বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের জন্য কোথাও কোথাও ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে, কোথাও শেষও হয়েছে, আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্রই তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তির কার্যক্রম শেষ হব।
উচ্চশিক্ষায় ভর্তি মানেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকেই একসময় ভর্তি পরীক্ষা দিতে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে দৌড়াতে হতো। শারীরিক মানসিক চ্যালেঞ্জ তো ছিলই, আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হতেন শিক্ষার্থীরা। কয়েক বছর ধরে আলোচনা-সমালোচনার পর সেই অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন কয়েকটি গুচ্ছে ভাগ হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। এবার নতুন তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৩২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তিনটি গুচ্ছে ভুক্ত হয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নেবে। ফলে একটি পরীক্ষা দিয়েই পরীক্ষার ফল ও পছন্দ অনুযায়ী গুচ্ছে থাকা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন একজন শিক্ষার্থী।
তবে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখনো একটি স্বচ্ছ ও বিতর্কমুক্ত ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করতে পারছে না। অতিরিক্ত আর্থিক বোঝার ভারও শিক্ষার্থীদের ঘাড়েই রয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করে এবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি আগের চেয়ে বাড়িয়েছে।
আর সব কটি বিশ্ববিদ্যালয়কে এখনো গুচ্ছভুক্ত করা যায়নি। ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মতো পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদাভাবেই ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। অন্যদিকে পরীক্ষা ছাড়াই আগেভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি করছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিমধ্যে তারা ঘোষণা দিয়েছে ভর্তির কাজ শেষ করে আগামী ৩ জুলাই ক্লাস শুরু করবে। অথচ এ সময়ে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরীক্ষাই শেষ হবে না। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, এখানে ভর্তির পর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী চলে যায়। এতে একদিকে কলেজগুলোতে আসন পূরণ নিয়ে যেমন সমস্যা হয়, তেমনি ভর্তির টাকা ফেরত পেতেও সমস্যায় পড়ে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কয়েক বছর ধরেই এই কাজ করে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা এখনো শিক্ষাবান্ধব বলা যাচ্ছে না।
বর্তমানে সারা দেশে ৫২টি পাবলিক ও ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এ ছাড়া ৩৭টি সরকারি ও ৭২টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ আছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৮৮১টি কলেজে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মাদ্রাসা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি বড় সরকারি কলেজে নানা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। আরও কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এই ব্যবস্থা আছে।
ইউজিসির হিসাবে, সারা দেশে স্নাতক (সম্মান), স্নাতক (পাস) ও সমমানের কোর্সে প্রথম বর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন আছে ১৩ লাখের কিছু বেশি। এবার এইচএসসি ও সমমানে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ১৩ লাখের বেশি।
ইউজিসির চেয়ারম্যানের রুটিন দায়িত্বে থাকা সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বলেন, ‘একবারে তো আর সব সমস্যার সমাধান হবে না। ধীরে ধীরে করতে হবে।’ তিনি মনে করেন ভারতের ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির মতো করে বাংলাদেশেও কিছু করতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সমস্যা থাকত না। এ বিষয়ে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীরের বক্তব্য, ‘ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এই সংস্থা বিশ্ববিদালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগেও কাজ করবে। তবে এ ক্ষেত্রে দক্ষতা ও পেশাদারি জরুরি। না হয় এমন প্রশ্ন পরেও উঠতে পারে।’