তৈজস

চায়ের পটে...

এমন নান্দনিক টি-পটে চা পরিবেশন করলে অতিথির ভালো লাগবেই। ছবি: নকশা
এমন নান্দনিক টি-পটে চা পরিবেশন করলে অতিথির ভালো লাগবেই। ছবি: নকশা

বাঙালির আপ্যায়নে চা আবশ্যক। চা পরিবেশন যদি সুন্দর হয়, পানে তৃপ্তি পাওয়া যায় শতভাগ। কারণ, পরিবেশনও একটি শিল্প। দৃষ্টিনন্দন পাত্রে চা পরিবেশনের জন্য টি-পটের রকমফের জানাতেই এ প্রতিবেদন।
আপ্যায়নের আয়োজনে চা-দানি বা টি-পট তো থাকেই। কোনোটির সঙ্গে থাকে ওয়ার্মার। আলাদা ওয়ার্মার কিনেও নেওয়া যায়। টি-পটের নকশার সঙ্গে মিল রেখে চিনি আর দুধের জন্য আলাদা পাত্রও (সুগার পট ও মিল্ক পট) থাকে কখনো। একই নকশায় তৈরি চায়ের কাপ রাখতেও পছন্দ করেন অনেকে। একই ডিজাইনের এসব সামগ্রী ‘সেট’ হিসেবেই বিক্রি হয় অনেক দোকানে। কিছু সেটের সঙ্গে আবার ট্রে-ও রয়েছে।

পাত্রটা যে রকম
বাজার ঘুরে পাওয়া গেল নানা ধাঁচের, নানা নকশার টি-পট। কোনোটির স্বচ্ছ কাচের তৈরি, কোনোটি পাইরেক্সের। সিরামিক, স্টিল, জার্মান সিলভার, পিতল কিংবা তামার তৈরিও আছে। সিরামিকের মধ্যেও আছে রকমফের। কোনোটা পোর্সেলিন, কোনোটা আবার বোন চায়না। স্টিলের মধ্যেও আছে বিভিন্ন ধরন। টি-পটের আকৃতিতেও রয়েছে বৈচিত্র্য। কোনোটি একটু লম্বাটে, কোনোটি আবার চওড়া। কোনোটির শুধু নিচের দিকটা একটু চওড়া। কোনোটা চৌকা, কোনোটা সিলিন্ডার বা চোঙাকৃতির। টি-পটের নলের আকারেও বৈচিত্র্য লক্ষণীয়। ছোট-বড়, চওড়া-চিকন যেমনটা পছন্দ, বেছে নিতে পারেন। কোনোটার হাতল ধাতব পদার্থে তৈরি, কোনোটা আবার কাঠের। চৌকোনা ঢাকনাও দেখা গেল।

নানা নকশার চায়ের পট পাওয়া যাবে বাজারে। ছবি: নকশা

বাহারি টি-পট বাজারে
ফুল, পাতার মনকাড়া নকশা চোখে পড়বে টি-পটে। কোনোটিতে শুধু ওপরের অংশে নকশা, কোনোটিতে শুধু নিচের দিকে। পাবেন লতানো নকশা, কিংবা প্রান্তে স্বর্ণচ্ছটা। প্রান্তের দিকে রুপালি ছটা বা ছাই রঙা। স্বর্ণের বা প্লাটিনামের প্লেটিংও রয়েছে কাজে। লাল, নীল, সাদা, ঘিয়ে, হালকা বাদামি, পেস্ট, ছাই রঙের শেড, কালো- নানা রঙের টি-পট আছে বাজারে। আবার কোনো সাদা টি-পটে একটু নীলাভ ছোঁয়াও আছে। বড় ফুল, ছোট ফুল; গোলাপির নানা শেড, লালচে, খয়েরি বা বেগুনি ফুল ডিজাইনে এনেছে ভিন্নতা। আবার এসব নকশা ছাড়াও একেবারে সাদা সিরামিকের টি-পট পাবেন। কোনোটিতে আছে চেক, কোনোটিতে ডোরাকাটা বা স্ট্রাইপ। আবার একই পাত্রে দুটি ভিন্ন ধাঁচের ডিজাইনের ব্যবহারও লক্ষণীয়।
টি-পটের হাতল, নল আর ঢাকনার ওপরের অংশটা খানিকটা ভিন্ন রঙের, এমনটাও চোখে পড়বে। ফ্যাশন হাউস যাত্রায় পাবেন রিকশাচিত্র আঁকা কেটলি। আড়ংয়ে পাবেন হাতে তৈরি সিরামিকের টি-সেট। তাতে পাবেন টি-পট, সুগার পট, মিল্ক পট আর চারটি কাপ, সঙ্গে পিরিচ। গুলশান ১ নম্বর ডিসিসি মার্কেটে শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেড, দ্য এক্সক্লুসিভ কালেকশন, যায়েদ এন্টারপ্রাইজসহ অন্যান্য দোকানে পাবেন বাহারি টি-পট। নিউমার্কেটের শাপলা ট্রেডার্সের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে ফেসবুকেও। পছন্দসই জিনিসটি বাড়ি পৌঁছে দেন তাঁরা। একই মার্কেটের চাঁদপুর ভ্যারাইটিজ স্টোর দোকানটিও বাড়ি পৌঁছে দেবে আপনার পছন্দের পণ্যটি। এখানকার অন্যান্য দোকানেও পাবেন পছন্দসই টি-পট। এ ছাড়া হোম ওয়ার্কস, ক্ল্যাসিক্যাল হোম টেক্সসহ বিভিন্ন দোকানে পাবেন দারুণ সব টি-পট।

নানা নকশার চায়ের পট পাওয়া যাবে বাজারে। ছবি: নকশা

পুরোনো কিছু?
গুলশান ২ নম্বর ডিসিসি মার্কেটের ‘অ্যান্টিক শপ’গুলোতে আছে বেশ অন্য রকম টি-পট। ডেকোরিয়াম, হাজী মেটাল ক্র্যাফটস, ইসলাম হ্যান্ডিক্র্যাফটস, আলম হ্যান্ডিক্র্যাফটস, হোসাইন হ্যান্ডিক্র্যাফটস, রাজ লেদার অ্যান্ড পার্লসসহ অন্যান্য দোকানে খোঁজ নিতে পারেন। ‘জাহাজভাঙা মালামাল’ হিসেবে পরিচিত জিনিসগুলোর মধ্যে টি-পটের সেটও মিলবে। কোনো টি-পট দেখতে পুরোনো দিনের বড় অ্যালার্ম ঘড়ির মতো; কোনোটি দেখলে আবার মনে হয়, কয়েকটি লম্বাটে সোজা পাতের সমন্বয়ে বুঝি তৈরি হয়েছে। কোনো কোনোটির নিচের দিকটায় আছে পায়া। পায়া, হাতল, নল ও ঢাকনিতে সূক্ষ্ম কারুকাজ। কোনোটার ঢাকনা দেখতে যেন ঘণ্টার মতো। ধাতব টি-পটের মসৃণতল কুঁদে নকশা করা। কোনোটির সেটের সঙ্গে আবার আছে কারুকাজ করা কিংবা কারুকাজবিহীন ট্রে। রাজকীয় টি-পট রাখতে পারেন সংগ্রহে, ব্যবহারও করতে পারেন আপ্যায়নে।

ছবি: নকশা

আধুনিকতায় যা
আধুনিক কিছু টি-পটে চায়ের জন্য আলাদা চেম্বার আছে। টি-পটের মধ্যে ছিদ্রযুক্ত এসব চেম্বার থাকে। তাপ সহন ক্ষমতাসম্পন্ন বিশেষ ধরনের স্বচ্ছ টি-পট পাবেন বাজারে। চুলায় দেওয়ার নির্দিষ্ট সময় পর প্রেশার কুকারের মতো হুইসেল বা শিস দেয়, এমন ধাতব টি-পটও পাবেন বাজারে। বৈদ্যুতিক কেটলিও ব্যবহার করতে পারেন।

ছবি: নকশা

দরদাম
টি-পটের দাম শুরু ২৫০ টাকায়। আকার, উপকরণ ও নকশাভেদে এর দাম হতে পারে ৬০০০ টাকার মধ্যে। তবে যদি তা অ্যান্টিক সামগ্রী হয়, কিংবা অসাধারণ কোনো সিরামিক সামগ্রী। তাহলে দাম হতে পারে ১২০০০ টাকা পর্যন্ত। টি-পট, সুগার পট ও মিল্ক পটের সেট ৫৫০-১৪০০০ টাকা। ট্রেসহ এই সেট যদি অ্যান্টিক সামগ্রী হয়, তাহলে দাম হতে পারে ৪০০০০ টাকা পর্যন্ত। টি-পট, সুগার পট ও মিল্ক পটের সঙ্গে ৪টি কাপ ও পিরিচের সেট পাবেন ১৪০৮ টাকায়। টি-পট আর কাপের সেট ৪৭৫০-৫৫০০ টাকা। একটি কাপ ও একটি টি-পটের সেট ১২৫০ টাকা। ওয়ার্মারসহ টি-পটের দাম ১২২৫-২২০০ টাকা। শুধু ওয়ার্মার পাবেন ৩৫০-৪৯০ টাকায়। কাপসহ ১৫ পিসের টি-সেটের দামেও আছে ভিন্নতা। শাইনপুকুর লোকাল হলে তার দাম ২৫০০-৮৫০০ টাকা; শাইনপুকুরের রয়্যাল ক্ল্যাসিক হলে দাম পড়বে ১৬১০০-৪৬০০০ টাকা।