া ভালো। এতে রক্ত চলাচল ভালো হয়। চিত হয়ে ঘুমালে পেটের ভেতরের শিরায় চাপ পড়ে আর রক্তের প্রবাহ বাধা পায়। তাই এ সময়ে নারীদের চিত হয়ে ঘুমানো ভালো নয়।
ঘুমালে শ্বাসপ্রশ্বাসে যাঁদের সমস্যা হয়, তাঁদের বেছে নিতে হবে পুরু বালিশ, যাতে পাশ ফিরে ঘুমালে মাথা নিচে নেমে না আসে।
কখন চিত হয়ে ঘুমাবেন
ঘুমের বিশেষ সমস্যা না থাকলে আর গর্ভবতী না হলে চিত হয়ে ঘুমাতে আপত্তি নেই। বরং যাঁদের ব্যাকপেইন বা শিরদাঁড়ার সমস্যা আছে, তাঁরা চিত হয়ে শুলেই ভালো। এতে তাঁরা আরাম পাবেন। কারণ, এভাবে ঘুমালে শিরদাঁড়া যথাস্থানে থাকে। তবে ব্যতিক্রমও আছে। লোয়ার ব্যাকপেইন থাকলে চিত হয়ে শুলে ব্যথা বেড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে হাঁটুর নিচে বালিশ দিলে পা নিচ দিকে টানবে না। যাঁদের অ্যাসিড রেফ্লাক্স হয় অর্থাৎ অম্লরস পাকস্থলী থেকে ওপরে উঠে আসে, তাঁদের জন্য চিত হয়ে শোয়াই ভালো। আর যাঁদের সাইনাস সমস্যা আছে, তাঁদের শিয়র উঁচু করে শোয়াই ভালো।
কখন উপুড় হয়ে শোবেন
যাঁদের শ্বাসের সমস্যা, নাকডাকার সমস্যা আছে, তাঁদের উপুড় হয়ে শোয়াই ভালো। করোনা অতিমারিতে যাঁদের শ্বাসের সমস্যা দেখা দিয়েছে, অক্সিজেন কমে যাওয়া ঠেকাতে তাঁদের এমন উপুড় হয়ে শোয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে গলার অবস্থান শ্বাস চলাচলের অনুকূল হলে ভালো। যাঁদের মাথা ধরা বা ঘাড়ব্যথার প্রবণতা আছে, তাঁদের জন্য এ ভঙ্গি ভালো নয়। অনেকে উপুড় হয়ে শুতে পছন্দ করেন, তাঁরা নরম পাতলা বালিশে শোবেন।